June 22, 2025, 9:39 pm

News Headline :
বাগমারায় কৃষিজমিতে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন জমকালো আয়োজনে রাজশাহী শাহমখদুম থানা বিএনপির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত রামেক হাসপাতালের শৌচাগারে পড়ে ছিলো করোনা রোগীর মৃতদেহ রাজশাহী প্রেসক্লাব অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবিতে জেলা প্রশাসকের বরাবর সাংবাদিকদের স্মারকলিপি প্রদান জোরকরে চেয়ারম্যানকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর, সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ওল্ড রাজশাহী ল্যাবরেটরিয়ান্স সোসাইটি’র বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বোয়ালিয়া মডেল থানার, এবার ঘুষ গ্রহণের অডিও ভাইরাল ঈদ শুভেচ্ছা জানালেন রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন সিরাজগঞ্জে ৬ বছরের শিশু’কে ধর্ষণের পর হত্যা
স্মরণকালের রেকর্ড বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে রাজশাহী

স্মরণকালের রেকর্ড বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে রাজশাহী

নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ স্মরণকালের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। একটানা ভারী বর্ষণে এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল।

হাঁটুপানিতে ভাসছে মূল শহর ও মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকে সড়কেই জাল ফেলে ভেসে আসা মাছ শিকার করছেন।

বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুর ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি চলছিল।

গত রাত থেকে কখনও হালকা কখনও মুষলধারে বৃষ্টি চলছেই। এমন বৃষ্টি গত এক যুগেরও বেশি সময় দেখেনি পদ্মাপাড়ের মানুষ।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত) রাজশাহীতে ২৪৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছর তো বটেই, স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। একদিনে এ পরিমাণ বৃষ্টিপাত গত ১২ বছরের রেকর্ডে নেই। এর আগে ২০২১ সালের ২০ জুলাই রাজশাহীতে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। তার আগে ও পরে অক্টোবরের এ বৃষ্টিপাতই সর্বোচ্চ।

আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ অতিবর্ষণ চলছে। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে রাজশাহীসহ দেশের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার. বা তারও বেশি) বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে থেকে এ অতিবর্ষণ কমতে শুরু করবে।

এদিকে স্মরণকালের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে ভাসছে রাজশাহী শহর। বিশেষ করে শহরের নিম্নাঞ্চলে ঘর-বাড়িতে বৃষ্টির পানি ঢুকে গেছে। মূল শহর এবং মধ্যাঞ্চলে হাঁটুপানি জমে গেছে। অবিরাম বর্ষণে চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। নগরীর সড়ক ঘেঁষে থাকা ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাশনের নোংরা পানি আর বৃষ্টি পানিতে একাকার হয়ে গেছে পুরো রাজপথ। পানি নামতে না পারায় নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কেবল আজই নয়, রাজশাহীতে ৩০ মিনিট বৃষ্টি হলেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর ধরে চলছে এ দুর্ভোগ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সৌন্দর্যবর্ধনের মতো অভূতপূর্ব উন্নয়নে গ্রিনসিটি, ক্লিন সিটির তকমা পেলেও বর্ষণমুখর দিনগুলোতে রাজশাহী নগরীর রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতার সেই পুরোনো দৃশ্যই বারবার দৃশ্যমান হয়। কয়েক হাজার কোটির টাকার উন্নয়ন হলেও শহরের বিভিন্ন এলাকায় ‘জলজট’ ও জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি আজও।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এবার বর্ষা ছিল বৃষ্টিহীন। প্রকৃতির পালাবদলে শুভ্র শরতের অভিষেক ঘটেছে তাই বর্ষণেই। ভাদ্র শেষে আশ্বিনের নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের ভেলা ভাসতে দেখা যায়নি। শোনা যাচ্ছে আষাঢ়-শ্রাবণের মতো কালো মেঘের গর্জন।

কদিন পর পরই বৃষ্টি ঝরছে উত্তরের এ নগরে। আর তাই জলজট নিয়েও দুর্ভোগ কাটছে না নগরবাসীর। এতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ও জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটছে। বহুল আকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি রূপ নিয়েছে জনদুর্ভোগে। আশ্বিনের এ টানা বৃষ্টিতেই দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পথঘাট ডুবে যাওয়ায় মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। পানির নিচে থাকা বিভিন্ন সড়কে খানাখন্দকের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও।

বৃহস্পতিবার সকালে নগরী ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতার এ বেহাল চিত্র। বিশেষ করে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, গণকপাড়া, তালাইমারী মোড়, শিরোইল মাস্টারপাড়া, হেতমখাঁ, কাদিরগঞ্জ, বর্ণালী মোড়ের পেছনে, আমবাগান, তেরোখাদিয়া, লক্ষ্মীপুর, রামেক হাসপাতাল চত্বর, ঝাউতলা, ভাটাপাড়া, কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার সামনে, রাজশাহী পর্যটন মোটেল রোড, সপুরা গোরস্থানের মোড় থেকে উপশহর মোড়, গৌরহাঙ্গা রেলগেইট, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মোড়, শালবাগান, মালদাহ কলোনি, কয়েরদ্বারাসহ বেশকিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় এসব এলাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

এছাড়া বৃষ্টির পানিতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়, কোর্ট চত্বরে জমেছে হাঁটুপানি। সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরগুলোতে পানি মাড়িয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই। বৃষ্টি হলেই রাজশাহী শহরের অনেক রাস্তায় পানি জমে যায়। আর পাড়া-মহল্লার ছোট রাস্তায়ও জমে গেছে হাঁটুপানি। তাই বৃষ্টি হলেই সড়কের জলাবদ্ধতা নিয়ে চরম আশঙ্কায় থাকেন নগরবাসী। কারণ সবাইকেই পড়তে হয় চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে। তবে বৃষ্টি থামার ৩/৪ ঘণ্টার মধ্যেই এসব এলাকার সড়কের পানি নেমে যায়।কিন্তু এ বিরামহীন বৃষ্টিতে জনদুর্ভোগ অনেকটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। পানি একদিক দিয়ে নামছে আবার আরেক দিক দিয়ে জমছে। ডুবছে সড়ক। আর কাল-পরশু বৃষ্টি থামলেও এসব নিচু এলাকার পানি নামতে এক থেকে দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কে তাই জলজটের কারণে যানজটও লেগেই থাকবে। আর আজও বৃষ্টি থামার কোনো সম্ভাবনা নেই।রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৮ মিনিটে রাজশাহীতে সূর্যোদয় হয়েছে। তবে মেঘলা আকাশ ও ভারী বর্ষণের কারণে রাজশাহীতে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ২৪৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুম তো বটেই স্মরণকালের মধ্যেও সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর আগে ২০২১ সালের ২০ জুলাই রাজশাহীতে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর একদিনে এ পরিমাণ বৃষ্টি আর হয়নি। আর চলতি মৌসুমের বৃষ্টিপাতের মধ্যে ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর ১ অক্টোবর ১৩ দশমিক ৫, অক্টোবর ০ দশমিক ৬ এবং ৪ অক্টোবর ১১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজশাহীতে।রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের বর্ষণ বলা হয়। ২৩ থেকে ৪২ মিলিমিটার পর্যন্ত মাঝারি ভারী বর্ষণ হিসেবে ধরা হয়। ৪৩ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী বর্ষণ বলা হয়। আর ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে তা অতি ভারী বর্ষণ হিসেবেই বিবেচিত হয়। তাই রাজশাহীতে অতিভারী বর্ষণ চলছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ বর্ষণ চলছে। আকাশে মেঘ রয়েছে বৃষ্টিও চলছে। তাই বৃষ্টির এ পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও জানান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের এ কর্মকর্তা।এছাড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তারও বেশি) বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।

যদিও এ বৃষ্টিকে কৃষির জন্য আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছে কৃষি অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন বলেন, এ বৃষ্টি কৃষি ও কৃষকের জন্য আকাঙ্ক্ষিত ছিল। আশ্বিনা বর্ষণ রাজশাহী অঞ্চলের মাঠে থাকা রোপা-আমন ধানের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। রাজশাহীতে বর্তমানে ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধান রয়েছে। এ সময় বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা কেটেছে। এ বৃষ্টি রোপা-আমনের জন্য সুফল বয়ে আনবে।তিনি বলেন, এছাড়া পানির অভাবে এতদিন যারা পাট জাগ দিতে পারছিলেন না তারা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। বৃষ্টির কারণে খাল-বিল ও ডোবা ভরে যাওয়ায় তারা পর্যাপ্ত পানিতে পাট জাগ দিতে পারবেন। এছাড়া দীর্ঘ দিনের অনাবৃষ্টিতে রাজশাহীর অঞ্চলের পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে গিয়েছিল। এ বৃষ্টিতে পানির লেয়ারও রিচার্জ হবে। যার সুফল কৃষকসহ সব মানুষই ভোগ করতে পারবেন। তবে বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হলে জমিতে থাকা মাসকালাইয়ের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

ads

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.