নিজস্ব প্রতিবেদক: অতি ভারী বৃষ্টিতে রাজশাহীর ৭৫২টি পুকুরের প্রায় ১০০ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। রবিবার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য দিয়েছেন। তবে ভেসে যাওয়া পুকুরের সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন জেলার কয়েকজন মৎস্যচাষী।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভারী বর্ষণের পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা তথ্যমতে, জেলায় মোট ৭৫২টি পুকুর বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। এসব পুকুরের বেশিরভাগই বিল এলাকায়। পুকুরগুলো ভেসে যাওয়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মাছচাষীদের। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫০ পুকুর ভেসে গেছে শুধু গোদাগাড়ী উপজেলায়। এখানে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তবে মাছচাষীদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে মনে করেন তারা। গোদাগাড়ীর কমলাপুর বিলের দু’একটি বাদে সব পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এই বিলের চাষী গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, কমলাপুর বিলে তার ১০০ বিঘা জমিতে পুকুর ছিল। ১৬ বিঘার একটি ছাড়া সব পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। শুধু কমলাপুর বিলেই চাষীদের ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা হবে বলে তার ধারণা।
গত বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টায় রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলে। এই সময়ের মধ্যে ২৪৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে অসংখ্য পুকুর ভেসে যায়। অনেক খেতের শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসলও তলিয়ে যায়। কমলাপুর বিলে যখন চারটি ইউনিয়নের বৃষ্টির পানি এসে নামছিল তখন তীব্র স্রোতে সেখানে এক জেলে হারিয়ে যান। পরদিন রাতে মাছধরা জালেই মকসেদ আলী নামের এই জেলের লাশ আটকে যায়।
বৃষ্টিতে পুকুর ভেসে যাওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার এক মালিকের অপেক্ষাকৃত নিচু জমির পুকুর থেকে মাছ ধরে তিনি উঁচু পুকুরে ছাড়ার কাজ করতে গিয়েছিলেন। ওই সময় পানি বাড়তে থাকলে মোট ২৬ জন বিলের ভেতর আটকা পড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে ২৫ জনকে উদ্ধার করেছিল।
বৃষ্টির পানিতে পুকুর ভেসে যাওয়ার পর রাজশাহীর খাল-বিলগুলোতে মাছ ধরার উৎসব শুরু হয়েছে। শত শত মানুষ নানারকম জাল দিয়ে পুকুরের ভেসে যাওয়া এসব মাছ ধরছেন। রোববারও বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে দল বেঁধে মাছ ধরতে দেখা গেছে। জাল ফেললেই পাওয়া যাচ্ছে বড় বড় সব মাছ।
এদিকে বৃষ্টির পানিতে রাজশাহীর ৩৬৮ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা জানান, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় ১১০ হেক্টর সবজি, ১১৯ হেক্টর মাসকলাই ও ১৩৯ হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি কেমন হবে তা বৃষ্টির পানি নামার পর বলা যাবে।