নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে উত্যাক্ত করার দায়ে প্রধান শিক্ষক সোহরাব আলী (৫৫)কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। রবিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে তাকে পুলিশ হেফাজতে স্কুল থেকে থানায় নেওয়া হয়। এঘটনায় মোহনপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে যান ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিভাবকরা।
তিনি উপজেলার মৌপাড়া গ্রামের মৃত আমজাদ আলী খানের ছেলে ও রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।
এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সকাল ১০ টায় স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক সোহরাব আলী। স্কুলে আসার পর ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্রীদের কাছে ডেকে নেন প্রধান শিক্ষক। এরপর ছাত্রীদের শারীরিক ও মানষিক খোঁজ খবর নেওয়ার ছলে তাদের শরীরের (স্পর্শ কাতর জায়গায়) হাত দেন। এতে ছাত্রীরা শিক্ষকের এমন আচরনে প্রতিবাদ করে এবং বিষয়টি অবিভাবকদের জানায়।
ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা প্রথমে বিদ্যালয় ঘেরাও দিয়ে ওই শিক্ষককে মারধরের চেষ্টা করেন।
এসময় প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবীতে আন্দোলন শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেই আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঐ স্কুল প্রাঙ্গনে হাজারও জনতার ভিড়।
অবস্থা বেগতিক হওয়ায় থানা পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে জনগণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সহকারি কমিশনার (ভুমি) মিথিলা দাস, একাডেমিক সুপারভাইজার আ: মতিন ও ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোওয়ার হেসেন। এসময় উত্তেজিত জনতা প্রধান শিক্ষককে বহিস্কার, বর্তমান কমিটিকে বিলুপ্ত করার জোরালো দাবি জানায় তাঁরা।
সহকারী কমিশনার ভুমি ভুক্তভোগী ছাত্রীদের থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে তার সত্যতা খুঁজে পাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত ও স্কুলের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করার সিদ্ধান্ত জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরন ও কুরুচিপূর্ণ কথা বলায় প্রধান শিক্ষক সোহরাব আলীকে পুলিশ হেফাজতে মোহনপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিভাবকরা মামলা দায়ের করতে থানায় গেছেন বলেও জানা গেছে।
সঠিক ঘটনা জানতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, প্রধান শিক্ষক ক্লাশ নেওয়া তো দুরের কথা তিনি প্রায় দেড় বছর যাবত স্কুলে আসেন না। মাঝে মাঝে এসে ছাত্রীদের ডেকে উলোট পালট কথা বলে হাজিরা খাতায় সহি করে চলে যান। এই শিক্ষক এর আগেও বহুবার ছাত্রীদের সাথে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে যার তথ্য চিত্রও নাকি কারো কারো কাছে রয়েছে। এর আগের বিষয়গুলো নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। আজকে কিছু ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করায় তারা প্রতিবাদ করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান, তিনি বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থাকাকালে এক ছাত্রীর মামলায় সে জেল খেটেছে। সে নিয়মিত মদপান করে। আমরা মদখোর, নোংরা মন মানসিকতার তৈরী ঐ প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
এলাকাবাসির সাথে কথা বললে তারা বলেন, এই প্রধান শিক্ষক সোহরাব ও স্কুল কমিটির সভাপতি সাবেক মেম্বার আক্কাস আলী মিলে নিয়োগ বানিজ্য ও স্কুলের সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে। কেউ প্রতিবাদ জানালে বিষয়টিকে দলীয় ইস্যু বানিয়ে প্রতিবাদকারিদের হেনস্তা করা হয়েছে।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি হরিদাস মন্ডল জানান, এঘটনায় প্রধান শিক্ষক সোহরাব আলীকে পুলিশি হেফাজতে থানায় আনা হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।