November 29, 2024, 10:30 pm

আর্শিবাদ পুষ্ট ইন্সপেক্টর আতিক যেন আরেক ওসি প্রদীপ

আর্শিবাদ পুষ্ট ইন্সপেক্টর আতিক যেন আরেক ওসি প্রদীপ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অর্থের বিনিময়ে মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীদের সহায়তা দেয়া, উৎকোচ, নিরাপরাধীদের আটক করে মামলায় জড়ানো, পরিকল্পিতভাবে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের ফাঁসানো চেষ্টা, সম্পত্তি জবর দখল, জব্দকৃত আসল হেরোইন বিক্রি করে মেডি দিয়ে আসামীকে চালান, মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করা, সোর্স নিয়োগ করে মাসোহারা আদায়। সেই টাকায় নগরীতে বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ, কোটি টাকার দুটি গাড়িসহ নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিকসহ কতিপয় পুলিশ সদস্য। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের আশীর্বাদ ও অন্ধ সমর্থন তাকে শান্তির নগরী সর্বত্র রাজশাহীতে বেপরোয়া করে তুলেছে বলে মনে করেন স্থানীয়দের অনেকে।

মাদক দমনের নামে একের পর এক একজনকে মাদক ব্যবসায়ী, বিত্তবানদের ফাঁসানো, নিরপরাধীদের টার্গেট করে মাদক মামলার ভয় দেখানো, বেশি মাদক ধরে অল্প মাদক দিয়ে মামলা দেওয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায়, একজনকে মাদকসহ ধরে বিভিন্নজনের নামে মামলা দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে ইন্সপেক্টর আতিক সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। ভুক্তভোগীরা সাংবাদিক সম্মেলনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পায়নি। বিভিন্ন টেলিভিশন ও জাতীয়, স্থানীয়, পত্র পত্রিকায় সংবাদের শিরোনাম হলেও তার পক্ষে পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের আশীর্বাদ থাকায় বহাল তবিয়তে একই কর্মস্থলে চাকুরী করছেন আলোচিত এই কর্মকর্তা।
সচেতন মহলসহ স্থানীয়রা বলছেন সব মিলিয়ে রাজশাহীতে একটি ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছেন আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তাঁরা বলছেন একদিকে হেরোইন, ফেন্সিডিল,ইয়াবাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন, অন্যদিকে অসাধু কর্মকর্তার আর্শিবাদ পুষ্ট হয়ে ‘যা খুশী তাই করার’ সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহী জেলা ডিবি’র ইন্সপেক্টর আতিক।

তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নেমে আসে নির্যাতন, হামলা, মামলা। তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর থেকে জেলা ডিবি’র পরিদর্শক আতিকুর রেজা’র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে সাংবাদিকদের তথ্য দিচ্ছেন।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে এসআই হিসেবে পুঠিয়া থানায় পুলিশে যোগ দেয় আতিক।। এসআই হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ২০০৬ সালে হুন্ডির টাকা আত্মসাত ঘটনায় বরখাস্ত হন তিনি। প্রায় ৬ বছর বরখাস্ত ছিলেন তিনি। যার শুরুতেই গন্ডগোল ছিলো সে তো ক্ষমতা পেলে একটু বেশি বেশি করবেন সেটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করছেন সচেতন মহল।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর সেতাবুর রহমানের ছেলে উজ্জ্বল হককে ২০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে চালান দেয় পরিদর্শক আতিকুর রেজা। এই ঘটনায় তাঁর সোর্স মিন্টু ওরফে মাইকেল জড়িত। আটকের সময় তাঁর কাছে কোন মাদক পাওয়া গিয়েছিলো না। মাদক না পাওয়া গেলেও সেতাবুরের নিকট থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় আতিক। মাদক দিয়ে মামলা দিবে শর্তে অন্য একজনের নিকট থেকেও ২ লাখ টাকা নেয় আতিক। অর্থাৎ আটক করতেও টাকা, আবার কম হেরোইন দিয়ে মামলা দেওয়ার কথা বলে আসামী পক্ষের নিকট থেকে টাকা আদায় করেন তিনি। এটা তাঁর প্রতিদিনের কাজ। অনেকটা সুপারি কিলারের মতো ব্যাপার। ওই একই মাসে ১১ তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোদালকাঠি এলাকার মিজানুর রহমান মামুনের নিকট ১০০ গ্রাম হেরোইন পাওয়া যায়। পরে তাঁকে ২০ গ্রাম দিয়ে চালান দেয়। এখানেও একই প্রক্রিয়ায় হয় লেনদেন।

১৯ নভেম্বর পুঠিয়া উপজেলার দীঘলকান্দী গ্রাম থেকে দুজন নারী-পুরুষকে ৩০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক করা হয়। এখানেও ২ লাখ টাকা দাবি করেন আতিক। তবে আটক নারী মর্জিনা সুকৌশলে ৯৯৯ ফোন দিয়ে আতিকের ঘুষ দাবির বিষয়টি জানিয়ে দেয়। চারঘাট থানার পুলিশ ওই সময় ঘটনাস্থলে পৌছালে আতিক বলেন ঘুষ চাওয়া হয়নি, মাদক পাওয়া গেছে কিন্তু উদ্ধার মাদক দেখাতে অক্ষম ছিলো আতিক।

অপর আরেক ঘটনায় জমি নিয়ে ভায়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এর জেরে পুঠিয়ায় ভাড়রা গ্রামের মতিনের ছেলে জনিকে আটক করেন আতিক। মতিনের ভায়ের পক্ষে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে জনিকে ৩০ গ্রাম হেরোইন ও ১৫ পিচ ইয়াবা দিয়ে মামলা দেয় আতিক। ঘটনাস্থলে অর্ধশত গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে, চলতি মাসের ১৫ নভেম্বর খেলার মাঠ থেকে গোদাগাড়ি শরমংলা লালবাগ এলাকা থেকে মিজান (৪০) নামে একজনকে আটক করেন আতিক। তার কাছে কোনো মাদক না পেয়ে ২০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে চালান দেওয়া হয়। আটকের পর মিজানের পরিবারের নিকট মোটা অংকের উৎকোচ চাওয়া হয়। ১০ লাখ টাকা নিয়েও তাকে মামলা দেওয়া হয় অন্য একজনকে খুশি করতেই।
রাজশাহী জেলা ডিবির ইন্সপেক্টর আতিক যে, ঘূষ দুর্নীতি কিংবা গ্রেফতার বানিজ্য করেই ক্ষান্ত হয়েছেন তা কিন্তু নয়। রাজশাহীর বেশ কয়েকটি ডেভলপার কোম্পনির সাথে যোগাযোগ করে মহানগরীর তালাইমারি মোড়ের পাশে( সাবেক নর্দান ইউনিভার্সিটির গলি) বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটির পেছনে নির্মান করছেন বহুতল ভবন। সেই ভবনের কাজ এখনও চলমান। এছাড়াও তার রয়েছে ২ টি নিজস্ব মাইক্রো ও কার। এতো টাকার আয়ের উৎস কোথায়?

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে পরিদর্শক আতিকুর রেজাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলমকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমরা ধারাবাহিক পর্বে প্রকাশিত সংবাদগুলো দেখেছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কথা বললে রাজশাহীর পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়গুলো আমাদের নজরে এসেছে আমরা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিবো।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.