নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহীতে প্রশাসনের নামে মাসোহারা উত্তোলনকারী সোর্স মিন্টুসহ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কয়েক পর্বে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের জেরে হয়রানির উদ্দেশ্যে সাজানো মিথ্যা মামলা করেন সোর্স মিন্টু।
মাসোহারা উত্তোলনকারী মিন্টু, নাটোর আদালতে প্রকাশিত সংবাদে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী ও সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে মামলার এজাহার দায়ের করেন।
আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা তাকে প্রত্যাক্ষভাবে সহযোগীতা করছে বলে জানা গেছে। যাদের নামে মিন্টু মাসোহারা উত্তোলন করেন তারাই মুলত প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সাহায্য করছেন।
মূলত নিজেসহ অসাধু কর্মকর্তাদের বাঁচাতে সাংবাদিকসহ তথ্য প্রদানকারীদের শায়েস্তা করতেই মামলার এজাহার দাখিল করেন তিনি। প্রশাসনের নামে চাঁদা উত্তোলনসহ কয়েক পর্বে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি মিন্টু ওরফে মাইকেলকে। প্রবাদেই আছে, দুধ দেওয়া গরুর লাথি খাওয়াও ভালো। প্রবাদটি মিন্টু ও অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজ্য।
মিন্টুর মাসোহারা উত্তোলনসহ নানা অপকর্মের অসংখ্য অডিও ফাঁস হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি মিন্টু। বরং সংবাদ প্রকাশে তথ্য প্রদানকারীসহ সাংবাদিকদের হয়রানি করতে মরিয়া হয়ে তাকে সহযোগীতা করছেন রাজশাহী জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আতিকুর রেজাসহ কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর থেকে মাদক স্পট থেকে মাসোহারা উত্তোলন, মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে উৎকোচ গ্রহন, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনটি পর্বে অসংখ্য পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। ঐ সংবাদে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে ডিবি’র ইন্সপেক্টর আতিক রেজাসহ পুলিশের আতাত থাকার তথ্য তুলে ধরা হয়। এতেই ঈর্শ্বানিত হয়ে সাংবাদিককে শায়েস্তা করার ফর্মুলা হিসেবে সেই সোর্সকে দিয়ে মামলা করান ইন্সপেক্টর আতিক এমন অভিযোগ বিশ্বাস্ত সুত্রের।
পুলিশের এমন কার্যকলাপে বোঝা যায়, এই মিন্টু আতিক রেজার খাঁস লোক। মিন্টুর ফাঁস হওয়া অডিও গুলোতে পরিষ্কার ভাবে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা নাম উল্লেখ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকায় প্রশাসন। যেখানে প্রশাসনের নামে এতো বড় বড় প্রতারণার অভিযোগ মিন্টুর বিরুদ্ধে, সেখানে প্রশাসনের নিরব ভুমিকায় বলে দেয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জড়িত তাঁর সঙ্গে। মিন্টু গ্রেফতার হলেই বেড়িয়ে আসবে থলের বিড়াল।
এ ভয়েই তাঁকে গ্রেফতার করছে না প্রশাসন এমনটাই মনে করছে অপরাধ বিশ্লেষকরা। প্রশাসন বলছে অন্য কথা। তারা চায় ভুক্তভোগীর অভিযোগ। সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রশাসনের সহায়তায় সাংবাদিকসহ তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রাজশাহীর সাংবাদিক সমাজ।
এ ঘটনায় নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সভাপতি নুরে ইসলাম মিলন, আরজেএফ সভাপতি আবু কাউসার মাখন, রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবে সভাপতি শামসুল ইসলাম, রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মীর তোফায়েল হোসেনসহ আরো অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠন।
সংগঠনের সাংবাদিক নেতারা বলেন, প্রশাসনের নামে মাসোহারা ও চাঁদা উত্তোলন করার পরেও যখন প্রশাসন নিরব ভূমিকায় থাকে তখন বিষয়টি বুঝতে হবে মিন্টু তাঁদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতারক মিন্টুর ফাঁস হওয়া অডিও গুলোতে পরিষ্কারভাবে প্রশাসনের উদ্ধর্তন অফিসারের নাম ব্যবহার করে চাঁদাসহ ভয় প্রদর্শন করলেও কেনো প্রশাসন নিরব তা ভাবাচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
এ বিষয়ে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: রেজাউল করিম বলেন, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমুলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব কঠোর কর্মসূচি দিবে। যতক্ষণ না সোর্স মিন্টুসহ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হবে। তিনি পুলিশের এমন কার্যকলাপে দূঃখ প্রকাশ করেন এবং মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়াসহ প্রতারক মিন্টুকে গ্রেফতারের জোর দাবি করেন। প্রতারক মিন্টু গ্রেফতার না হলে মানববন্ধনসহ বৃহত্তর আন্দোলন দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন সাংবাদিক এই নেতা।
কথা বললে রাজশাহীর পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান (পিপিএম) বলেন, সোর্স মিন্টুকে তো সংবাদ প্রকাশের জেরে গ্রেফতার করতে পারি না। যাদের নিকট থেকে মাসোহারা উত্তোলন করেছে তারা যদি অভিযোগ দেয় তাহলে তা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনের নামে চাঁদা উত্তোলন করার একাধিক অডিও ফাঁস হলেও কেনো ওই প্রতারকে গ্রেফতার করা হবে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম ভুক্তভোগীকে অভিযোগ দিতে বলেন। অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।