November 28, 2024, 11:54 pm

পবার রাস্তায় চাঁদা না দিলে অটো গাড়ি চলতে পারবে না !

পবার রাস্তায় চাঁদা না দিলে অটো গাড়ি চলতে পারবে না !

নিজস্ব প্রতিবেদক: “শুক্র শনিবার সরকারি ছুটি থাকে সরকারি কর্মচারীদের অফিসে যেতে হয় না। কিন্তু আমাদের এখানে সপ্তাহের কোন দিনই বাঁকি থাকে না। একটা দিন চাঁদার টাকা না দিলে আমাদের গাড়ি রাস্তায় নামতে পারবে না”। কথা গুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি এলাকার সুমন আলী নামের এক অটো চালক।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখানে আমাদের কিসের টাকা দিতে হবে আমরা সেটাই বুঝি না। আল্লাহর প্রতিটা দিন এদের কে গাড়ি প্রতি দশ টাকা করে দিতে হয়। আমরা যে তাদের কে টাকা দেই এই টাকা কি সরকারি ফান্ডে যাই? যদি সরকারি ফান্ডে না যায় তাহলে আমরা কেন তাদের কে গাড়ি প্রতি টাকা দিব? একটা দিন টাকা না দিলে তারা আমাদের গাড়ি আটকিয়ে রাখে । নিজেদের টাকা দিয়ে গাড়ি কিনে, নিজের টাকা দিয়ে গাড়ি চার্জ দিয়ে রাস্তা বের করলেই তাদের টাকা দিতে হয়। এটা কি মগের মুল্লুক ভাই?

রাজশাহীর পবা উপজেলার প্রাণকেন্দ্র নওহাটা বাজার (ভ্যানপট্টি), নওহাটা ব্রীজঘাটের উত্তর পার্শ্বের প্রতিদিন অটো ( চার্জার গাড়ি ) প্রতি দশ টাকা করে দিতে হয় গাড়ি চালকদের। এই নিয়ে চালকদের মাঝে নীরব ক্ষোভ থাকলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পান না বলে জানান তারা। সোমবার (২২ ই জানুয়ারি) সকালে সরজমিনে দেখা যায় নওহাটা ব্রীজঘাট উত্তর পার্শ্বে রপ্রতিটি অটো গাড়ি থেকে সড়কে টাকা তুলছেন রায়হান আলী নামের একজন। গাড়ি প্রতি দশ টাকা করে নিচ্ছেন। টাকা নেওয়া হয়ে গেলে গাড়ি কে ছেড়ে দিচ্ছেন আর যে দুইএকজন ড্রাইভার টাকা দিতে অস্বাীকার জানাচ্ছে তাদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হুমকি এবং যে পথে এসেছে গাড়িগুলোকে সেই পথেই উল্টো ফেরত যেতে বলছেন।

ব্রীজঘাটের উত্তরা পার্শ্বের মতই একই অবস্থা নওহাটা বাজার (ভ্যানপট্টি) এলাকায়। চিকন সরু রাস্তা আর নওহাটা বাজারের প্রবেশ মুখ হওয়ায় সেখানে প্রায় সবসময়ই জ্যাম লেগে থাকে। তারপরে আবার সেখানে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী অটো ষ্টান্ড। এখানেও গাড়ি প্রতি দশ টাকা করে নেওয়া হয় বলে জানান স্থানীয় অটো চালকরা। এই জায়গায় গাড়ি থেকে টাকা উত্তোলন করে জুয়েল আর সোহেল নামের দুইজন ব্যাক্তি।

উপস্থিত ড্রাইভারদের সাথে কথা বললে তারা টাকা দিতে অসন্তোষ জানান। শাহজাহান আলী নামের এক চালক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এই বড়গাছি থেকে নওহাটা লাইনে প্রায় ১০০ টি গাড়ি চলাচল করে। প্রতি গাড়ি থেকে দশ টাকা করে তুললে প্রতিদিন একহাজার টাকা হয় যা মাস শেষে ত্রিশ হাজার টাকা হয়। এই এতগুলা টাকা আমাদের সাধারণ গরিব ড্রাইভারদের কাছে থেকে তোলা হয়। এই টাকা গুলো দিয়ে কি সরকারের কোন উপকার হয় ? নাকি আমাদের কোন উপকার হয়? আমরা এই চাদাঁ দিতে আর চাই না। অবলম্বে এই চাদাঁ নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

রাজু আহমেদ নামের এক ড্রাইভারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আপনারা হয়ত দেখবেন নওহাটা ব্রীজের এই পার্শ্বে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে আর অপর পাশে পবা থানা অবস্থিত। পুলিশ স্যাররা যদি একটু এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয় তাহলে কি এরা সাহস পায় আমাদের ড্রাইভারদের কাছে থেকে চাঁদা নিতে। আমরা চাই এই চাঁদা নেওয়া যাতে বন্ধ করা হয়। তাহলে আমাদের জন্য এগুলো হয়রানি বন্ধ হয়।

এই বিষয়ে সড়কে টাকা উত্তোলনকারী রায়হান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে গাড়ির সিরিয়াল ঠিক রাখতে আমি এখানে ড্রাইভারদের কাছে থেকে মাত্র দশ টাকা নেয়। অনেক সময় সিরিয়াল নিয়ে ড্রাইভাররা গন্ডগোল লাগিয়ে দেয়। তাই এখানকার পরিবেশ সুষ্ঠ রাখতে আমি এখানে কাজ করি। দেখা যায় প্রতি দিন তিনশো থেকে চারশো টাকা আসে যা দিয়ে আমি আমার পাটখরচ রাখি’। নওহাটা ভ্যানপট্টি এলাকার টাকা উত্তোলনকারী সোহেল এর সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি এগুলো বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে বলেন।

এগুলো বিষয়ে নওহাটা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান কে অবগত করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মেয়র হওয়ার আগে পৌরসভার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য পৌরসভা এলাকায় গাড়ি থেকে টাকা নেওয়া হতো। কিন্তু আমি মেয়র হওয়ার পরে এগুলো টাকা উত্তোলণ করা বন্ধ করে দেই। বর্তমানে যারা সড়ক থেকে টাকা তুলছে তাদের বিষয়ে আমি জানিনা। তারা আমার পৌরসভার কেউ না’।

এই বিষয়ে পবা থানা অফিসার ইনচার্জ সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘আমি পবা থানায় নতুন এসেছি। কে বা কারা টাকা তুলছে এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা’।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.