November 28, 2024, 4:40 pm

মোবাইল অ্যাপ ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট কেলেঙ্কারীর ঘটনায় রাজশাহীতে আরও ৪ মামলা

মোবাইল অ্যাপ ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট কেলেঙ্কারীর ঘটনায় রাজশাহীতে আরও ৪ মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতারকচক্রের তৈরি করা মোবাইল অ্যাপ ‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’-এ বিনিয়োগের নামে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় রাজশাহীতে আরও ৪টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ছয়টি মামলা করেছেন প্রতারিতরা। ৬জন ভুক্তভোগী পৃথকভাবে এ মামলা করেছেন। এর মধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে সোমবার। একটি মামলাটি হয়েছে রবিবার। এবং দুটি হয়েছে গত জানুয়ারিতে।

নতুন চারটি মামলায় ইউএস এগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান মো. ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ (৩৮), তাঁর স্ত্রী ও বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমা তুজ জহুরা ওরফে মিলি (৩২) এবং জেলা এজেন্ট মিঠুন মন্ডলকে (৩৬) আসামি করা হয়েছে। ওয়াহেদুজ্জামান ও ফাতেমা দম্পত্তির বাড়ি নগরীর নওদাপাড়া এলাকায়। মিঠুন মণ্ডলের বাড়ি নগরীর বোয়ালিয়াপাড়ায়।

সোমবার নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া মহল্লার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (৪৩) নামের এক ভুক্তভোগী মামলা করেন রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আমলী আদালতে। একই আদালতে আরেকটি মামলা করেন হড়গ্রাম নতুনপাড়া এলাকার খাইরুজ্জামান মিয়া (৫৫) নামের আরেক ভুক্তভোগী। এছাড়া সোমবার নগরীর বসুয়া পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আরিফ হাসান (২৮) মামলা করেন রাজশাহীর রাজপাড়া থানার আমলী আদালতে। একই আদালতে আগের দিন রোববার মামলা করেন ঘোড়ামারা এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান (৫৮)।

মামলার এই চার বাদীর আইনজীবী শামীম আকতার হৃদয়। তিনি জানান, নিজাম উদ্দিনের মামলায় বলা হয়েছে, আসামিদের প্রলোভনে পড়ে তিনি নিজে এই অ্যাপে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এছাড়া মামলার ৩ জন সাক্ষী বিনিয়োগ করেছিলেন আরও ৪৫ লাখ টাকা। আরিফ হাসানের মামলায় বলা হয়েছে, তিনি নিজে বিনিয়োগ করেছিলেন ৬০ লাখ টাকা। মামলার ৫ সাক্ষী বিনিয়োগ করেছিলেন আরও ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আরেক বাদী আবদুর রহমান বিনিয়োগ করেছিলেন ১৬ লাখ। তাঁর মামলার ৭ সাক্ষী বিনিয়োগ করেছিলেন ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অপর বাদী খাইরুজ্জামান মিয়ার বিনিয়োগ ছিল ১০ লাখ টাকা। তাঁর মামলার ৪ সাক্ষী বিনিয়োগ করেছিলেন ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আইনজীবী শামীম আকতার হৃদয় বলেন, ‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট দেশীয় প্রতারকচক্রের একটি অ্যাপ। রাজশাহীর কর্মকর্তা হিসেবে মামলার আসামিরা এখানে ভুক্তভোগীদের বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রতি এক লাখ টাকা বিনিয়োগে মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা দেওয়ার লোভনীয় প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল। সহজ-সরল মানুষ না বুঝে বিনিয়োগ করেন।’

তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের চারটি মামলাই আদালত গ্রহণ করেছেন। মামলাগুলো তদন্তের জন্য আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন।

ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপে রাজশাহীর অন্তত শতাধিক নারী-পুরুষ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। সারাদেশে এই অ্যাপে প্রায় ২ হাজার মানুষ বিনিয়োগ করে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা খুইয়েছেন বলেও তারা জানাচ্ছেন।

এই প্রতারণার ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় গত ১৭ জানুয়ারি মোস্তাক হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী প্রথম মামলা করেন। এ মামলায় ওয়াহেদুজ্জামান, তাঁর স্ত্রী ফাতেমা ও মিঠুন ছাড়াও অ্যাপের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে মৌলভীবাজারের ফারুক হোসাইন সুজন (৩৯) ও কান্ট্রি লিডার হিসেবে ঢাকার মোতালেব হোসেন ভুঁইয়া (৩৫) নামের দুজনকে আসামি করা হয়।

এরপর ২৩ জানুয়ারি ইউসুফ আলী নামের এক ভুক্তভোগী রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় আগের পাঁচজন ছাড়াও সজীব কুমার ভৌমিক ওরফে মাহাদি হাসান (৩৩) নামের একজনকে আসামি করা হয়। এই মাহাদিই প্রতারচক্রের মূলহোতা। তার বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদী। বহু প্রতারণার হোতা মাহাদি কয়েকবছর ধরে থাকেন ঢাকায়।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.