বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলে খুনিদের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে সহযোগিতা এবং বিভিন্ন দূতাবাসে পুনর্বাসন কেন করেছিল- সেই প্রশ্ন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে। আমি দেশে ফিরে এসেও বিচার চাইতে পারিনি। ‘৯৬-তে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে আদালতে গিয়েছি, বক্তব্যে চেয়েছি..আমাদের তো মামলা করারও অধিকার ছিল না। কারণ সেখানে তো ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছে। খুনিদের রাজনৈতিক দল গঠন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’
জিয়াউর রহমান তাদের নিজে উদ্যোগী হয়ে লিবিয়ায় তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে সহযোগিতা করেছিলেন। পাকিস্তানের ভুট্টোকে অনুরোধ করে তার মাধ্যমে লিবিয়ার গাদ্দাফির সঙ্গে আলোচনা করে এই খুনিদের সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। পরে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। সে যদি খুনিই না হবে, ষড়যন্ত্রকারীই না হবে, তাহলে খুনি মোস্তাক তাকে সেনাপ্রধানই করবে কেন আর কেন খুনিদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেবে।
এসময় খুনিদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের পর খালেদা জিয়ার ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘…খালেদা জিয়া খুনি ফারুক, রশীদ এবং হুদা তাদের নির্বাচনে প্রার্থী করে। তাদের সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বানায় খালেদা জিয়া। এটাকে কীভাবে অস্বীকার করবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা জড়িত না।’
তিনি বলেন, যেদিন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় হবে সেদিনও হরতাল ডেকেছিল বিএনপি, যাতে বিচারক আদালতে যেতে না পারেন। কিন্তু সেদিন রায় হয়েছিল।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে ১৫ আগস্টে নির্মম হত্যাকাণ্ডের সেই দিনের স্মৃতি স্মরণ করেন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে অনেক জায়গায় মানবাধিকারের কথা বলা হয়, সরকারের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, সেসময়ে মানবাধিকার কোথায় ছিল? আমি মা-বাবা হারিয়েছি, আমি বিচার চাইতে পারবো না, মামলা করতে পারবো না। আমরা মানুষ না?’
‘যারা আজকে সাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেয়, সেই দেশই তো খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। তাদের কাছ থেকে আমাদের মানবাধিকারের ছবক শেখায়। যারা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের নারী-শিশুদের হত্যা করেছে। আমার প্রশ্ন, আমাদের মানবাধিকার কোথায়? যারা খুনিদের লালন-পালন করলো, যারা খুনি-মানবাধিকার লঙ্ঘন করলো; তাদের মানবাধিকার নিয়ে তারা ব্যস্ত। বিএনপি এদের লালন-পালনকারী।’
পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বেঁচে থাকা যে কত কষ্টের তা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে কখনও এই হত্যার বিচার হতো না।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বে এই হত্যার বিচারের জন্য জনমত চালিয়েছি। আমাদের নিয়ে মিথ্যাচার-অপপ্রচার করা হয়েছে। তারপরও দেখা গেল, বাংলার মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা যায়নি। …চুয়াত্তরে চক্রান্ত করে দুর্ভিক্ষ ঘটানো হয়েছিল। যখন কিছুতেই পারছিল না, তখন তাকে হত্যা করা হলো।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে কষ্ট-বেদনা সহ্য করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। সব সহ্য করে নীলকণ্ঠ হয়ে অপেক্ষা করেছি, কবে ক্ষমতায় যেতে পারবো। এই দেশকে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবো। মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো।’
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর দলের মধ্য থেকে জোরালো প্রতিবাদ কেন হলো না- সেই প্রশ্ন রেখে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘….কতো স্লোগান। বঙ্গবন্ধু তুমি আছো, যেখানে আমরা আছি সেখানে.. কোথায় ছিল সেই মানুষগুলো? একটি মানুষও ছিল সাহস করে এগিয়ে আসার? প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি? এতো বড় সংগঠন, এতো লোক। কেউ তো একটা কথা বলার সাহস পায়নি।’
‘১৫ থেকে ১৬ আগস্ট ওই লাশ পড়ে থাকল। ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে গেলো টুঙ্গীপাড়ায়। সেখানে মা-বাবা কবরের পাশে মাটি দিয়ে আসে। সেখানে মৌলভী সাহেব আপত্তি তুলে বলেছিলেন আমি গোসল দেবো, কাফন-দাফন দেবো..কিছুই নিয়ে যাননি…শুধু দিয়ে গেছেন। একটি দেশ, একটি জাতি, পরিচয় দিয়ে গেছেন। বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে যাত্রা করিয়ে দিয়ে গেছেন। কিছুই নিয়ে যাননি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। দেশের গরিব মানুষকে যে রিলিফের কাপড় তিনি দিয়েছিলেন, সেই কাপড়েই তাকে কাফন দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে তিনি কিছুই নিয়ে যাননি।’
দেশের মানুষের জন্য তার সরকার বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর উপহার দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব মানুষের মুখের হাসি তাকে তৃপ্তি দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আজকে একদিকে তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আজকে উন্নত দেশেও একই অবস্থা। ইউরোপের কোনও কোনও দেশে আরও খারাপ পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে আমরা বাধ্য হয়েছি তেলের দাম বাড়াতে।’
‘আমি জানি এটা বাড়াতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমরা বুঝি। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৫০ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকায় চাল সরবরাহ করবো। আর এক কোটি পারিবারিক কার্ড আমরা দেব। যার মাধ্যম সাশ্রয়ী মূল্যে চাল ডাল চিনি যার যেটা প্রয়োজন সেটা তারা কিনতে পারবে।’
যারা কষ্টে আছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তশালী এবং দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসময় তিনি জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।