নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে ফলের চাষ বলতে প্রথমেই নাম আসে আমের। শুধু আম নয় রাজশাহী বিখ্যাত লিচুর জন্য। রাজশাহীর লিচু স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। বর্তমানে লিচু গাছে দেখা মিলছে মুকুলের। কিছু গাছে দেকা মিলছে গুটিরও। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মৌসুমের আবহাওয়া ছিল নাতিশীতোষ্ণ। তাই এবার লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ধরনের আবহাওয়া লিচুর ভালো ফলনের জন্য উপযোগী। চাষি ও কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লিচুর উৎপাদন হবে ভালো। তবে এ জন্য চাষীদের গাছ পরিচর্যায় হতে হবে আন্তরিক। এ কারণে চাষীরাও রয়েছেন গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে শুধু লিচু চাষ করে জেলার কয়েক শতাধিক চাষি স্বনির্ভর হয়েছেন। তাই প্রতি বছর লিচু চাষ বাড়ছে। চাষিদের মধ্যে এ ফলটির চাষ ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাগান ছাড়াও বসতবাড়িতে দেশি লিচুর পাশাপাশি উচ্চফলনশীল চায়না-৩ এবং বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুর চাষ হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, রাজশাহীতে প্রতিবছর বাড়ছে লিচুর চাষ। এ বছর জেলায় লিচুর চাষ বেড়েছে পাঁচ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৫২৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর লিচুর চাষ হয় ৫৩০ হেক্টর জমিতে। আর ২০২০ সালে মৌসুমে লিচুর চাষ হয়েছিলো ৫০০ হেক্টর ও ২০২১ সালে মৌসুমে ৫১৯ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিলো। গেল ৩ বছরে জেলায় লিচু চাষের জমি বেড়েছে ১১ হেক্টর।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় মোট লিচুর চাষ হয়েছে ৪৮৯ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ সালে এক একর বেড়ে মোট চাষের জমি দাঁড়ায় ৪৯০ হেক্টরে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে চাষের জমি বাড়ে আট হেক্টর। মোট ৪৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় ২ হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন। সে বছর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ছিল ৫ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন।
২০১৯-২০ মৌসুমে লিচুর আবাদ আরও দুই হেক্টর বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৫০০ হেক্টরে দাঁড়ায়। অপরদিকে ২০২০-২১ মৌসুমে ১৯ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে মোট চাষের জমি দাঁড়ায় ৫১৯ হেক্টরে।
প্রায় প্রতিটি এলাকার বসতবাড়িতে কয়েক বছরে লিচুগাছ লাগানোর প্রবণতা বেড়েছে। রাজশাহী নগরীর রায়পাড়া, বুলনপুর, ছোটবনগ্রাম ও কাটাখালী এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলায়ও চাষ হচ্ছে লিচু। প্রতিটি বাগানের গাছগুলোয় এখন দেখা মিলছে মুকুলের। চাষীরা জানিয়েছেন, গুটি এরই মধ্যে বড় হতে শুরু করেছে।
তাই তারা গুটি টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন রাসায়নিক ওষুধ স্প্রেসহ পরিচর্যার চাষিরা কোনও রাখছেননা ত্রুটিই।
জেলার পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের লিচুর চাষি আবদুল কাদের বলেন, আবহাওয়া যদি শেষ পর্যন্ত ভালো থাকে তবে এবার লিচুর ফলনও ভালো হবে। গাছ থেকে লিচু যেন পড়ে না যায়, সে জন্য পর্যাপ্ত পানি দেয়া হচ্ছে। কাঠবিড়ালি আর বাদুড় যাতে নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য জালের ব্যবস্থা করা হবে। লিচুর পরাগায়ণ বৃদ্ধি করতে বাগানে একজন মৌচাষীকে মৌ-বাক্সও বসাতে দিয়েছি।
সরজমিনে লিচুবাগানগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, লিচুর চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মুকুল ও গুটির পরিচর্যা করছেন তারা। গাছের গোড়ায় ড্রেন করা, পানি দেওয়া, স্প্রে করা সহ লিচু গাছের পরিচর্যা হচ্ছে। কীটনাশকসহ বিভিন্ন ভিটামিন স্প্রে করছেন তারা। এছাড়াও লিচু মোটা করতে মাটিতে জৈব সার, হরমোনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার প্রয়োগ করবেন তারা।
দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর এলাকার লিচুচাষি মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময়মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে লিচুর ভালো ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছরে লিচুর মুকুল আসার সময় হালকা বৃষ্টি হওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ মুকুল বের হয়েছে। এসব মুকুল ফুটতেও শুরু করেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, লিচুর এমন একটি ফল যা মানুষকে আকর্ষণ করে। তাই এই ফলে খুব একটা লোকসান হয় না। তবে কোন মৌসুমে ফলন একটু কম আবার কোনো মৌসুমে বেশি হয়। তবে প্রতিবছর লিচুর আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ বেশি হয়েছে। তুলনামূলকভাবে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা বেশি।