মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই ডিমের বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে। মূল্যবৃদ্ধির এক সপ্তাহ পর ডিমের হালিতে পাঁচ টাকা কমলেও চাহিদা বাড়েনি। সর্বশেষ খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা বা ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের চাহিদা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রেতারাও ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। আগে যেখানে একজন গড়ে প্রতিদিন ৫০০টি ডিম এলাকাভিত্তিক পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিতেন, সেখানে এখন ২৫০-৩০০টি করে নিচ্ছেন। ডিমের হালিতে পাঁচ টাকা কমলেও ক্রেতারা বলছেন পর্যাপ্ত নয়। তারা বলছেন, ডিমের দাম এখনো আকাশচুম্বী। ডিমের হালি এখনো তাদের সাধ্যের বাইরে।
সর্বশেষ খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি হালি লাল ডিম ৪৮-৫০ টাকা, ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে হাঁসের ডিমের ডজন ২১৫ থেকে ২২৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ থেকে ২৪৫ টাকায়। শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা, উত্তর বাড্ডা ও শাহজাদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিমের এলাকাভিত্তিক পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিমের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে ডিম বিক্রি অনেক কমে গেছে। ক্রেতারা ডিম কেনা কমিয়েছেন বলে খুচরা বিক্রেতারা তাদের কাছ থেকে আগের মতো আর ডিম কিনছেন না। এতে ব্যবসায়িকভাবে তারা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।
উত্তর বাড্ডা থেকে বাঁশতলা পর্যন্ত ভ্যানে করে বিভিন্ন দোকানে ডিমের সরবরাহকারী পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মুসা বলেন, দাম বাড়ার আগে গড়ে ৫ হাজার ৫০০ পিস করে ডিম বিক্রি হতো। এখন তা নেমে এসেছে ৪ হাজার পিসে। আগে একটি মুদি দোকানে কম করে হলেও প্রতিদিন ৩০০ পিস ডিম দেওয়া যেত। এখন ১৫০-২০০ পিসে নেমে এসেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের বলছেন ক্রেতাদের চাহিদা না থাকায় কম ডিম নিচ্ছেন। দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন ব্যবসায়ীরাই হচ্ছেন।
ডিমের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মো. মুসা বলেন, ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বড় বড় খামারিরা। তারা বেশি মুনাফার জন্য কম সংখ্যায় ডিম বাজারে ছাড়ছেন। ফলে বাজারে এ অস্থিরতা। ডিমের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিম্ন আয়ের লোকজন আগে বেশি ডিম কিনতেন। এখন তারা ডিম কেনা একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া, মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের চাহিদাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে চাহিদা না থাকায় তারাও দোকানে কম ডিম তুলছেন।
শাহজাদপুর কাঁচাবাজারের ডিমের খুচরা বিক্রেতা জয়নাল হোসেন বলেন, আগে যারা এক হালি ডিম নিতেন, তারা এখন নেন একটা কি দুইটা। আর যারা এক ডজন নিতেন, তারা এখন নেন এক হালি। নিম্ন আয়ের মানুষ তো আর ডিম কিনছেই না। আগে প্রতিদিন ৩০০ পিস করে দোকানে ডিম তোলা হতো। এখন একদিন তুললে দুইদিন আর নতুন ডিম কিনি না। কারণ বিক্রি কমে গেছে লাভ হয় কম।
এদিকে দাম কমে ডিমের হালি ৪৮-৫০ টাকা হলেও এখনো তা নাগালের বাইরে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। সব কিছু ম্যানেজ করতে গিয়ে তাদের খাদ্য তালিকা থেকে ধীরে ধীরে ডিম সরে যাচ্ছে।
রাজধানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টস বিভাগে চাকরি করা গিয়াসউদ্দিন বলেন, আগে আমার বাসায় সপ্তাহে এক ডজন ডিম লাগত। কিন্তু নতুন করে দাম বাড়ায় হাফ ডজনে কাজ চালাতে হয়। বাজারে তো সব জিনিসের দামই বেশি। সব কিছু ম্যানেজ করে চালতে চালতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।
ডিমের দাম নিয়ে রিকশাচালক মোতালেব বলেন, অনেকে তো এক হালি হলেও কিনতে পারছে। আমরা তো তাও পারি না। ৫০ টাকা হালি ডিম কিনে আমরা পোষাতে পারব না