নিজস্ব প্রতিবেদক: আপনজনদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত কর্মজীবী মানুষ।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজশাহী থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফিরছেন কর্মজীবীরা। প্রতিবারের মতো এবারও এসব মানুষ টিকিট বিড়ম্বনা ও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
রাজশাহীতে ঈদ পরবর্তী ট্রেন, বাস ও বিমানের টিকেট সহজেই পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের অভিযোগ কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে এসব টিকিট। আর এ কারণেই রেল স্টেশন,বাস টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডের কাউন্টারগুলোতে চলছে অগ্রিম টিকিটের হাহাকার।
ঈদ পরবর্তী কাঙিক্ষত টিকিট পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণদের। অথচ কালোবাজারিদের হাতে দ্বিগুন দাম ধরিয়ে দিলেই পাওয়া যাচ্ছে টিকিট।
এ চিত্র রাজশাহী ঢাকা বাস কাউন্টার ও ভদ্রা বাসস্টান্ড ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। ট্রেনের মতো বাস ও বিমানের টিকিটও সহসাই মিলছে না।এ ছাড়া অনলাইনেও পাওয়া যাচ্ছে না সঠিক তথ্য। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে ঢাকাসহ দেশের অভ্যন্তরগামী হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর শিরোইলস্থ ঢাকা বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে টিকিট না পাওয়ায় হতাশায় পড়েছে অনেকেই । ঈদ উদযাপন শেষে নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে সংশয়। তবে,বাস কর্তৃপক্ষের দাবি ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে টানা এক সপ্তাহের টিকেট আগাম বিক্রি হওয়ায় এ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
টিকিট নেই, টিকিট আছে’ এমন নাটকের কবলে পড়া সাধারণ যাত্রীরা জানান, কাউন্টারগুলোতে টিকিট না পাওয়া গেলেও এর ঠিক বাইরেই বেশি দামে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় একটি কালোবাজারি চক্রসহ বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
হানিফ কাউন্টারের পাশে কথা হয় গোদাগাড়ী থেকে আসা মানিক সরকার সঙ্গে।পাশে দাঁড়িয়ে এক কালোবাজারি টিকিট বিক্রেতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন লিজা বেগম ও কামরুন নাহার নামের দুই মহিলা যাত্রী। তারা দু’জনই ঈদের ৬ষ্ঠ দিনে ঢাকায় ফেরার জন্য টিকিট নিতে এসেছিলেন। কিন্তু টিকিট না পেয়ে হতাশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কায়েদুল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার আগে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছাতে না পারলে হয়ত চাকরি হারাতে হবে। অন্যদিকে মানিক সরকার অভিযোগ করেন, প্রতিবারই কালোবাজারিদের ছাড়া টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে পারেননি। এবারও হয়ত সেই একই অবস্থা হবে। এ সময় তিনি কালোবাজারিদের টিকিট ব্যবসা বন্ধসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে রাতুল হাসান ও কফিল নামের দুজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী জানান, তারা দু’জন ২২০০ টাকা দিয়ে নেন এসি বাসের ২টি টিকিট নিয়েছেন।অথচ টিকিট দুটির দাম ১৪২০ টাক।
দেশ ট্টাভেলস কাউন্টারে জানা গেছে, ঈদের আগেই ঈদ পরবর্তী যাত্রার আট-দশ দিনের টিকিট বিক্রি হয়েছে গেছে। অনেকেই সিট বুকিং দিয়ে রেখেছেন। এ কারণে তারা যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সিটের টিকিট দিতে পারছেন না। বিশেষ করে এক সপ্তাহের কোনো টিকিট তাদের হাতে নেই বলেও জানান সেখানে কাউন্টারে থাকা লোকজন।
তবে, বাইরের চিত্র আলাদা। কাউন্টারে টিকিট না মিললেও বাইরে কালোবাজারিসহ ওই কাউন্টারের কলার বয়দের বাড়তি টাকা দিলেই মিলছে টিকিট। এ চিত্র শুধু দেশ ট্টাভেলস
পরিবহনে নয়, বাস স্ট্যান্ডের প্রতিটি কাউন্টারে টিকিট নিয়ে এমন লুকোচুরি চলছে। যা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই।
কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা অনেক চেষ্টা করে দ্বিগুণ দামেও টিকিট পাচ্ছেন না। কাউন্টার থেকে দেখানো হচ্ছে অনলাইনের অযুহাত। টিকিট সব নাকি বিক্রি হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় কে কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছাবে, এ নিয়ে কিছুই বুঝতে পারছেন না তারা।
রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুর রহমান সাজু বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মোটর মালিক সমিতির সহযোগিতায় যাত্রীদের সেবা সুন্দরভাবে দেওয়া হচ্ছে। আগামী শনি-রোববার পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ থাকবে।
অন্যদিকে বাসের টিকিটের মতো আগুন লেগেছে ট্রেনের টিকিটেও। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনেরও টিকিট মিলছে না। শুধু তাই নয়, শিডিউল বিপর্যয় নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে যাত্রীদের। যেন ঈদের আগে পরে যাত্রী সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে বিভাগ।
রাজশাহী রেলস্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানেও খোঁজ নেই ঈদ পরবর্তী ৭ দিনের টিকিটের। সাধারণ যাত্রীরা ধরনা দিয়ে টিকিট না পেলেও সামান্য হায় হ্যালোতে টিকিট পাচ্ছে প্রভাবশালী নামিদামি মানুষেরা।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বাসের টিকিটের মতো ট্রেনের টিকিটও কালোবাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ট্রেনের যাত্রীরা বলছেন, টিকিট নিয়ে সব জায়গাতেই এখন বাণিজ্যের মহোৎসব শুরু হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।
পশ্চিম রেলের মহা ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, কালোবাজারিদের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ছাড় নেই। আমরা কোনো অভিযোগ পেলে যাচাই-বাছাই করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।