বিদ্যুৎ ব্যবহার হ্রাস ও যানজট লাঘবের লক্ষ্যে সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস এবং ব্যাংকের সময়সূচি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সময়সূচি চালু হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরে সময়সূচি নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২৪ আগস্ট বুধবার থেকে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। অফিস সময় রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। শুক্রবার ও শনিবার-সাপ্তাহিক ছুটি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জরুরি পরিষেবাসমূহ নতুন অফিস সময়সূচির আওতাবহির্ভূত থাকবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সময়সূচি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ বিভাগ নির্ধারণ করবে। ব্যাংক, বীমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দাফতরিক সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাকে কিভাবে আরো ইফেক্টিভ করা যায় এই মুহূর্তে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইনস্ট্যান্টলি তো বাড়ানো সম্ভব হবে না। সে জন্য আলোচনা হয়েছে কতগুলো। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বেসরকারি অফিসের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে, সব সরকারি অফিসে কোথাও পর্দা টাঙানো থাকবে না। এগুলো তুলে লাইট যতসম্ভব কম লাগলে যতটুকু চলবে এবং এয়ারকুলারও যথাসম্ভব কম ব্যবহার করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এসব সিদ্ধান্তের কারণে দুটি সুবিধা হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, একটা হলো বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, আরেকটা হলো ট্রাফিক জ্যামটাও কমবে। এসব সিদ্ধান্ত কি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয় তো হবেই। দেখা যাক, পরবর্তী অবস্থা উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত চলুক। সাথে সাথে ট্রাফিক জ্যামটাও একটা ডিস্টিবিউট হয়ে যাবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব ব্যাংক-কোম্পানির লেনদেনের সময়সূচি হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এ ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রম শেষ করে বিকেল ৫টার মধ্যেই সবাইকে অফিস ত্যাগ করতে হবে।
শুক্র -শনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ : অবশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন কার্যকর হচ্ছে। আজ বুধবার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দু’দিন বন্ধ থাকবে। তবে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্মসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) মো: আহসান কবীর। গতকাল সোমবার বিকেলে এ কথা জানান তিনি।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দু’দিন ছুটির বিষয়ে আলোচনা চলছিল। জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে এর আগেই গত মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বলে আসছিল, যেহেতু করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ ছিল তাই এখনই আবার সাপ্তাহিক ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে তারা আগ্রহী না। তবে শেষ পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয়ের কারণেই সরকারের উচ্চমহল থেকে সিদ্ধান্ত আসায় বাধ্য হয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
গত মাসের ৭ তারিখ বিদ্যুৎসাশ্রয়ে আলোকসজ্জা না করার নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমল, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জা না করার নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে জুলাই মাসের ১৯ তারিখ থেকে সারা দেশে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে গতকাল ঘোষণা এলেও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মেডিক্যাল কলেজগুলোতে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্মসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) মো: আহসান কবীর বলেন, ‘মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত যখন চিঠি আকারে আমাদের কাছে দেয়া হবে, তখন আমরা এর আলোকে ব্যবস্থা নেবো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা লিখিত কোনো নির্দেশনা না পাবো, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ব্যাপারে আমরা কিছুই বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা: আবু ইউসুফ ফকির বলেন, মেডিক্যাল কলেজে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি হতে পারে। তবে হাসপাতাল তো সপ্তাহে দুই দিন বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। মেডিক্যালের পড়াশোনা কোয়ালিটি পর্যায়ের। আন্তর্জাতিক কারিকুলামের সাথে সমন্বয়ের বিষয় আছে। এসব দিক বিবেচনা করলে মেডিক্যালে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন কার্যকর হবে বলে মনে হয় না। এটা অনেক কারণেই সম্ভব না। এর সাথে শিক্ষকরা যুক্ত। তাদের রাউন্ড থাকে। সে কারণে দুই দিন ছুটি সম্ভব হবে না। ডিজি অফিসে দুই দিন বন্ধ। কিন্তু হাসপাতালে এই নিয়ম নেই। একইভাবে মেডিক্যাল কলেজে এখনো সপ্তাহে এক দিন বন্ধ।