নিজস্ব প্রতিবেদক: পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরে মহাৎসবে চলছে নানা অনিয়ম দূর্নীতির। দপ্তরের অনিয়ম দূর্নীতি এখন সবার মুখে মুখে। খোদ দপ্তরটির প্রধানের বিরুদ্ধেও একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি রেলে কর্মরত এক নারীর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ ও একই রকম পোশাকে ঘুরতে দেখে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে রেল অঙ্গনে। তবে ওই নারী ও চীফের ঘটনায় পশ্চিমাঞ্চল রেল অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে তারা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা চক্রে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যদিও এবিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে আছেন তারা উভয়ে। এর আগেও একজন ঢাকার নারী ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছিলেন সিএমই। ওই ঘটনায় নানা অনিয়মসহ অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার কথা প্রচার হয় রেল ভবনে। ওই ঘটনা ধামাচাপা হলেও এবারের ঘটনায় রেল ভবন যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। অনেকেই অনেকভাবে ওই নারী বিষয়টি দেখলেও পশ্চিমাঞ্চল কতৃপক্ষ বলছে বিষয়টি ব্যক্তিগত।
সম্প্রতি দপ্তরটিতে ৪৭৩ জন আউটসোর্সিং নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ মাধ্যমে চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুদরত ই খুদা ও ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা উক্ত আউট সোর্সিং নিয়োগের অর্থ বানিজ্যের মূলহোতা বলা হয়। ওই ঘটনায় অর্থ লেনদেন হয় উক্ত অফিসের বড় বাবু আসরাফ হাত দিয়ে।
চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার টেন্ডার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্সিং নিয়োগ দিলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর পছন্দের লোকজনকেই অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেন। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আউটসোর্সিং এর নিয়োগ টেন্ডার পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ৪৭৩ জনকে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে উক্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আউটসোর্সিং নিয়োগের টেন্ডারের শর্ত ভঙ্গ করে অনেক পুরাতন কর্মীদের বাদ দিয়ে নতুন লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন অনেকেই পুরাতন বলে অফিস থেকে প্রত্যায়ন দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী, লালমনিরহাট, পাকশী, সৈয়দপুরের অধিনে লোকো, ক্যারেজ, ডিএস(ডব্লিউ) পদে ৪৭৩ জন আউটসোর্সিং লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৬ টি প্যাকেজে ৬ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উক্ত নিয়োগের কাজ পায়। ৬ টি প্রতিষ্ঠান হলো মর্ডাণ এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ, জাকি এন্টারপ্রাইজ, জান্নাত এন্টারপ্রাইজ, এইচ এন্ড এইচ এন্টারপ্রাইজ, শাহ আমানত এন্টারপ্রাইজ।
নিয়োগ কাজগুলো পেয়েও চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের মোটা অংকের উৎকোচ দিতে হয়েছে বলেও একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন। অভিযোগ আছে দপ্তরটি প্রধান কুদরত-ই-খুদা প্রতিটি ঠিকাদারি কাজে ১০% কমিশন নিয়েছেন। তাঁর পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পেতে ইজিপিতে সহযোগিতাও করেন তিনি। দপ্তরটির বড় বড় কাজেও নানা অনিয়ম হয়েছে। অনিয়ম দূর্নীতির ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হওয়া দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুদরত-ই-খুদা রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় স্বজনপ্রীতি ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। রাজশাহী ওয়াসফিডে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট
মেশিনটিও এখন অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট করা হয়েছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট করে নিজেদের পকেট পুরেছেন তাঁরা।
চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে আউটসোর্সিং নিয়োগে পাকশী ডিভিশনের ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মমতাজ উদ্দিন তাঁর ডিভিশনে অনেকজনকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪টি লটে কাজ দেন। পান্না’র প্রতিষ্ঠান জামান এন্টারপ্রাইজ কাজ পায় তিনটি। জাকি এন্টারপ্রাইজের খসরু পায় ১ টি। উক্ত ৪ লটে নিয়োগ পাওয়া প্রতিজনকে দিতে হয়েছে অর্থ। এমনকি ঠিকাদারকে পুরাতন আউটসোর্সিং এর তালিকায় নতুনদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ আছে।
রেলের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পেয়েও মাত্র ২ জন লোক নিয়োগ দিতে পেরেছেন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাকী সব লোক নিয়োগ দেন চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও তাঁর অফিসের লোকজন। প্রায় ৪৭৩ জন লোক নিয়োগে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা বানিজ্য হয়েছে বলেও সুত্রটি নিশ্চিত করেছেন।
বাদ পড়া পুরাতন আউটসোর্সিং কর্মীরা জানান, নতুন হোক পুরাতন হোক নিয়োগ পেতে সবাইকেই টাকা দিতে হয়েছে। নতুনদের দিতে হয়েছে এক থেকে দুই লাখ টাকা।
পুরাতনরা দিয়েছে ৫০ হাজার করে। টাকা দিতে না পারায় অনেক পুরাতন অভিজ্ঞ কর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগের পূর্বশর্ত ছিলো পুরাতনরা অভিজ্ঞতার অগ্রাধিকার বলে আগে নিয়োগ পাবেন। কিন্তু সেই শর্ত টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। পুরাতনদের বাদ দিয়ে নতুনদের কেনো নেওয়া হলো সেই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
রেলের অপর আরেকটি বিশ্বাস্ত সুত্র জানান, অফিসারদের অর্থ প্রদান অন্যদিকে ঠিকাদারকে কাজের কমিশনসহ এককালীন (সিকিউরিটি ছাড়া) অর্থ দিতে হয়েছে ভুক্তভোগী আউটসোর্সিং এ নিয়োগ প্রাপ্তদের।
রেলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একটি সুত্র বলেন, পশ্চিম চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরে মহাৎসবে কমিশন বানিজ্যে ঠিকাদারি কাজ হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ। অফিসারদের পারসেন্ট অনুযায়ী কমিশন দিতে গিয়ে ঠিকাদার পড়ছে বিপাকে। কাজগুলো হচ্ছে নিম্নমানের। প্রতিটি কাজের তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বজনপ্রীতি ও কমিশন বানিজ্যে প্রতিটি কাজই নিম্নমানের হয়েছে।
জানতে চাইলে ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পাকশী) মমতাজ উদ্দিন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব নিয়োগ টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার তাদের বিধিমতে দিয়েছেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। শুধু পুরাতনদের তালিকা আমরা দিয়েছি। তাও সেটা করেছে সিএমই পশ্চিম মহোদয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুদরত ই খুদা বলেন, সব কিছু নিয়ম মাফিক নিয়োগ হয়েছে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নাই। আপনি পারলে অফিসে আসেন বিস্তারিত আরও বলা যাবে। পরে অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নারী ঘটিত ঘটনায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পশ্চিম অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। নারী ঘটিত ঘটনাটি তাঁর ব্যক্তিগত। সিএমই’র বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন একজন বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিতে পারি না। আউটসোর্সিং এর ব্যাপারে তিনি বলেন ঠিকাদার মোট অর্থের ৫% কমিশন পাবেন। বাকী টাকা কর্মীরা পাবেন। ঠিকাদারের তালিকা অনুযায়ী লোক নিয়োগ হবে। পুরাতন আর নতুনের কোনো বিষয় নাই।