নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের টানা খরতাপ যেন দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। প্রায় একমাস ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর ওপর দিয়ে।
এমন খরা মৌসুম এর আগে কখনও দেখেনি এ অঞ্চলের মানুষ। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই থেকেছে।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতি যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। বাড়তে বাড়তে গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এরপর বুধবার (১ মে) তা নেমে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আসে। আর বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি করে নিচে নামলেও গরমের দাপট কমেনি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃষ্টির জন্য চারিদিকে হাঁহাকাঁর পড়ে গেছে। প্রচণ্ড খরতাপে প্রাণ-প্রকৃতি যেন হাপিয়ে উঠেছে। দুর্বিষহ এ গরম থেকে স্বস্তি পেতে আজও বৃষ্টির আশায় রাজশাহীতে ধুমধাম করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বরের নাম রাখা হয়েছিল শিমুল এবং কনের মেঘলা।
বুধবার (১ মে) থেকেই প্রতীকী এ বিয়ের আয়োজন শুরু হয় রাজশাহীর পবা উপজেলার ভুগরইল পশ্চিম আদিবাসীপাড়ায়। এ গ্রামের আদী বাসিন্দারা পাহাড়ি গোষ্ঠীর। নিজস্ব রীতিনীতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাঙের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
গ্রামের একমাত্র চার্চের শিক্ষক আঞ্জলী বিশ্বাসসহ কয়েকজন এ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেন। এজন্য গতকাল বুধবার বিকেলে তারা গ্রামের একটি পুকুরপাড় থেকে একটি ছেলে ব্যাঙ ও একটি মেয়ে ব্যাঙ ধরে আনেন। সন্ধ্যা নামার পর ওই গ্রামের চার্চে সাজানো ছাদনাতলায় বর ও কনের গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
এ বিয়েতে বরের নাম রাখা হয় শিমুল। আর কনের নাম মেঘলা বিশ্বাস। গায়ে হলুদের পর কনেকে রাখা হয়েছিল গ্রামের আলফন্স বিশ্বাসের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের নারী ও শিশু-কিশোরীরা ধুমধাম করে নেচে-গেয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। এরপর সবাই লাইন ধরে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের আশীর্বাদ নিয়ে বরযাত্রী হিসেবে বর নিয়ে রওয়ানা দেয়।
আর সঙ্গে যান বরের প্রতীকী বাবা সৈকত বিশ্বাস আর প্রতীকী মা ভাবনা বিশ্বাস নামের দুই শিশু। আলফন্স বিশ্বাসের বাড়ি গেলে বরের বাবা-মায়ের পা ধুইয়ে দেওয়া হয় পানি দিয়ে। তারপর সবাই বাড়িতে কনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
আর কনে সাজানো শেষ হলে আঞ্জলী বিশ্বাস পুরোহিত সেজে বর-কনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। এরপর বর শিমুলের হাত দিয়ে কনে মেঘলার মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়।
এর পর কী? খাওয়া-দাওয়ার পর শেষ হয় প্রতীকী এ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। পরে বর-কনেকে একটি পুকুরের ভেতর ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ প্রতীকী বিয়ের আয়োজক অঞ্জলী বিশ্বাস জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে রাজশাহী। টানা খরায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এতে আম ও লিচুসহ সব ফসলেরই মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পশুপাখি ও অন্যান্য প্রাণী কষ্ট পাচ্ছে পানির অভাবে। তাদের পূর্বপুরুষরা অনাবৃষ্টির সময় ব্যাঙের বিয়ে দিয়েছেন। তাই পূর্বপুরুষদের রীতি অনুযায়ী তারাও ব্যাঙের বিয়ে দিলেন।
ব্যাঙের সঙ্গে ব্যাঙের বিয়ে দিলে অনাবৃষ্টি কেটে যাবে এমন বিশ্বাস থেকেই তারা এ প্রতীকী বিয়ের আয়োজন করেছিলেন। তাদের সামাজিক রীতিনীতিতেই ঘটা করে দেওয়া হয় দুই কোলা ব্যাঙের বিয়ে।