নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর থানার ঝালুকা মোজাই একটি ৬ একর ৮.৩৩ শতক পুকুরের লিজ চুক্তি নামার স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে রেজাউল নামক এক ব্যক্তি দখলের চেষ্টা করে এবং দুর্গাপুর থানা বাধ্য হয়ে সেই পুকুরে ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপরও রেজাউল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ১৪৪ ধারা অমান্য করে সেই পুকুরে মাছ চুরি করতে যেয়ে জেল হাজত পর্যন্ত যায় তবুও থামানো যায় না এই রেজাউলকে।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে জানা যায়, সর্বপ্রথম পুকুরটির কিছু ভিটা ও কিছু ধানী জমি ছিল। সেই জমি গুলোর মালিক বিভিন্ন ব্যক্তি । তাদের থেকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে রেজাউল জমিটি তার নামে করে ২০০৭ অথবা ৮ সালে ঢাকা থেকে ভেকু নিয়ে এসে পুকুরটি খনন করে। জমিগুলো ভিটা ও ধানি জমি থাকায় জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে পুকুর খনন করে ধানি জমিকে পুকুরে পরিণত করে রেজাউল।
এরপর তিনি সেই পুকুরে মাছ চাষ করেন কিন্তু যেই ব্যক্তিগুলোর থেকে পুকুর নিজের নামে করে তাদেরকে সম্পূর্ণ টাকা বুঝিয়ে না দিয়েই সম্পূর্ণ জায়গাটি নিজের দখলে নিয়ে নেয়। পরে কৃষকদের বলেন আমি ব্যাংক থেকে লোন নিবো সেই লোনের টাকায় মাছ চাষ না করে আপনাদের ঋণ আমি পরিশোধ করব। লোন পাওয়ার পরেও সব কৃষককে তাদের সমস্ত দেনা পাওনা না বুঝিয়ে কিছু কিছু ব্যক্তিকে কিছু কিছু করে টাকা দিয়ে পুকুর ভোগ করতে থাকে রেজাউল। এরপর সেই পুকুরটি দুই কোটি ১০ লক্ষ টাকায় সানোয়ার নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন রেজাউল । ক্রয় সূত্রে সানোয়ার পুকুরের মালিক হলেও সানোয়ারকে ভুলভাল বুঝিয়ে সেই পুকুর দেখাশোনার দায়িত্ব নেয় এই রেজাউল। শুধু তাই নই রাতের আঁধারে মাছ চুরি করে সেই মাছের টাকায় মদ ও নারীর নেশায় মগ্ন রেজাউল ও তার ম্যানেজার।
সানোয়ার যখন নিজের পুকুর কারো কাছে লিজ না নিয়ে নিজের পুকুরে মাছ ছেড়ে আড়াই লক্ষ টাকা লোকসান খায় তখন সে বুঝতে পারে রেজাউলের জালিয়াতি। লোকসান খেয়ে বাধ্য হয়ে সেই পুকুরটি রমজান নামের এক ব্যক্তির কাছে বন্ধক রাখতে বাধ্য হয় সানোয়ার। এরপর সানোয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করে সময়মতো বন্ধক ছুটিয়ে মাসুদ হাজী নামের এক ব্যক্তির নিকট সেই পুকুরটি ৩ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করে।
পুকুরটি যখন মাসুদ হাজি কিনে নেয় তখন রেজাউল ব্যাকুল হয়ে পড়ে সেই পুকুরটি কিভাবে দখল করা যায় । রেজাউল তার ম্যানেজারকে সাথে নিয়ে ও কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ফোনদি আঁকতে শুরু করে পুকুর দখলের।
রেজাউল সর্ব প্রথম একটি স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে যেখানে উল্লেখ আছে তিনি ৬ বছরের জন্য সেই পুকুরটি সানোয়ারের কাছ থেকে লিজে নিয়েছিল। তার লিখিত সম্পত্তি তার হিসাব না বুঝিয়ে কিভাবে সানোয়ার মাসুদ হাজির কাছে বিক্রয় করে। সেই জাল স্ট্যাম্পে তিন ব্যক্তির সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে ১. মোঃ আনিসুর রহমান, পিতা: আব্দুল , ২ . মোহাম্মদ জিয়ারুল , পিতা: মৃত আহাদ আলী , ৩. মোঃ ইউনুস আলী, পিতা-মৃত নূর মোহাম্মদ। শুধু এখানেই থেমে যায়নি রেজাউল। মাসুদ হাজির নিজের টাকার ছাড়া মাছ রাতের আঁধারে চুরি করতে যেয়ে মহাযুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলে রেজাউল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। বাধ্য হয়ে দুর্গাপুর থানা সেই পুকুরটিতে ১৪৪ ধারা জারি করে রাখে।
এলাকাবাসী জানান, প্রথমে রেজাউল পুকুর চাষ করত এরপর বিক্রি করে দেওয়ার পরও দেখাশোনা রেজাউলই করত। তারপর প্রায় দুই বছরের মত সেই পুকুরে রমজান কে চাষ করতে দেখা যায় এরপর মাসুদ ভাই পুকুর চাষ করে সেই পুকুরে মাসুদ ভাইয়ের একজন গার্ড পাহারা দেওয়ার জন্য থাকে। রেজাউল পুকুর যদি নিজে লিজ নিতো তাহলে তার কোন লোক তো অবশ্যই থাকতো পুকুর পাহারা দেওয়ার জন্য। রেজাউল শুধুই পুকুর নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে তা নয় তিনি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েও সেই লোন ঠিকমতো পরিশোধ করতে চাইনা সময়ের পর সময় নিয়ে যায়। ব্যাংক থেকে লোন নিয়েও কিস্তিতে ট্রাক কিনে সেই ট্রাকের টাকাও এখন পর্যন্ত পরিষদ করে না। রেজাউল ও তার ম্যানেজার তাদের মাছের আরৎ এ রাতের অন্ধকারে নারী নিয়ে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরনের নেশা হয় এই আরৎ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সানোয়ার জানান, ক্রয় সূত্রে পুকুরের মালিক আমি আমার পুকুর আমি কাউকে লিজ দেই নাই। সেটা টাকার জন্য আমি বন্ধক রেখেছিলাম পরে সেই বন্ধক ছুটিয়ে আমি মাসুদ হাজির নিকট পুকুরটি বিক্রয় করে দিই। আমি কখনোই রেজাউলকে পুকুর লিজে দেই নাই সে জাল স্ট্যাম্প বানিয়ে আমার পুকুর দখলের চেষ্টা করছে। এবিষয়ে আমি মামলা করেছিলাম সেটি পিবিআই এ তদন্তাধীন রয়েছে। তাকে আমি এক সময় আমার পুকুর দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তখনো সে আমার পুকুরের মাছ চুরি করে সেই টাকায় নেশা করে টাকা নষ্ট করেছে।
উলেক্ষ্য সানোয়ার এর কথা মতে গুরুত্ব ভাবে সেই স্ট্যাম্পটি দেখলে ১ নম্বর আর ২ নম্বর সাক্ষীর হাতের লেখা এক রকম বোঝা যায় ।
এই বিষয়ে জানতে রেজাউলকে ফোন দিয়ে পুকুর লিজের স্ট্যাম্পে সাক্ষীগণের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন ১ নম্বর সাক্ষী তার ভাই ২ ও ৩ নম্বর সাক্ষী তার এলাকাবাসী। সাক্ষীগণের ফোন নম্বর চাওয়ায় তিনি প্রথমে পরের দিন নম্বর দিবে সেই কথা জানায়। তার কিছুক্ষণ পরে তিনি জানিয়ে দেয় আপনাদের যা কিছু দরকার সাহস থাকলে আমার সামনে এসে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে মাসুদ হাজির কাছে ফোন দিলে তিনি জানান, ৭ থেকে ৮ মাস আগে তিনি ৩ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা দিয়ে পুকুরটি ক্রয় করেন সেই পুকুরের কাগজ খতিয়ান রেজিস্ট্রি তে আরও ২৬ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা খরচ করেন। এরপর তিনি সেই পুকুরে মাছ ছাড়েন এবং একটি নাইট গার্ড রাখেন। পুকুর ক্রয়ের পরে পুকুরে আমি সাইনবোর্ড লাগাই সেই সাইনবোর্ডটি তিন থেকে চারবার উচ্ছেদ করে ফেলে রেজাউল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। নিজের ক্রয় করা পুকুর নিজে চাষ করতে না পেরে আমি তখন আইনের আশ্রয় নেই।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, এই পুকুরে ১৪৪ ধারা জারি ছিল তবুও মাছ চুরির এবং মাস্তানির অভিযোগ পেয়েছিলাম তখন আমি যেয়ে রেজাউল ও তার বাহিনীকে তুলে এনে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। এছাড়াও থানাতে রেজাউলের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগও রয়েছে।