নিউজ ডেস্ক: সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনাকে সামনে রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন। বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ বলছেন, এ বাজেট জনগণের কল্যাণের বাজেট। আবার কেউ বলছেন, এ বাজেটে ধনী-গরিব বৈষম্য বাড়বে। গরিব ও মধ্যবিত্তের হাহাকার আরও বাড়বে। এ বাজেট অতি উচ্চাভিলাষী।
শুক্রবার (৭ জুন) বাজেট বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম জয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের মানুষ। প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। প্রতিদিনই বাড়ছে ধনী-গরিবের বৈষম্য। যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে ধনী-গরিব বৈষম্য বাড়বে। গরিব আরও গরিব হবে, ধনী আরও ধনী হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে থাকলে প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে নেই সরকারের কোনো কার্যকারী উদ্যোগ। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। এর মাঝে লড়াই করে জীবনযুদ্ধে টিকে আছি। দুই বছর আগে এক কেজি ইলিশ কিনে খেয়েছিলাম। বাচ্চারা গরুর মাংস খেতে চাইলেও কিনে খাওয়াতে পারিনি। বাচ্চাদের বলেছি, কোরবানির সময় ভালো মাংস পাওয়া যায়, তখন সবাই মিলে খাবো।
কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্ত ও অল্প আয়ের মানুষের জন্য কোনো সুসংবাদ নেই। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য বাজেটে কার্যকারী কোনো পদক্ষেপ নেই। এ বাজেট জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে। দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধ করতে বাজেটে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেই। এই বাজেট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের কষ্ট আরো বাড়াবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আলি আসিব আবির বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। এ বাজেট মেগা বাজেট। এ বাজেট জনগণের বাজেট, মানবতার বাজেট, মানুষের অধিকার ও কল্যাণের বাজেট। এ বাজেটের মাধ্যমে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
রাজধানীর রায়েরবাগের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। এ সঙ্কটের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গণমুখী বাজেট ঘোষণা করেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও এ বাজেট ভূমিকা রাখবে। বাস্তবসম্মত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বড় হলেও মোটেও তা উচ্চাভিলাষী নয়। এটি জনবন্ধব বাজেট। বাজেটে গরিব ও মধ্যবিত্তদের বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অপচয় ও দুর্নীতির হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায় আসীন। শত ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অপরাজেয় প্রত্যয়ে বাংলাদেশ বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখার দৃপ্ত অঙ্গীকারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সাজানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত বাংলার মানুষ আজ সরকারের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার সাহসী যোদ্ধা, উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং অভ্যন্তরীণ সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব খাতের যুগোপযোগী সংস্কার এবং সেই লক্ষ্যে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, কর নেট বৃদ্ধি, করবহির্ভূত রাজস্ব আদায় এবং প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।