November 24, 2024, 10:40 pm

News Headline :
সীমাহীন দূর্নীতির পরও বহাল তবিয়তে মোহনপুরের ইউএনও আয়শা সিদ্দিকা রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি যুবদল নেতা রবি’র পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে কোথাও স্থাপনা করতে না পেরে শেষমেস ভাঙারির দোকানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ: নাছিম রাজশাহীতে আলু ও তেলের দাম বাড়তি রাজশাহীতে ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বললো মহানগর ছাত্রদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে খালেদা জিয়ার মতবিনিময় দেশের সকল ক্ষমতার মালিক হবেন জনগণ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
রাজশাহীতে ট্রাকে ভরে ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে বন্দিদের খাবার

রাজশাহীতে ট্রাকে ভরে ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে বন্দিদের খাবার

নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা এক হাজার ৪৬০ জন। অথচ হাজতি ও কয়েদি মিলে মোট বন্দি রয়েছে ৩ হাজার ২৭৮ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি বাস করছে এ কারাগারে। ফলে খুবই কষ্টেসৃষ্টে থাকতে হচ্ছে বন্দিদের। এমতাবস্থায় গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ। অধিকাংশ বন্দিই দুর্গন্ধযুক্ত ও মানহীন এসব খাবার মুখে তুলতে পারছেন না। ফলে প্রতিদিনই বন্দিদের জন্য রান্না করা ভাত-তরকারির একটি বড় অংশ উচ্ছিষ্ট থেকে যাচ্ছে। ট্রাকে ভর্তি করে এসব খাবার ফেলে দেওয়া হচ্ছে ভাগাড়ে। থাকার কষ্ট, খাওয়ার কষ্ট- সব মিলিয়ে বন্দিরা এক দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে আছেন।

একটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাকে বোঝাই করে ভাত ও তরকারি ফেলে দেওয়া হচ্ছে নগরীর সিটিহাট এলাকার ভাগাড়ে। বন্দিদের স্বজনের অভিযোগ, কারাভ্যন্তরে প্রতিদিন রান্না হওয়া ভাত-তরকারি যারপরনাই নিম্নমানের হওয়ায় বন্দিরা খেতে পারেন না। যেসব বন্দির পরিবার থেকে টাকা আসে, তারা কারা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খান। আর যাদের টাকা আসে না, তারা অর্ধভুক্ত-অভুক্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা এক বন্দির স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কারাগারে বর্তমানে খাবার খুবই নিম্নমানের। প্রতিদিন এসব খাবার খেয়ে একজন বন্দির বেঁচে থাকাই কঠিন। একাধিক বন্দির স্বজন জানান, কারাগারে বন্দিদের জন্য তিনবেলা যে পরিমাণ খাবার সরকারি বরাদ্দ থাকে, সে অনুযায়ী তাদের খাবার দেওয়া হয় না। সবচেয়ে বড় অভিযোগ খাবারের মান নিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা বন্দিদের চার শ্রেণিতে ভাগ করে তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন খাবার ও খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করা রয়েছে। কারা-বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রেণির বন্দিদের তিনবেলা খাবার দিতে হবে। সকালে দিনের কাজ শুরুর আগে, দুপুরে ও বিকালে লকআপে নেওয়ার আগে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। বন্দির শ্রেণিভেদে সকালের নাশতায় থাকার কথা রুটি অথবা পাউরুটি, চিনি, গুড়, ডাল, দুধ, জেলি, ডিম, ঘি অথবা মাখন, কলা ও চা। সব বন্দি এসব খাবার পান না। অন্যদিকে দুপুরের খাবারে থাকার কথা ভাত অথবা রুটি, মাছ-মাংস, শাক-সবজি ও ডাল। রাতের বেলা ভাত অথবা রুটি, মাছ অথবা মাংস, শাক-সবজি ও ডাল দেওয়ার নিয়ম রয়েছে বন্দিদের ডায়েট চার্টে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ডায়েট চার্ট বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, সকালের নাশতায় ১১৬ দশমিক ৬৪ গ্রাম পাউরুটি, ৮৭ দশমিক ৪৮ গ্রাম রুটি, ১৪৫ দশমিক ৮ গ্রাম ডাল, ২৯১ দশমিক ৬ গ্রাম সবজি, ৪৩ দশমিক ৭৪ গ্রাম তেল, ১১৬ দশমিক ৬৪ গ্রাম আলু, ৪৩ দশমিক ৭৪ গ্রাম পেঁয়াজ, ২ দশমিক শূন্য ৫ গ্রাম শুকনো মরিচ, ১ দশমিক শূন্য ২ গ্রাম হলুদ, শূন্য দশমিক ৫১ গ্রাম ধনিয়া, ৩২ দশমিক ৮ গ্রাম লবণ, ৭ দশমিক ২৯ গ্রাম মসলা, ১৪ দশমিক ৫৮ গ্রাম চা, ৫৮ দশমিক ৩২ গ্রাম চিনি, ১৪ দশমিক ৫৮ গ্রাম গুঁড়ো দুধ, ২১ দশমিক ৮৭ গ্রাম মাখন, ১৪ দশমিক ৫৮ গ্রাম জেলি ও ১৪ দশমিক ৫৮ গ্রাম গুড় বরাদ্দ থাকে। বন্দিপ্রতি এ পরিমাণ বরাদ্দ তিনবেলার জন্য। তবে বন্দির শ্রেণিভাগ অনুযায়ী তাদের একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন খাবার দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণ বন্দিদের কখনো মাখন বা দুধ দেওয়া হয় না। তবে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি হলে তাকে ঘি, মাখন, জেলি, দুধ ও চা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে আদালতগামী বন্দিদের জন্য দুপুরের আহারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১০০ গ্রাম ওজনের পাউরুটি, ১টি সিদ্ধ ডিম, একটি ২৫০ এমএল পানির বোতল। যদিও অভিযোগ রয়েছে, আদালতগামী বন্দিদের এসব খাবার কখনোই দেওয়া হয় না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্দিদের স্বজনরা আদালত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় দুপুরের খাবার সরবরাহ করেন।

মুক্তিপ্রাপ্ত একাধিক বন্দির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডায়েট চার্টের বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী কখনো কোনো খাবার দেওয়া হয় না। যারা মোটা টাকা দিয়ে কারা হাসপাতালে থাকার সুযোগ পেয়ে যান, তাদের কিছু ভালো খাবার সরবরাহ করা হয়। রাজনৈতিক মামলায় প্রায় ১৩ মাস রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা এক বন্দি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কারাগারে চালের মান এতটাই নিম্নমানের যে, একান্ত নিরুপায় না হলে কেউ মুখে তুলতে চান না। তরকারিতে তেল-মসলা প্রায় থাকে না বললেই চলে। রান্না ডাল পানির মতো এবং ডালে বাজে দুর্গন্ধ থাকে। রুটি, পাউরুটি ও কলার আকার খুবই ছোট। রুটির সঙ্গে দেওয়া গুড়ও খাওয়ার উপযুক্ত নয়। ভাতে কালো দানা ভর্তি। কখনো কখনো পাথরও মেলে। আর এ কারণেই রাত শেষে কারা কর্তৃপক্ষ উদ্বৃত্ত ভাত ও তরকারি ট্রাকে করে ভাগাড়ে ফেলে আসে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, কারাগারে রান্না করা খাবার বন্দিদের মাঝে বিতরণের আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মান পরীক্ষা করে দেখার নিয়ম রয়েছে। রান্নার গুণ-মান ঠিক থাকলে বন্দিদের খেতে দেওয়ার কথা। কিন্তু রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাবারের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারণে প্রতিদিন রান্না করা বিপুল পরিমাণ ভাত ও তরকারির অপচয় হচ্ছে।

কারা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি ও কয়েদি (সাজাপ্রাপ্ত) মিলে মোট ৩ হাজার ২৭৮ বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে হাজতি এক হাজার ৮১৪ পুরুষ ও ৯৮ জন মহিলা। আর কয়েদি পুরুষের সংখ্যা এক হাজার ৯৮ ও মহিলা ৬৫ জন। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পুরুষ কয়েদি ১৯২ ও মহিলা কয়েদি ১০ জন। বর্তমানে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি মাত্র একজন। এ কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা এক হাজার ৪৬০ জন। বর্তমানে কারাগারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত এক হাজার ৮১৮ জন বন্দি আছেন। এ কারাগারে হাজতী ও কয়েদি মায়ের সঙ্গে ৪৩টি শিশুও রয়েছে। এখানে মোট ২৪ জন বিদেশি বন্দি আছেন। যাদের মধ্যে ১৯ জন ভারতীয়, ৩ জন বেলারুশের ও ২ জন মায়ানমারের নাগরিক।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, কারাগারে তিন হাজারের বেশি বন্দি রয়েছেন। তাদের জন্য বিপুল পরিমাণ খাবার রান্না হয়। কিছু অবশিষ্ট থাকাই স্বাভাবিক। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়।

খাবারের মান খারাপের জন্য হাজতি-কয়েদিরা খেতে পারছে না। এ কারণেই বিস্তর পরিমান ভাত-তরকারি প্রতিদিনই ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

প্রতিদিন রান্না করা ভাত ও তরকারি ভাগাড়ে ফেলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিআইজি প্রিজন্স কামাল হোসেন বলেন, সরকারি রেশনের চাল দিয়েই কারাগারে রান্না করা হয়। তবে অনেকেই এ চালের ভাত খান না। টাকা দিয়ে দামি চালের ভাত খান। এ কারণে কারাগারের ভাত উচ্ছিষ্ট হয়ে যায়। তবে এগুলো বাইরে যাওয়ার কথা নয়, উচ্ছিষ্ট ভাত থেকে কারাগারের ভেতরেই কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.