তানোর প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোরে গৃষ্মকালীন আন্ত স্কুল ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে চাপড়া স্কুল ও সরনজাই স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচুর মারপিট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারপিটে মারাত্মক আহত হন সরনজাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল্লাহ। এঘটনায় ছাত্রের পিতা সোহেল রানা সুষ্ঠ বিচার চেয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। এরপরও কোন গুরুত্ব না দেওয়ায় সরনজাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে ক্লাস বর্জনসহ বিক্ষোভ মিছিল পর্যন্ত করেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার তানোর পৌর সদর শেখ রাসেল মিনি স্ট্যাডিয়ামে ঘটে লোম হর্ষক মারপিটের ঘটনাটি। অবশ্য গত রবিবার উভয় স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ডেকে আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন চাপড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান।
তিনি জানান, খেলাধুলায় হারজিত থাকবে, তাই বলে মারামারি করবে এটা ঠিক না। এমনকি আমার স্কুলের কয়েকজন ছাত্র আব্দুল্লাহ কে বুট দিয়ে ব্যাপক লাথি মারায় সে মারাত্মক আহত। কি হবে বলা যাচ্ছেনা। মারপিট করা প্রায় ছাত্ররা এসএসসি পরিক্ষা দিবে। রবিবার সবাই বসে আহত ছাত্রের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক ভাবে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হচ্ছে। কি শিক্ষা দিলাম।
অভিযোগে উল্লেখ, চলতি মাসের ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেলে গ্রীষ্মকালীন ফুটবল খেলায় অংশ নেয় তানোর পৌর এলাকার চাপড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও সরনজাই ইউপির সরনজাই উচ্চ বিদ্যালয়। খেলায় চাপড়া স্কুলকে ২-০ গোলে পরাজিত করে সরনজাই স্কুল। শুরু হয় কথা কাটাকাটিসহ একে অন্যকে লিঙ্গ পর্যন্ত দেখানো হয়। এসময় সরনজাই স্কুলের ছাত্র আব্দুল্লাহ হাই কাফি ডাকবাংলোর ভিতরে খেলার ব্যাগ নিতে আসলে চাপড়া স্কুলের আট দশজন ছাত্র কাঠ ও বাশের উপর ফেলে বুট দিয়ে বুকে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথাড়ি ভাবে খুচেন ও লাথি মারতে থাকেন। সেখানে উপস্হিত শিক্ষক সহপাঠিরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে যায়।
আহত ছাত্রের পিতা সোহেল রানা কাঁদতে কাঁদতে বলেন ওই দিন রাত্রি ১০ টার দিকে ছেলের অবস্হা চরম খারাপ হয়ে পড়ে। রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। কিন্তু অবস্হার কোন উন্নতি না হওয়ায় পরদিন মঙ্লবার কর্তব্যরত চিকিৎসক রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন। সেখানে বিভিন্ন সিটি স্ক্যান ও এক্সেসহ নানা রকম টেষ্ট করে দেখা যায় কলার বনে ফাটল ও বুকের ৩ নং কাঠিতে ফাটল এবং মাথার পিছনে রক্ত জমে আছে।
গত ৮ তারিখে রামেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে রিলিজ দিয়ে বলেন ১৫ দিন পর পুনরায় সিটি স্ক্যান করতে হবে। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল সেনা বাহিনীতে চাকুরী করার। কিন্তু এক ঘটনায় সবকিছু শেষ হয়ে গেল। জানিনা আমার ছেলের ভাগ্যে কি লিখা আছে।
সরনজাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান জানান, এসবের জন্য দায় কর্তৃপক্ষ। একটা ছেলেকে আট দশজন মিলে বুট দিয়ে খুচতে আছেন। একটা ছেলের জীবন বরবাদ হয়ে যাচ্ছে, তার পরিবারের অবস্হাও ভালো না। দেখা যাক কি হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান জানান, আমার তো মনে হচ্ছে যারা এমন নেক্কার ঘটনার সাথে জড়িত তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া উচিৎ। তারা কি শিক্ষলো, এটাই কি শিক্ষা, সহপাঠীকে অমানুবিক ভাবে মারা। কেউ বুঝতে পারেনি ঘটনা। কারন ডাকবাংলোর ভিতরে ঘটনা, আর আমরা মন্চে ছিলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, অত্যান্ত বেদনাদায়ক ঘটনা, আমি মাধ্যমিক অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিতে বলেছি এবং আহত শিক্ষার্থীকে দেখভাল করা হবে।