May 21, 2025, 5:14 pm

News Headline :
রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব প্রীতি ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত রাজশাহী নার্সিং কলেজে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০ রাজশাহী জেলা গণধিকার পরিষদের নতুন কমিটি অনুমোদন স্বামীকে মিথ্যা বিস্ফোরক মামলাতে ফাঁসানোর অভিযোগে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন রাসিক সাবেক মেয়র লিটনের এপিএস টিটু গ্রেফতার রাজশাহীতে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছোট ভাইয়ের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ রাজশাহীতে পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে মারা গেলেন সাবেক কাউন্সিলর রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, সাংবাদিক মহলে নিন্দার ঝড় রাজশাহীতে তীব্র গরমে পথচারীর পাশে মহানগর বিএনপি লিটন ও তার স্ত্রী সন্তানের বিরুদ্ধে দুদকের ৩টি মামলা দায়ের
রাজশাহীতে ছাত্রদের উপর হামলার নেতৃত্বদাতা যুবলীগ নেতা রনি

রাজশাহীতে ছাত্রদের উপর হামলার নেতৃত্বদাতা যুবলীগ নেতা রনি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেষের ২ দিন ৪ ও ৫ আগষ্ট সশস্ত্রভাবে নির্বিচারে ছাত্রদের উপর হামলা ও অস্ত্রের মহড়া চালিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ততকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশে যারা অস্ত্রের মহড়া দিয়েছিলো তাদের নেতৃত্ব দাতাদের অন্যতম ছিলেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি। তিনি ছাত্র আন্দোলন দমাতে তার ক্যাডার বাহিনীকে প্রকাশ্যে পিস্তল, রামদা, চাপাতি ও হকিস্টিকসহ বিভিন্ন দেশিও অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামান এবং তিনি নিজেও তাদের মাঝে থেকে নেতৃত্ব দেন।

গত ৪ আগস্ট দুপুরে নগরীর দড়িখরবনা মোড় থেকে তৌরিদ আল মাসুদ রনির নেতৃত্বে দুই থেকে তিন’শ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি সশস্ত্র মিছিল বের হয়। মিছিলটি রেলগেটে গিয়ে সমাবেশ করে। সেই মিছিলে রাসিকের কয়েকজন কাউন্সিলরও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দেখা যায়, কারো হাতে বড় বড় হাসুয়া আবার কারো হাতে চাপাতি, কারো হাতে বোমা ভর্তি ব্যাগ। এসব নিয়ে প্রকাশ্যেই তারা মিছিলে অংশ নেন। মিছিলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অস্ত্রের মহড়া দেখে আশে পাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। তাদের মধ্যে কাউকে পথের ধারে ও বিল্ডিংএর ছাদে যারা ছিলেন তাদেরকে অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখাতে দেখা গেছে। মিছিলটি রেলগেটে গিয়ে অস্ত্রধারীরা সমাবেশে মিলিত হয় এবং সেখানে সাবেক মেয়র লিটন অস্ত্রধারী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।

৫ আগস্টেও যুবলীগ নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনির নেতৃত্বে যুবলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র হাতে ছাত্রদের উপর হামলে পড়ে। শেখ হাসিনার পতনের ১ ঘন্টা আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা মিছিল নিয়ে তালাইমারি থেকে সাহেব বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে মিছিলটি শাহ মখদুম কলেজের সামনে আসলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা শুরু করে। এক দিক থেকে পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে অন্যদিক থেকে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাও মুহু মুহু গুলি, হাতবোমা ছুড়তে থাকে। সেই মিছিলেও আলুপর্টিতে হামলাকারীদের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে যুবলীগ নেতা রনিকে। দেখা গেছে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে কর্মীদের হামলা করার জন্য উতসাহ দিচ্ছেন। সেই মিছিলে আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও পুলিশের গুলিতে ছাত্র আন্দোলনের ২ জন ছাত্র নিহত হয়েছিলো। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিব আনজুম ৫ আগস্ট ও রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থী শিবির নেতা আলী রায়হান গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন থেকে পরে মারা যান। ৫ আগস্টের সংঘর্ষের ঘটনায় যুবলীগ নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায়। এই হত্যা মামলার আসামি রনি এখন আত্নগোপনে রয়েছে। এখনও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

তৌরিদ আল মাসুদ রনি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আশীর্বাদে ও মেয়রের সাথে পারিবারিক সক্ষতার কারনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিপুল পরিমান উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি করে বিত্ত সম্পদের মালিক হয়েছে। সেই টাকা ছাত্র আন্দোলন দমাতে দুই হাতে খরচ করেছে রনি। রনির বিরুদ্ধে বিরোধী দল দমনেও বিপুল অর্থ খরচ করতেন বলে জানা গেছে।

নগরীর দড়িখরবনা মোড়ে রনির ব্যয়সায়িক চেম্বার আর সেই সূত্র ধরে সেখানে একটি আস্থানা গোড়ে তোলেন এই নেতা। সখানেও কর্মীদের ভিড় বাড়াতে টাকা ঢালতেন তিনি। সেখানে ক্যারাম সহ বিভিন্ন জুয়ার আসর বসতো বলে দলীয় কর্মীদের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

রনি যুবলীগ নেতা হলেও সেখানে যাতায়াত ছিলো অল্প বয়সী ছেলেদের। ফেনসিডিল ও মাদকের টাকার জন্য অনেকেই তার চেম্বারে যাতায়াত করতো বলে জানা গেছে। রনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর মিছিলের মতো কোন কর্মসূচির আয়োজন করলে অল্প বয়সী ছেলেদেরকেই তার সাথে দেখা যেতো। টোকায়ের মতো কিছু ছেলে রনির চারপাশে সব সময় অবস্থান নিয়ে থাকতো এবং তাদেরকেই ছাত্র আন্দোলন দমাতে যুবলীগ নেতা রনির অস্ত্রধারী বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে।

৫ আগস্টে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরে ছাত্র হত্যার অপরাধে যুবলীগ নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনি সহ রাজশাহীর আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে হত্যা সহ বিভিন্ন মামলা হয়। সেসব মামলায় এখনও রনি সহ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি এস. এম মাসুদ পারভেজ দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, হত্যা মামলা সহ এখন পর্যন্ত যতগুলো মামলা হয়েছে সেগুলোতে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এগুলো এখন যাঁচাই বাঁছাই করা হচ্ছে। আসামিরা আত্মগোপনে থাকায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

ads

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.