স্ত্রী হত্যা মামলায় রাজশাহী মহানগরের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ নুরুল ইসলাম (৬৩) কে গ্রেফতার করেছে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
মায়ের মৃত্যুতে বাবার বিরুদ্ধে ছেলের করা মামলায় রাজশাহীতে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম (৬১)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আদালত ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারেও পাঠিয়েছে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে আরএমপির চন্দ্রিমা থানা পুলিশ চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পরে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৩০ মে নিজ বাসায় ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা ইসলামের লাশ উদ্ধার করে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ। ওই ঘটনার পর নুরুল ইসলাম দম্পতির ছেলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী নাফিস ইসলাম তার বাবার বিরুদ্ধে মাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ করেন। শুরুতে থানা তার অভিযোগ আমলে না নেয়ায় গত ৪ সেপ্টেম্বর মায়ের সুইসাইড নোট ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টসহ ফেসবুকে বাবার বিরুদ্ধে পোস্ট দেন তিনি।
এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর নাফিসের অভিযোগ আমলে নেয় চন্দ্রিমা থানা। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নিজ বাসভবনের সামনে থেকে নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে নুরুল ইসলামের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নুরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। সর্বশেষ অতিরিক্ত উপকমিশনার হিসেবে রাজশাহী মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার দায়িত্বে ছিলেন। দুই বছর আগে অবসরে যান। নুরুল ইসলাম দম্পতির এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। নুরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা আক্তারের বাবার বাড়ি রংপুরে। পুলিশে চাকরিকালীন নুরুল ইসলাম রংপুর শহরে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি করেন শ্বশুরের নামে। শ্বশুর কিছু দিন আগে মারা যান। তবে শ্বশুরের মৃত্যুর পর এসব সম্পত্তি আর ফিরে পাননি নুরুল ইসলাম। এসব নিয়ে নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তারের মধ্যে চরম কলহ বিবাদ চলছিল।
এদিকে নুরুল ইসলাম অবসর নিয়ে চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার ৪নং সড়কে একটি চারতলাবিশিষ্ট দুই ইউনিট বাড়ি নির্মাণ করেন। এই বাড়িটি নুরুল ইসলাম আগেই তার স্ত্রীর নামে লিখে দিয়েছিলেন। স¤প্রতি স্বামীকে না জানিয়ে স্ত্রী নাজমা আক্তার তার ছেলে ও মেয়ের নামে নুরুল ইসলামের শেষ সম্পদ এ বাড়িটি লিখে দেন। এ নিয়ে শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নতুন বিরোধ। গত ৩০ মে নুরুল ইসলাম স্ত্রী নাজমা আক্তারের ঝগড়া-বিবাদ শুরু হলে স্ত্রীকে মারধর করেন।
পরে নুরুল ইসলাম বাড়ি থেকে বের হয়ে মেয়ের বাসা নগরীর মহিষবাথানে যান। বিকালে মেয়ের বাড়ি থেকে ফিরে এসে তিনতলার একটি কক্ষে স্ত্রী নাজমা আক্তারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন। চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরান আলী জানিয়েছেন, নুরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর আদালতে নেয়া হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাফিস ইসলাম এর দাবি, তার মা নাজমা ইসলাম আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রচার করা হলেও বিষয়টি আত্মহত্যা নয়। কারণ তার মায়ের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। বাবার অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে। সেই নারীকে বিয়ে করতেই মাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রায়ই মারধর ও মানসিকভাবে চাপে রাখতেন। মা সব সহ্য করে সংসার করে গেছেন।