নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর তাঁর শেষ কর্মদিবসের একদিন আগে ২৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। গত মে মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সাড়ে চার হাজারের বেশি আবেদনপত্র পড়েই ছিল। গত ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র তিন দিনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। পরদিন বদলি হন ড. হুমায়ূন। এর আগে ২৬ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাঁর বদলির আদেশ হয়।
চাকরি না পাওয়া কেউ কেউ বলছেন, শেষ মূহুর্তে অনেকটা ঝড়ের গতিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। একদিনের মধ্যে সাড়ে চার হাজারের বেশি প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষার খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। যদিও বিভাগীয় প্রশাসন বলছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ার সবকিছুই যথাযথভাবে হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ১৩ মে ১০টি পদে ২৯ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৪ জন, অফিস সহায়ক পদে ছয়জন, ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর পদে দুজন এবং উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষক, ডেসপাস রাইডার, নিরাপত্তা প্রহরী, মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে একজন করে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকলেও পরে উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার দুটি পদ বাকি রেখে অন্য ২৭ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এসব পদে চাকরি পেতে মোট ৪ হাজার ৬৭১ জন আবেদন করেছিলেন। গত ১৪ নভেম্বর তাদের কাছে পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাঠানো হয়। এতে পরীক্ষা কেন্দ্র এবং পরীক্ষা গ্রহণের সময়ও জানিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২৯ নভেম্বর প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষা শেষে সেদিনই এর মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়। এর পরদিনই হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর পদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয় রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় পরদিন ১ ডিসেম্বর। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার পরই চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের তালিকায় স্বাক্ষর করেন বিভাগীয় কমিশনার এবং বিভাগীয় নির্বাচনি বোর্ডের সভাপতি ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এতে তিনি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (সার্বিক) এদের অনূকুলে নিয়োগপত্র ইস্যু করার নির্দেশনা দেন।
হিসাবরক্ষক পদে আব্দুল হাকিম, ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর পদে ইমরান খান ও আসাদুল হক; অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে তাজুল ইসলাম সোহাগ, মেহেরাব-এ আরাফাত, আব্দুর রহমান, কাওসার রেজা, আলমগীর হোসেন, রাজু আহমেদ, রাকিব হোসাইন, রায়হান আলী, মোজাহারুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, রাকিব সরকার, বুলবুল হাসান ডলার, বায়োজিদ আলী ও তানভীর আহমেদ; অফিস সহায়ক পদে সজিব হোসেন, রুবিনা খাতুন, নাঈম তালুকদার, হাসান আলী, সেলিম হোসেন ও আলতাব হোসেন; ডেসপাস রাইডার পদে ইউসুফ আলী, নিরাপত্তা প্রহরী পদে আরিফুল ইসলাম, মালী পদে ইউসুফ আলী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে শিবা বাবুর চাকরি হয়েছে।
চাকরি না পাওয়া এক পরীক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে উত্তরভূমিকে বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদনপত্র অনেক দিন পড়েই ছিল। হঠাৎ তড়িঘড়ি করে লিখিত, প্র্যাকটিকাল ও ভাইভা নিয়ে তিন দিনের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন, সাড়ে চার হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার খাতা একদিনেই কীভাবে দেখা হয়ে গেল! খাতা যথাযথভাবে দেখা হয়েছে কি না সেটা নিয়েই আমাদের সংশয় আছে।’
গত ২৬ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুনায়ূন কবীরের বদলির আদেশ হয়। তিন দিনের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষের পরদিন সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিভাগীয় নির্বাচনি বোর্ডের সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বদলি হয়ে যান। তাই তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। এই নির্বাচনি বোর্ডের সদস্য সচিব ছিলেন বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব (সিনিয়র সহকারী সচিব) আরাফাত আমান আজিজ।
তিনি বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তড়িঘড়ি করে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এমনটি নয়। সাধারণভাবেই যতটুকু সময় লাগে, সেটাই লেগেছে। এখনও কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা বাকি আছে। তড়িঘড়ি করলে বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার সেগুলোও শেষ করতেন।’