July 5, 2025, 4:31 pm

News Headline :
রাজশাহী প্রেসক্লাবের কথিত সভাপতি ‘জুলু’ সেনা অভিযানে গ্রেফতার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটিতে আওয়ামীলীগের দোসরদের অপসারনের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান রাজশাহী প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হলেন গোলাম মোস্তফা মামুন রাজশাহীতে প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা দলের নেতাকে লাথি, এনসিপির রাজশাহীর যুগ্ম সমন্বয়কারীকে অব্যাহতি রথ মেলায় এবার যুবদল সদস্য সুইটের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ বরিশালে রিক্সা চালকদের মাঝে ছাত্রনেতা মাসুম’র রেইনকোর্ট বিতরণ বিভাজন নয়, সাংবাদিকতা হোক একতার হাতিয়ার রাজশাহীর তাহেরপুরে এক শিশুকে গণধর্ষণ
 আ.লীগের হুন্ডি মুকুলের পাশে এখন বিএনপি

 আ.লীগের হুন্ডি মুকুলের পাশে এখন বিএনপি

নিউজ ডেস্ক: একদশক আগেও পাড়ায় মুদি দোকান চালিয়ে সংসার চালাতেন মুখলেসুর রহমান মুকুল। এখন তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। রাজশাহীতে তিনি পরিচিত ‘হুন্ডি মুকুল’ নামে। এতদিন তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকেছেন। তাদের বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এখন বিএনপি ও যুবদলের কিছু নেতা মুকুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে খোদ দলের পক্ষ থেকেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

আওয়ামী জমানায় প্রভাব খাটিয়ে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নে দুটি বালুমহাল ইজারা পান হুন্ডি মুকুল। সেই বালুমহালের ‘মধু খেতে’ এখন বিএনপি ও যুবদলের জেলা এবং মহানগরের কয়েকজন নেতা হুন্ডি মুকুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মাটিকাটা ইউনিয়ন বিএনপি। তারা বালুমহাল বন্ধের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।

কে এই মুকুল

মুখলেসুর রহমান মুকুলের বাড়ি রাজশাহী নগরের কাঁঠালবাড়িয়া গোবিন্দপুর মহল্লায়। তার বাবার নাম ওয়াজি মন্ডল। ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে আইজিপির কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। ‘হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হওয়া প্রসঙ্গে বিশেষ প্রতিবেদন’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে হুন্ডি কারবারিদের তালিকা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই তালিকার রাজশাহীর সিন্ডিকেট প্রধান ও মূলহোতা অংশে ২ নম্বরে ছিল মুকুলের নাম। ২০১৮ সালের ওই প্রতিবেদনেও মুকুলকে মুদি দোকানের ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক দশক আগে পাড়ার মহল্লায় মুদি দোকান চালিয়ে সংসার চালাতেন মুকুল। ওই দোকানে বসেই তিনি বাংলাদেশী টাকা নিতেন। আর ভারতে মুকুলের লোকজন বিনিময়ে ভারতীয় রুপি দিতেন। এভাবে তিনি জড়িয়ে যান হুন্ডি কারবারে। হুন্ডি মুকুল মাধ্যম হয়ে ওই টাকা পরে চট্টগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতেন ভারতে।

তাঁর সঙ্গে ভারতের অন্যতম চোরাকারবারি এনামুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এনামুলের বিপুল টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতের ইডি একসময় নগদ টাকা উদ্ধারে অভিযান শুরু করলে এনামুল বিপুল পরিমাণ ভারতীয় রুপি পাঠিয়ে দেন মুকুলের কাছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্ধেক রুপি এনামুলকে ফেরত দেন মুকুল। আর বাকিটা মেরে দেন। পরে কয়েকদফা ভারতীয় লোকজন মুকুলকে খুঁজতেও এসেছিল রাজশাহী। কিন্তু তারা মুকুলের নাগাল পায়নি। এনামুলের মেরে দেওয়া বিপুল রুপি নিয়ে বিলাসী জীবন শুরু করেন রাজশাহীর মুকুল।

মুকুলের এখন অনেক সম্পদ

রাজশাহী ও ঢাকায় মুকুলের এখন চারটি বাড়ি। এ ছাড়া কাশিয়াডাঙ্গায় আছে সাততলা বাণিজ্যিক ভবন। আছে দুটি দামি গাড়ি এবং অন্তত ৪০ বিঘা জমি। এর মধ্যে শহরেই জমি আছে অন্তত ২০ বিঘা। এই জমির আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজশাহী সিটিহাট গরুর হাটেও আছে মুকুলের বড় অঙ্কের শেয়ার। দেশের বাইরে সৌদি আরবেও মুকুলের হোটেল ব্যবসার কথা শোনা যায়। মক্কা ও মদিনায় মুকুলের দুটি হোটেল আছে বলে ঘনিষ্ঠরা জানেন। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ পেলে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন মুকুল। এরপর এলাকায় ফিরলেও ৫ আগস্টের পর আবারও গা-ঢাকা দিয়েছেন।

মাথার ছাতা ছিলেন লিটন-আসাদ

হুন্ডি মুকুলের মাথার ছাতা হয়ে উঠেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ। তারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসন মুকুলের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি।

মুকুল তার কালো টাকা সাদা করতেন ঠিকাদারী ব্যবসায় নাম লিখিয়ে। অন্য ঠিকাদারদের টেক্কা দিয়ে অস্বাভাবিক বেশি দরে কাজ নিতেন তিনি। সাবেক মেয়র লিটনের আশীর্বাদে বেশি কাজ পেতেন সিটি করপোরেশনের। কাজে লোকসান হলেও দেখাতেন লাভের হিসাব। এভাবেই কালো টাকা সাদা করতেন মুকুল। বিপুল আয় দেখিয়ে আয়করও দিতেন। বেশি টাকা আয়কর দেওয়ায় ‘সুনাগরিক’ হিসেবে গতবছর মুকুলকে সম্মাননা দেয় কর অঞ্চল, রাজশাহী।

আগে আড়ালে সম্পর্ক বজায় রাখলেও গত জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদের পাশে প্রকাশ্যেই দেখা যায় মুকুলকে। ভোটের প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আসাদের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করেন মুকুল। শুধু তা-ই নয়, ভোটের প্রচারণার শুরু থেকেই আসাদকে মুকুলের দেড় কোটি টাকা দামের একটি গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা যায়। আসাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও এই গাড়িটি ব্যবহার করতেন।

আসাদ এমপি হওয়ার পর হুন্ডি মুকুল আসাদের দুই ভাই মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক ও জেলা যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক রফিকুজ্জামান রফিককে সঙ্গে নিয়ে গোদাগাড়ীর দুটি বালুমহাল বাগিয়ে নেন নিজের মুন এন্টারপ্রাইজের নামে। আওয়ামী সরকারের পতনের পর মুকুল, রফিক ও শফিক লাপাত্তা। বালুমহাল চালাচ্ছেন মুকুলের ভাই বাবু ও ভাতিজা সাজিম। বালুমহাল নিয়ে কয়েকদিন ধরে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে মুকুলের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। হোয়াটসঅ্যাপেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মুকুলের পাশে এখন বিএনপি

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হুন্ডি মুকুলের প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু কাজ করছিল। এরমধ্যে পদ্মা নদীর বাঁধে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ব্রিজ নির্মাণ, সিঅ্যান্ডবি মোড়ে ৫ কোটি ২ লাখ টাকায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ, ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় রাজশাহী জজ কোর্টের সীমানা প্রাচীর, ড্রেন, কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ, ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় কেশবপুর দক্ষিণপাড়া, কোর্ট স্টেশন পূর্ব ও পশ্চিমের তিনটি জলাশয় সৌন্দর্যবর্ধণ, ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় মাদ্রাসা, স্কুল ও বুলনপুরের পুকুর সংস্কার, ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিসি রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ, ১১ কোটি ১৮ লাখ টাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েল সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ বেশকিছু কাজ করছিলেন মুকুল।

এরমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল তুলেছেন। ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অন্য কাজগুলোরও প্রায় অর্ধেক বিল তুলেছেন। অসমাপ্ত কাজগুলো এখন মহানগরের এক বিএনপি নেতা করতে চান। তিনি সিটি করপোরেশনকে তা জানিয়েছেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত এক প্রকৌশলী নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, সম্প্রতি মিলু নামের এক ব্যক্তি নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে জানিয়েছেন, মুকুল পলাতক থাকায় তার কাজগুলো তিনি করবেন। মুকুল তাকে কাজের দায়িত্ব দিচ্ছেন।

বালুমহালেও বিএনপি-যুবদল

হুন্ডি মুকুল শেখেরপাড়া ও ফুলতলা এলাকার দুটি বালুমহাল ইজারা নিলেও এতদিন ক্ষমতার দাপটে বিদিরপুর এলাকায় অবৈধভাবে আরেকটি ঘাট খুলে পদ্মা নদী থেকে বালু তুলতেন। বালুর জন্য ইজারা হলেও নদী তীরের মাটি কেটে বিক্রি করতেন ইটভাটায়। এতে আশপাশের গ্রাম হুমকির মুখে পড়লেও প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না স্থানীয়রা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নিয়ে এর প্রতিবাদ শুরু করেন গ্রামবাসী। কিন্তু বিপত্তি বেধে যায় তখন, যখন জেলা ও মহানগরের কয়েকজন নেতা এই বালুমহালের পক্ষে অবস্থান নেন।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালুমহালে অবৈধভাবে মাটি কাটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসী কয়েকদফা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। উপজেলা সদরে মানববন্ধনও করেন। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় গ্রামবাসী বালুমহাল বন্ধ করে দিয়েছেন।

এসব আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আহসানুল কবির টুকু ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুদ্দিন টমাস। এর জের ধরে গত ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহীর আদালত এলাকায় মারধরের শিকার হন ছাত্রদল নেতা সাইফুদ্দিন টমাস। মুকুলের ভাতিজা সাজিম ও জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল সরকার ডিকোর নেতৃত্বে দুদফা হামলা হয় তার ওপর। সেদিন থেকেই টমাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

শনিবার দুপুরে টমাস মুঠোফোনে বলেন, ‘শুধু ডিকো একা না; জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন বিএনপি নেতা আমাদের চাপ দিচ্ছেন যে বালুমহালের এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করা যাবে না। ডিকো তো স্বশরীরে আমার ওপর হামলা করেছেন।’

টমাস জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতার নাম জানিয়ে বলেন, ‘তিনি ফোন করে বলছেন মুকুল তার আত্মীয়। বালুমহালের কোন অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করা যাবে না। তাকে ব্যবসা করতে দিতে হবে।’

টমাস বলেন, ‘আত্মীয়-টাত্মীয় কিছু না। তারা আসলে বালুমহালের মধু খেতে চান।’

জানতে চাইলে যুবদল নেতা ডিকো বলেন, ‘যারা বালুমহাল বন্ধ করতে চায়, তারা আসলে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদা না দেওয়ার কারণে টমাস বালুমহাল বন্ধ করে দিয়েছে। তাই কোর্ট চত্বরে পেয়ে লোকজন তাকে মারছিল, আমি গিয়ে তাকে রক্ষা করেছি। আমি মারিনি।’

রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘মুকুল যে সন্ত্রাসী লোক, আওয়ামী লীগের লোক- এটা আমরা জানি। ডিসি অফিসে তার পক্ষে কথা বলার জন্য আমাকে ধরেছিল, আমি বলিনি। তারেক রহমানের নির্দেশ- কোন আওয়ামী লীগের লোকের পক্ষে দাঁড়ানো যাবে না।

তিনি বলেন, ‘হয়তোবা দু’একজন তার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। এটা হতে পারে, অস্বাভাবিক নয়। কোন রকমের কার্যক্রমে যদি আমাদের লোক জড়িত হয়, তাহলে দল ব্যবস্থা নেবে। ডিকো কেন টমাসকে মেরেছে, সেটা নিয়ে আমি এখনই তার সঙ্গে কথা বলব।’সূত্র আজকের পত্রিকা

Please Share This Post in Your Social Media

ads

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.