নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে এক নারী চিকিৎসককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় তার মাকে দেয়ালে মাথা ঠুকে আহত করা হয়েছে। নারী চিকিৎসকের সঙ্গে তার বাবাকেও তুলে নেওয়া হয়েছিল। পথে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা এলাকায় তাকে ফেলে গেছে অপহরণকারীরা।
সোমবার ভোরে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে। অপহৃত চিকিৎসকের নাম শাকিরা তাসনিম দোলা (২৬)। তিনি রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে সবেমাত্র ডেন্টাল বিডিএস শেষ করেছেন। তার বাবা আবু তাহের খুরশিদ বকুল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
বকুল তার পরিবার নিয়ে নগরের চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় থাকেন। পাঁচতলা বাসার দ্বিতীয় তলায় তারা থাকেন। সোমবার ভোরে এই বাসা থেকেই বাবা-মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিকাল সাড়ে ৩টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় নারী চিকিৎসকের বাবা সলঙ্গা থানায় পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। আর বাবা-মেয়েকে তুলে নেওয়ার সময় দেয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়ায় আহত শাকিরার মা রেহেনা পারভীন ওরফে শিউলি (৫১) গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালেই কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য তার স্বামী মসজিদে যান। এ সময় তিনি বাইরের ফটকে তালা লাগিয়ে চাবি সঙ্গে নিয়ে যান। তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অপহরণকারীরা তার স্বামীকে জিম্মি করে। তারা চাবি নিয়ে এসে বাইরের ফটক খুলে ভেতরে ঢোকে।
এ সময় অপহরণকারীরা তাকে ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে দেয়। মাথায় তালা দিয়ে আঘাত করে। এরপর তারা তাকে বিছানায় ফেলে গলা চেপে ধরেন। তিনি পড়ে গেলে বাবা-মেয়েকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। অপহরণকারীরা চলে যাওয়ার পর খবর পেয়ে রেহিনা পারভীনের আত্মীয়-স্বজন এসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রেহেনা পারভীন জানান, তার স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মাইক্রোবাসে চালকসহ অপহরণকারীরা ছয়জন ছিলেন। তাকে তোলার পরেই মুখ বেঁধে ইনজেকশন পুশ করা হয়। তার চেতনা ফিরে এলে তাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।
সলঙ্গা থানায় যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শফিউল ইসলাম বলেন, বেলা ১২টার দিকে সলঙ্গা থানার ভেংড়ি এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। একই মাইক্রোবাসে বাবা ও মেয়েকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে এসেছিল। তারা মেয়েকে নিয়ে গেছে। রাজশাহী থেকে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন এসেছে। তাদের কাছে ভিকটিমকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে রাজশাহীতে মামলা হবে।
রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান জানান, অপহরণের মূলহোতা হিসেবে তারা তানভীর খান তাজ রওশন আলম নামের একজনের নাম পেয়েছেন। কেউ বলছেন, এই ছেলের সঙ্গে নারী চিকিৎসকের বিয়ে হয়েছিল। কেউ বলছেন, বিয়ে হয়নি। তার নেতৃত্বেই ওই চিকিৎসককে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে পরিবার বলছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওই চিকিৎসকের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় পরিবার মামলা করতে চায়। এজাহার দিলে মামলা রেকর্ড করা হবে।’