May 18, 2025, 6:02 pm

News Headline :
রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব প্রীতি ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত রাজশাহী নার্সিং কলেজে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০ রাজশাহী জেলা গণধিকার পরিষদের নতুন কমিটি অনুমোদন স্বামীকে মিথ্যা বিস্ফোরক মামলাতে ফাঁসানোর অভিযোগে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন রাসিক সাবেক মেয়র লিটনের এপিএস টিটু গ্রেফতার রাজশাহীতে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছোট ভাইয়ের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ রাজশাহীতে পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে মারা গেলেন সাবেক কাউন্সিলর রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, সাংবাদিক মহলে নিন্দার ঝড় রাজশাহীতে তীব্র গরমে পথচারীর পাশে মহানগর বিএনপি লিটন ও তার স্ত্রী সন্তানের বিরুদ্ধে দুদকের ৩টি মামলা দায়ের
পোষ্য কোটা বাতিলের পর নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি (রাবি) ভিসি

পোষ্য কোটা বাতিলের পর নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি (রাবি) ভিসি

নিউজ ডেস্ক: পোষ্য কোটা বাতিলের পর নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা যে প্রক্রিয়ায় দাবি আদায় করেছেন, তা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘অপমানজনক’ বলছেন অনেকেই। এই কারণ দেখিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

আবার পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীরা। তারা সবাই মিলে আবার একটা আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন। কর্মবিরতিও শুরু করতে পারেন তারা। এ অবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন গণঅভ্যুত্থানের পর উপাচার্যের (ভিসি) চেয়ারে বসা অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব।

এবার ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই গত ৩১ অক্টোবর পোষ্য কোটা বাতিলসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর পোষ্য কোটা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ রাখা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। ফলে ১ জানুয়ারি পোষ্য কোটা ১ শতাংশ ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। এই কোটা শিক্ষক-কর্মকর্তার সন্তানেরা নয়, শুধু সাধারণ কর্মচারীর সন্তানেরা পাবেন বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সেটিও মানেননি শিক্ষার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার সকালে দুই উপ-উপাচার্যসহ প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী যখন প্রশাসন ভবনের নিজ নিজ দপ্তরে, তখন শিক্ষার্থীরা তালা দেন প্রধান ফটকে। দিনভর তাদের আটকে রাখা হয়। পরে উপাচার্য ভেতরে প্রবেশ করেন। রাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি ঘোষণা দেন, পোষ্য কোটা আর থাকছে না। একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি বিলুপ্ত হবে। এরপর ফটকের তালা খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিজয় মিছিল বের করেন। আর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর ‘জিম্মিদশা’ থেকে মুক্তি পেয়ে প্রশাসন ভবন থেকে বের হন সবাই।

পোষ্য কোটাবিরোধী এই আন্দোলনে শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার, যিনি নিজেই একটি কোটার শক্তিতে ভর্তি হন বলছেন শিক্ষকেরা। ফলে তার কার্যক্রম ‘মেনে নেওয়ার মতো নয়’ উল্লেখ করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক সাইফুল ইসলাম, যিনি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উপাচার্যের পছন্দে এই পদে আসীন হয়েছেন।

অধ্যাপক সাইফুল ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি কখনোই পদলোভী নই। মাননীয় ভিসি স্যারের একান্ত ইচ্ছায় আমাকে রাবির আইসিটি সেন্টারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাও ভেবেচিন্তে, অনেকদিন পর। পোষ্যকোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল রাবিতে যা ঘটে গেল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।’

তিনি লেখেন, ‘দুই শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে (যাদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ ছিলো) সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে বহিরাগতদের দ্বারা টানা ১২ ঘণ্টা খাঁচায় আবদ্ধ করে জিম্মি করে রাখা হলো। যে কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দাবি মানতে বাধ্য করা হলো, প্রশাসনের একজন হিসেবে এই অপমান অপদস্তকে আমি মেনে নিতে পারছি না। আমি এর প্রতিবাদে আইসিটি পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি।’

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে অফিসিয়ালি পদত্যাগপত্র প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি আরও লেখেন, ‘গত দুই মাস যাবৎ আম্মারের মতো গুটিকয়েক ছাত্র অব্যাহতভাবে অছাত্রশুলভ রাবির শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের ফ্যামিলি নিয়ে অশালীন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও কর্মসূচি পালন করে আসছে তা কোনক্রমেই মেনে নেওয়ার মত না। আমি শিক্ষক হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং এর ন্যায্য বিচার দাবি করছি।’

এই স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে সালাহউদ্দিন আম্মার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি এমন ছাত্র যে শিক্ষকদের অপ্রিয় থেকে এমন শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দিতে চাই, যেখানে আপনারা হাজার হাজার প্রিয় ছাত্র পেয়ে যাবেন। আমি গোলামী করা পছন্দ করি না, আর কেউ ভুল করলে তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেও বিন্দু পরিমাণ পিছপা হই না।’

আম্মার ওই পোস্টে আইসিটি সেন্টারের বিরুদ্ধে তার ‘পার্সোনাল ডকুমেন্টস’ ফাঁস করারও অভিযোগ তোলেন। কী ডকুমেন্টস ফাঁস করা হয়েছে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘তিনি আমার ভর্তি সংক্রান্ত একটা ডকুমেন্ট ফাঁস করেছেন। এক মিটিংয়ে তিনি বলেছেন, “তোমার মেরিট পজিশন ছিল ১৩৮৯, আইএস কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছো।” একই কথা লিখে ওই ডকুমেন্টস একটা ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়। আমার ওটা তো কোটা নয়। ইসলামিক স্টাডিজে ভর্তি হতে হলে, ব্যাকগ্রাউন্ড মাদ্রাসা থাকলে ভাল- বিষয়টা ওরকমই ছিল।’

ভিসির সামনে কি নতুন চ্যালেঞ্জ?

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সম্মুখসারিতেই থাকতেন অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। অভ্যুত্থানের পর তিনি ভিসি হন। এরপর পোষ্য কোটা ইস্যুতে সেই ‘সহযোদ্ধা ছাত্রদেরই’ বিরোধিতার মুখে পড়েন তিনি। শুনতে হয়েছে নানা ধরনের স্লোগান। তাদের দাবির মুখে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে রাতে তিনি যখন প্রশাসন ভবন থেকে বেরিয়ে বাসভবনের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখনও শুনতে হয় ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান। এ সময় অত্যন্ত বিমর্ষ অধ্যাপক নকীবকে মাথা নিচু করেই বাসভবনের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো বলছে, পোষ্য কোটা ইস্যুতে আসলে ‘খেলার হাফটাইম’ শেষ হয়েছে। হাফটাইমে এগিয়ে রয়েছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। পরের হাফটাইমে ‘খেলার’ প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা কোটা বহাল রাখার দাবিতে এখন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগের মতো ৫ শতাংশ পোষ্য পুনর্বহাল না করলে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি।

সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ বলেই স্বীকার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘আমরাও শুনছি যে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন আমরা তাদের বুঝাবো। এটা একটা নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ফেইস করছি। আইসিটির পরিচালক পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা তাকেও বোঝাচ্ছি। আসলে যে প্রক্রিয়ায় দাবি আদায় করা হয়েছে সেটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মর্মাহত। এখন দেখি সামনে কী হয়! যা হবে সেটা মোকাবিলা করতে হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

ads

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.