রাজশাহী: রাজশাহীতে পুলিশের হাতে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার এক আসামি কৃষকদলের এক নেতাকে লাথি মেরেছেন। পরে বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। শনিবার দুপুরে বোয়ালিয়া থানার এ ঘটনাটির ভিডিও রোববার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গ্রেপ্তার ওই আসামির নাম আবুল কালাম (৫৫)। তিনি রাজশাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি ও ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের জেলার সভাপতি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। তবে মামলার বাদী উষামা বিন ইকবাল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেফিট করেছেন যে, মামলায় আবুল কালামের নামটি এসেছে ভুল করে। কালামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তার।
এরপরও রোববার তাকে গ্রেপ্তার করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। এ সময় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী তাকে ছাড়াতে থানায় যান। অন্যপক্ষের নেতাকর্মীরা থানায় যান যেন তাকে ছাড়া না হয়। ওই সময় পুলিশ তাকে আদালতে নেওয়ার জন্য থানা থেকে বের করছিল। তখনই সামনে কৃষকদলের রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন সরকার টিটুকে দেখে লাথি মেরে বসেন আবুল কালাম। এ সময় দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
নগরের শাহমখদুম থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান গিয়েছিলেন আবুল কালামকে ছাড়িয়ে আনতে। তিনি বলেন, ‘আবুল কালাম আমাদের শুভাকাক্ষী হওয়ায় আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি, বিএনপির রাজনীতি করতেন। এখন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সমিতির দখল নিতে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’
কৃষকদলের নেতা আলামিন সরকার টিটু অভিযোগ করেন, ‘আবুল কালাম ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলার আসামি। তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হওয়া স্বত্ত্বেও বিএনপির কিছু নামধারী নেতা থানায় গিয়ে তাকে ছাড়াতে তদবির করেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিবাদ করায় ওসিসহ পুলিশের সামনেই তিনি আমাকে লাথি মারেন।’
থানায় কৃষকদল নেতাকে আসামির লাথি ও হাতাহাতির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘তেমন কিছু ঘটেনি।’
এদিকে আবুল কালামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রোববার দুপুরে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি ও ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলার বাদীর কোনো অভিযোগ নেই। বাদী এটা এফিডেফিট করে দিয়েছেন। তারপরও তাকে গ্রেপ্তার করা দুঃখজনক।
বিএডিসি সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহীর সভাপতি মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল বলেন, ‘আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করলে শ্রমিকেরা ট্রাক বন্ধ করে দিতে পারেন। সার বিক্রিও বন্ধ হতে পারে। এমনটি হলে রাজশাহী অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে। যারা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, তারা এ উদ্দেশ্যেই আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করায়।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে দ্রুত আবুল কালামের মুক্তির দাবি জানানো হয়। এ সময় বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের জেলার সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, বিএডিসি সরকার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের জেলার সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির জেলার সহসভাপতি মো. তোজাম্মেল, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাদী এফিডেফিট করে দেওয়ার পরেও আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক হাসান বলেন, ‘এফিডেফিট বিবেচনার বিষয় আদালতের। আমরা এজাহারভুক্ত আসামি পেয়েছি, তাই তাকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে গ্রেপ্তারের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য নেই।’