নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে ৫ আগষ্টের পর থেকে বিতর্কিত পুলিশ সদস্যদের রাজশাহীর জনগনের বন্ধু করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আরএমপি পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান। আবু সুফিয়ানের সফলতা মলিন করতে কতিপয় পুলিশ সদস্যের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডই যথেষ্ট। তাঁর সফলতা ধারাকে বিনষ্ট করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন আওয়ামীলীগ পন্থি, ছাত্রলীগ কোটায় ভর্তি কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য। এসব ধান্দাবাজ পুলিশ সদস্যর কারনে রাজশাহীতে একের পর এক পুলিশ সদস্য বিতর্কিত হচ্ছেন। মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে পূর্বের ফ্যাসিবাদ পুলিশের ন্যায়।
৫ আগস্টের পর থেকে নতুন ওসি যোগদানের পরপরই এমন একাধিক অভিযোগ উঠে আসছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।। তদন্ত ছাড়াই মিথ্যা মামলা নেওয়া, মামলায় নিরিহ মানুষের আসামী করে বানিজ্য করা, প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার না করে অর্থের বিনিময়ে ছাড় দেওয়া, টাকা ছাড়া মামলা না নেওয়া, মামলা করতে আসা মানুষকে হয়রানি করাসহ মাদক ব্যবসায়ী, জুয়ার বোর্ড ও আবাসিক হোটেল থেকে মাসিক চাঁদা নেওয়ারও একাধিক অভিযোগ উঠে আসছে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দিয়ে হয়রানির ভয়ে মুখ খুলছে না অনেকেই। তবে গোপনে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে।
বোয়ালিয়া থানার একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি লাকি ড্র’র নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। রাজশাহীতে অবৈধভাবে ‘মেগা লাকি ড্র’ এর নামে লটারি বিক্রি করে জনগণের সাথে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও এইচটিএন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেই অভিযোগে আনুমানিক ৫০ জন ভুক্তভোগীর স্বাক্ষীসহ সকল তথ্য প্রমাণ অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রনিকে দেওয়ার পরেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক নাঈম এর সঙ্গে আগে থেকেই সুসম্পর্ক ছিলো এস আই রনি’র। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রতারক নাঈম হোসেন এর সাথে এস আই রনির আগের একটি মামলা থেকেই বেশ সুসম্পর্ক ছিলো। এ কারণে তার বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগে কোন ব্যবস্থা নেননি এসআই রনি।
আগের ঘটনার সূত্রে জানা যায়, বোয়ালিয়া থানায় নাঈম হোসেন লিখিত এজাহার দায়ের করেন (যার মামলা নাম্বার ১৩/৩৪৫ ) দুইজন ব্যক্তির নামে চাঁদাবাজি দোকান লুটপাট বিষয় তুলে ধরেন। সেই মামলার দায়িত্ব পান এসআই রনি। তিনি মালামাল ফেরতসহ আসামির ব্যবস্থা শক্তপোক্ত চার্জশিট দেওয়ার নামে নাঈম হোসেনের নিকট ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভাইরাল। অডিওতে মামলার বাদী নাঈম এসআই রনিকে বলছেন সাইফুল মুন্সির মাধ্যমে কিছু টাকা ওসি সাহেবকে দিয়েছিলাম। আর আপনাকে আমি মোবাইল বিক্রি করে যে টাকা দিয়েছিলাম সেই টাকাটা যদি একটু ফেরত দিতেন তাহলে ভালো হয়। কারণ টাকা দিয়েও তো আমার কোন কাজ হবে না। অপরপাশে এসআই রনি বলছেন,আপনি স্বাক্ষীদের নাম ঠিকানা দেন আমি তদন্ত করছি।
এছাড়াও নাঈম হোসেন মুঠোফোনে জানান, বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাসুদ পারভেজ থাকাকালিন মামলা দিয়েছি। উনি থাকলে এতদিন হয়রানি হতে হতোনা। ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়াও লাগতোনা। আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে সেটার কিছু টাকা ফেরতের আসায় তদন্ত অফিসার এসআই রনিকে মালামাল উদ্ধার সহ আসামির আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চুক্তিতে ২০ টাকা দিয়েছি। সেই সাথে নতুন ওসি মোস্তাক হোসেন যোগদানের পর বোয়ালিয়া থানার মুন্সী সাইফুল, ওসি মোস্তাক’কে খুশি করে অনুমতি নিয়ে ফরিদপুর যেয়ে ডিবি দিয়ে ফরিদপুর থেকে মামলার আসামিদের আটক করা হবে মর্মে আশ্বাস দিয়ে আবারো ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়। ঘুষ নিয়ে আসামি বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। আসামি পক্ষের নিকট তারা মোটা অংকের টাকা নিয়েছে সেই জন্য আমার মামলার ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে এসআই রনি মামলার বাদীকে মুঠোফোনে বলেছেন আমি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু ওসি অনুমতি দেয়নি। (কল রেকর্ড সংরক্ষিত)
এ বিষয়ে জানতে র্যাব-১০ এর এক অফিসার বলেন, এই মামলায় আসামিদের নামে এমন আরো অভিযোগ রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করে বোয়ালিয়া থানায় হ্যান্ডওভার করতে চাইলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই রনি গ্রেপ্তারের জন্য কোন সহযোগীতা না করার কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মোস্তাক হোসেন জানান, আমি নাঈম হোসেনকে চিনিনা । মুন্সি আর রনির সাথে কথা বলে দেখি এমন কিছু ঘটনা হয়েছে কিনা। কিন্তু এসআই রনি বলেছে ওসি সাহেব ব্যবস্থা নেয়ার অনুমতি না দেওয়ায় উনি কিছু করতে পারছেন না ( অডিও সংরক্ষিত)। এছাড়াও নাঈম হোসেনের সাথে ওহাটসঅ্যাপে ওসি সাহেবের হোযাটসঅ্যাপে কথার ইস্কিন শট গণমাধ্যমের নিকট সুরক্ষিত রয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রকিবুল হাসান ইবনে রহমান জানান, এমন ঘটনা হয়ে থাকলে সেটার তথ্য প্রমাণ থাকলে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে ভুক্তভোগীকে পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
উল্লেখ্য, বোয়ালিয়া মডেল থানার তদন্ত ওসি’র বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশ হলেও আইনগত বা প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।