বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতা এক নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।আজ আর সাংবাদিকতার মানদণ্ড নির্ধারিত হচ্ছে না লেখনির প্রখরতায়, সত্য অনুসন্ধানের দায়বদ্ধতায় বা সমাজের জন্য ইতিবাচক অবদানে।বরং কার পেছনে কত বড় ‘পাওয়ার হাউজ’ আছে, কে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারে—সেই নিরিখেই অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার মূল্যায়ন হচ্ছে।এই প্রবণতা কেবল হতাশাজনক নয়, পেশাটির ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর হুমকিস্বরূপ।
দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন অনেক সাংবাদিকই তাদের সহকর্মীকে বিপদে ফেলার জন্য একটিমাত্র অস্ত্র হিসেবে ‘ক্ষমতা’র অপপ্রয়োগে লিপ্ত হচ্ছেন।কেউ হয়তো রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, কেউ প্রশাসনিক ঘনিষ্ঠতা কিংবা কারো সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেনকে কাজে লাগিয়ে ‘প্রভাবশালী সাংবাদিক’ হয়ে উঠছেন।এই ক্ষমতার মোহে তারা ভুলে যাচ্ছেন, আজ আপনি যাকে বিপদে ফেলছেন, কাল আপনি নিজেই সেই একই চক্রে ঘুরে বিপদের মুখে পড়বেন।আর তৃতীয় পক্ষ—যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ঐক্যের বিরোধী—তারা তখন তালি বাজাবে, উৎসব করবে।
একটা কথা মনে রাখা জরুরি—সাংবাদিকতা একটি দায়িত্বশীল পেশা।এটি কেবল সংবাদ পরিবেশনের বিষয় নয়, এটি নীতির, মূল্যবোধের, এবং সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক।এ পেশায় হিংসা-আক্রোশ, পরস্পরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয়, বরং প্রয়োজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার মানসিকতা।বিভাজন নয়, দরকার ঐক্য; প্রতিহিংসা নয়, চাই সহমর্মিতা।
আসুন, আমরা ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সাংবাদিকতার মূলচেতনাকে ধারণ করি।একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় শক্তি তার লেখনী, তার নির্ভীকতা, আর তার ন্যায়ের প্রতি অটল অবস্থান।ক্ষমতা প্রদর্শন নয়, সত্যকে তুলে ধরাই হোক আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
সাংবাদিক সমাজ যত বেশি বিভক্ত হবে, তত বেশি দুর্বল হবে পেশার সম্মান ও স্বাধীনতা।আর যত বেশি ঐক্যবদ্ধ হবো, ততই শক্তিশালী হবে গণমাধ্যম—জনগণের পক্ষে কথা বলার এক অপ্রতিরোধ্য কণ্ঠস্বর হয়ে।
লেখক:-
মো: নুরে ইসলাম মিলন।
সভাপতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা
রাজশাহী বিভাগ।