রাজশাহী: দেশের ব্যাংকিং খাতে চলমান বৃহৎ দুর্নীতির আরেকটি অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের ৯৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজশাহী ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম স্বপনসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, নাবিল গ্রুপ ছিল এসআলম গ্রুপের অন্যতম সহযোগী, যারা মিলিতভাবে ব্যাংক লুটের চক্র চালিয়েছে। এসআলমের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অন্যতম অংশীদার ছিল নাবিল গ্রুপ।
তদন্তে উঠে এসেছে, নাবিল গ্রুপ নামসর্বস্ব ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান খোলার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাদের পদ্ধতি ছিলঃ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আবেদন করা, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে ঋণ অনুমোদন করানো,
ব্যাংকের প্রভাবশালী পরিচালক ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঋণের টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও
কোনো বাস্তব উৎপাদন বা ব্যবসা না থাকলেও কাগজে-কলমে কার্যক্রম দেখানো।
এই প্রক্রিয়ায় একদিকে ব্যাংকের সম্পদ লোপাট হয়েছে, অন্যদিকে ঋণগ্রহীতা হিসেবে নাম থাকা অসংখ্য সাধারণ কর্মচারী ও গ্রাম্য মানুষের জীবনে আর্থিক অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে।
নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম স্বপন সম্প্রতি নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেল “স্টার টিভি” চালু করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তিনি মনে করেন যে টিভি মালিক হলে অন্যান্য গণমাধ্যম সাহসী প্রতিবেদন প্রকাশ করবে না।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, লুটের অর্থ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে “স্টার টিভি” চালু করা হয়েছে।
দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ফেরত না দিয়ে তারা নতুন প্রতিষ্ঠান খুলছে। এটা জনস্বার্থের প্রতি চরম অবহেলা।”
রাজশাহী ভিত্তিক নাবিল গ্রুপের নতুন টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা জনগণের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। ব্যাংক লুটের শিকার হওয়া ইসলামী ব্যাংকের কোটি কোটি আমানতকারীর ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকির মুখে।
সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলেন, ব্যাংক লুটের এই চক্রের বিরুদ্ধে কেবল মামলা নয়, কার্যকর তদন্ত, লুটের টাকা উদ্ধার এবং জড়িতদের সম্পত্তি জব্দ করা জরুরি। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক, ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ এবং নতুন টেলিভিশন চ্যানেলের অর্থের উৎস তদন্ত না হলে এই চক্র আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে।
তবে এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য একাধিকবার ফোন করলেও নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম স্বপন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রথমে ব্যস্ত আছি বলে ফোন কেটে দেন, পরে আর ফোন ধরেননি।