নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বড় বনগ্রাম মৌজায় প্রকাশ্যে একটি পুকুর ভরাট করছে সাকিব নামের এক ব্যক্তি। জলাধার রক্ষা আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০১০) ও আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে ভরাট কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। দাবি করেন, স্থানটি তার মালিকানাধীন—তাই ইচ্ছেমতো ভরাট করবেন। সরকারি নিয়ম–কানুন বা আদালতের আদেশ তিনি মানবেন না বলেও মন্তব্য করেন। সাংবাদিককে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন—“কেন ফোন দিলেন?” যা তার আইনের প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা তুলে ধরে।
জানতে চাইলে স্থানীয় জামাতের যুব বিভাগের নেতা বলেন, “রাজশাহীতে সংবাদ প্রকাশ করে কয়টা পুকুর ভরাট রক্ষা করেছেন আপনারা বা প্রশাসন। কিছু দিন বন্ধ রেখে আবারও ভরাট শুরু করে দেই। ভরাট যারা করে তারা প্রশাসন ম্যানেজ করেই কাজ শুরু করে। সংবাদ প্রকাশের পর বন্ধ রেখে একটা নাটক দেখিয়ে আবারও শুরু হয়। কয়টা মামলা, কয়টা পূর্ণ খনন হয়েছে আর কয়টা পুকুর ভরাট সম্পুর্ণ হয়েছে—সেই হিসাব মিলিয়ে দেখেন। চন্দিমা থানার রাস্তার উল্টো পাশে কিভাবে পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ হয়েছে—সেই উত্তর সাংবাদিক, থানা, এসি ল্যান্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন ও ডিসি—কেউ দিতে পারবে!”
স্থানীয়দের দাবি—পুকুরটি অবিলম্বে রক্ষা ও আইনের আওতায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা বলেন, যতোটুকু ভরাট হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির খরচে পুনরায় খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, রাজশাহীতে বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিকভাবে পুকুর ও জলাশয় দখল–ভরাটের ঘটনা বাড়ছে। প্রশাসনিক নজরদারি দুর্বল হওয়ায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ঘটনায় পুলিশি তৎপরতা এখনো দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বিষয়টি জানানো হলে শাহ মখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাছুমা মুস্তারী বলেন—“আমি ফোর্স পাঠাচ্ছি, ভরাট বন্ধ করা হবে।”
তবে অভিযোগ রয়েছে—ওসির বক্তব্যের প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পরও ভরাট কার্যক্রম চলমান।
এদিকে বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে জানানো হলে বোয়ালিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান— তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি নোট করেছেন।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাথে এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে কোনো দৃশ্যমান প্রশাসনিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের জলাধার রক্ষা আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া পুকুর, জলাশয় ভরাট বা রূপান্তর করতে পারবেন না। আইন ভঙ্গ করলে কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও জলাশয়টি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন—সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশের পাশাপাশি স্থানীয় জীবন–জীবিকায় বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি নেমে আসবে।