নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর কাশিয়াডাংগা পুলিশ বক্সের এসআই এস এন মিতুলকে ঘিরে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ সামনে আসছে। জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে অর্থের বিনিময়ে জুয়াড়ি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগসহ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়মিত মাসোহারা তোলাসহ বেপরোয়া আচরণের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাশিয়াডাংগা মোড় সংলগ্ন এলাকা এবং আশপাশের কয়েকটি এলাকায় জুয়া, মাদক ও অবৈধ কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসিক মাসোহারা আদায় করেন মিতুল। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এর পেছনে এসআই মিতুলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও কাশিয়াডাংগা মোড়ের ফুটপাত ও অবৈধ্য স্থাপনা যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সেখান থেকে মাসোহারা উত্তোলন করেন মিতুল।
এর আগে ২৬ নভেম্বর (বুধবার) দিবাগত রাত আনুমানিক ১১টা ৫৫ মিনিটে সায়েরগাছা রেলক্রসিং সংলগ্ন একটি মুরগির খামারে পরিচালিত জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও রাজা নামের এক জুয়ারিকে আটক করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ঘটনাস্থল থেকেই রাজাকে পুলিশ বক্সে নেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই ছাড়ের পেছনে দেড় লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। অথচ অভিযানে ব্যবহৃত তাস ও উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ কোনোটাই জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, “এসআই মিতুল এখন পুরো এলাকাজুড়ে বেপরোয়া। কোথাও অভিযান দেখানো হয়, আবার কোথাও অভিযোগ উঠলেই অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। ফলে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।”
অবশ্য অভিযোগগুলো অস্বীকার করে কাশিয়াডাংগা পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই এম এন মিতুল বলেন, “জুয়ার বোর্ড থেকে একজনকে আটক করা হয়েছিল, পরে তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। কোনো ধরনের টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।”
এ বিষয়ে কাশিয়াডাংগা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুল বারী ইবনে জলিল জানান, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমি স্বাক্ষী দিতে দিনাজপুরে আছি। বিষয়টি আমাকে কেউ অবগত করেনি। তবে এমন ঘটনা ঘটলে তদন্ত পূর্বক উর্ধতন অফিসারদের পরামর্শে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে কাশিয়াডাংগা থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আজিজ মন্ডলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এলাকাবাসীর দাবি, একের পর এক অভিযোগের পরও যদি তদন্তে গড়িমসি হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। তারা দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত, অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গতকালের জুয়ার বোর্ডের অভিযান পরিচালনা কালে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ঘটনাস্থলে তিনজনকে আটক করেছিলো পুলিশ। সেখানে নগদ টাকা ও তাস উদ্ধার করেছিল। ঘটনাস্থলেই দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একজনকে ধরে বক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নাকি তাকেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।