নিউজ ডেস্ক
বিএনপি হাঁটুভাঙা নয়, আন্দোলনে জনসম্পৃক্তা দেখে আওয়ামী লীগেরই কোমর ভেঙে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সাহেব বলেছেন, বিএনপির নাকি হাঁটুভাঙা। আমাদের যে হাঁটু ভাঙেনি-এটা তো টের পাচ্ছেন। লাঠিও আমরা নেইনি।
তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় টিকে আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সোনার ছেলেদের হাতে লাঠি তুলে দিয়েছেন তারা। ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে এ সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে ‘বিএনপির হাঁটুভাঙা’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনাদের এরই মধ্যে কোমর ভেঙে গেছে। আপনারা শুধু লাঠি নয়, রামদা-তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপরে ভর দিয়ে হাঁটছেন। জনগণের সঙ্গে নেই, আপনারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। সেজন্য আপনাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ বরাবরই সন্ত্রাসী দল অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, তাদের জন্ম সন্ত্রাসের মধ্যদিয়ে। তারা একদিকে বলেন সোনার ছেলেদের হাতে কলম তুলে দিয়েছি। অন্যদিকে তাদের হাতে বন্দুক-পিস্তল-লাঠিসোঁটা দিয়ে দিচ্ছে।
আপনারা দেখেছেন গত ২২ আগস্ট থেকে জনগণের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছি। সেই আন্দোলনে যখন মানুষ জেগে উঠছে তখন তারা আন্দোলন ঠেকাতে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। আন্দোলনে তারা পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। মিথ্যা মামলায় ২৫ হাজারের ওপরে নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ৩ হাজারের মতো নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। তা না হলে কেন তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে, শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠি, বন্দুক এবং টিয়ারগ্যাস নিয়ে আক্রমণ করবে?।
১৫ বছর ধরে তারা অত্যাচার চালাচ্ছে, গুম করছে, মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে। কিন্তু আজকে জনগণের উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে। আমি ছাত্রসমাজকে বলবো, এদেশে যত পরিবর্তন হয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এবারও যে পরিবর্তন হবে তা আমার ছাত্রদলের আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে হবে।
ফখরুল বলেন, আমাদের দায়িত্ব একটাই দেশের সব ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এরপর সব রাজনৈতিক দল ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্যদিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। এটাই হবে প্রকৃত জবাব। জবাব একটাই এ সরকারকে পতন ঘটাতে হবে, এদের সরাতে হবে। জনগণের বিজয় হবেই।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো সময় আছে ওই সব উল্টা-পাল্টা কথা না বলে আপনারা শান্তিতে পদত্যাগ করুন। সেফ এক্সিট নেন এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন।
গত মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপরে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহত নেতারাও মঞ্চে এসে নেতাকর্মীদের সালাম দিয়ে চলে যান।
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।