পহেলা অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। বুধবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পাঁচ দিনব্যাপী এ শারদীয় দুর্গোৎসব। ভীড় এড়াতে এবারে পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা থানে উঠেছিলো। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছিলো পুরো রাজশাহী মহানগরীকে। আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব উদযাপনে মহানগর ও জেলা জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিলো।
হিন্দু শাস্ত্রের বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, এ বছর পৃথিবীর মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) এসেছেন। বুধবার দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাশে (স্বর্গে) ফিরে গেলেন নৌকায় চড়ে। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় সায়াংকালে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হয়। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত রয়েছে মহানগরীর সব মণ্ডপ।
রোববার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় ভোর সাড়ে ৬টায়। সোমবার মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৯টায় এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হয় বিকেল পৌনে ৫টায় এবং শেষ হবে সাড়ে ৫টার মধ্যেই। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টায় শুরু হয় নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় মহাদশমী পূজা আরম্ভ হয়। সকাল ৮টায় পুষ্পাঞ্জলি এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হয় সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পাঁচ দিনব্যাপী এ শারদীয় উৎসবের।
রাজশাহী মহানগর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, পূজা উপলক্ষে মহানগরীজুড়ে সাজ সাজ রব বিরাজ করেছে। সবাই দুর্গাপূজার উৎসবের আমেজে মেতেছিলেন। রাজশাহীতে অন্যান্যবারের চেয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্বিগুণ করা হয়েছিলো। এতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অনেক খুশি।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি তপন কুমার সেন বলেন, রাজশাহী জেলাতে এ বছর ৪৫০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হয়েছে। এরমধ্যে মহানগরীতে হয়েছে ৭৬টি মণ্ডপ ও ৯টি উপজেলায় ৩৭৪টি। শেষ পর্যন্ত রাজশাহীতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সর্বত্র আনন্দ-উৎসবেই শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করা হলো বলে জানান তিনি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপনের জন্য নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো। পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও প্রতিটি মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করেছেন। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনো জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়ি, থানা অথবা তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছিলো। সেইসাথে তিনি নিজেও নগরীর বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন এবং তাদের কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।
এছাড়াও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, আইনশৃংখলাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন ও র্যাব সদস্যরা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন এবং তাদের সাথে কথা বলেন। সেইসাথে বিভাগীয় ও কমিশনার ও জেলা প্রশাসক মন্ডপ এলাকা সমুহে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য আইনশৃংখলাবাহিনীকে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন বলে জানা গেছে।