November 24, 2024, 7:02 pm

News Headline :
সীমাহীন দূর্নীতির পরও বহাল তবিয়তে মোহনপুরের ইউএনও আয়শা সিদ্দিকা রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি যুবদল নেতা রবি’র পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে কোথাও স্থাপনা করতে না পেরে শেষমেস ভাঙারির দোকানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ: নাছিম রাজশাহীতে আলু ও তেলের দাম বাড়তি রাজশাহীতে ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বললো মহানগর ছাত্রদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে খালেদা জিয়ার মতবিনিময় দেশের সকল ক্ষমতার মালিক হবেন জনগণ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
নতুন করে কৃষককে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে ‘সোনালি আঁশ’

নতুন করে কৃষককে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে ‘সোনালি আঁশ’

রাজশাহীর পবা ও পুঠিয়া উপজেলার হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে- দাম বেশ ভালো। গুণগতমান অনুযায়ী ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ পাট।

 

নিউজ ডেস্ক
কালের বিবর্তনে ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়েছে। তবে আবারও নতুন করে কৃষককে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে এই পাট।

কৃষকরা পুরোনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার যে লড়াইটা এতদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন; হালে তার সুফল আসতে শুরু করেছে। আবারও সোনালি আঁশ কৃষকের জীবনে ছড়িয়েছে স্বর্ণালি আভা।

আশা নিরাশার দোলাচালে সোনালি আঁশে আবারও রঙিন হয়ে উঠেছে কৃষকের লালিত স্বপ্ন। প্রতিবছর এক বুক আশা নিয়ে পাটের আবাদ করেন গ্রামের সাধারণ কৃষক।

রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটি থেকে ফসল ফলান। সবুজ পাটকে রূপান্তরিত করেন সোনালি বর্ণে।

কিন্তু এরপরও কষ্টার্জিত ফসল হাটে বিক্রি করতে গিয়ে পড়েন দুর্বিপাকে। কখনও ভালো দাম পান; আবার কখনও একেবারেই পান না! তারপরও লাভের আশায় প্রতি বছরই পাটের আবাদ করছিলেন কৃষকরা।

তবে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। গেল দুই বছরের ধারাবাহিকতায় পাটের সোনালি অতীত ফেরার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে আবারও।

এ বছর বর্ষা শেষে বৃষ্টির দেখা মিলেছে ভাদ্রে। আর শরতের শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে উঠেছে। তাই কেউ কষ্টার্জিত সোনালি আঁশ ঘরে তুলছেন আবার কেউ জাগ দিয়ে, শুকিয়ে উপযোগী করে বিক্রির জন্য তুলছেন হাট-বাজারে। তাই সোনালি পাট নিয়ে এখন ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকের।

সরেজমিনে রাজশাহীর পবা ও পুঠিয়া উপজেলার হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে- দাম বেশ ভালো। গুণগতমান অনুযায়ী ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ পাট।

রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের কৃষক নূরুল আমিন বলেন, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এই বছর তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন। এবারও দাম ভালো। তার প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয়েছে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ফলনও ভালো হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ পাট পাওয়া যাচ্ছে। খালে-বিল পানি পাওয়ায় এবার শেষ মুহূর্তে পাট জাগ দেওয়ায় খুবই সুবিধা হয়েছে। তার মত অনেক কৃষক এরই মধ্যে বাজারে নতুন পাট তুলতে শুরু করেছেন। আর এখন কৃষকরা পাটের দামও ভালো পাচ্ছেন।

পবার বড়গাছী ইউনিয়নের পাট চাষি আবুল কালাম জানান, এ বছর পাটের দাম ভালো পেয়েছেন। বিগত কয়েক বছর পর লাভের মুখ দেখতে পেলেন। ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বৈরী আবহাওয়ার পরও এ বছর তিনি বিঘা প্রতি সাড়ে ১২ মণ করে পাট পেয়েছেন। প্রতি মণ পাট ৩ হাজার টাকা দরে ৩২ মণ পাট বিক্রি করেছেন এবং ভালো দামের আশায় আরও সাড়ে ৩০ মণ পাট মজুদ করেছেন বলেও জানান এই কৃষক।

একই উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক আলতাফ আহমেদ বলেন, এ বছর প্রায় ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। ফলনও ভালো পেয়েছেন। তিনি ১৫ মণ পাট ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। অবশিষ্ট পাট বেশি দামে বিক্রি করার আশায় বাড়িতে মজুদ করে রেখেছেন। সামনের দিকে দাম বাড়লে অবশিষ্ট পাট বিক্রি করবেন।

পবার নওহাটা বাজারের পাট ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকেই হাট-বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এখনও উঠছে। তবুও দাম কমেনি। গত বছর এই সময় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট কিনেছিলেন। বর্তমানে বাজারে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দরে পাট কিনছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু বেশি দামে পাট কিনে তার মত ব্যবসায়ীরা আবার একটু আশঙ্কার মধ্যেও আছেন। কারণ পাট রপ্তানি যদি কোনো কিছুর জন্য কমে যায় তাহলে হঠাৎ করেই পাটের দামও কমে যাবে। বিশেষ করে ভারতে পাট রপ্তানি কমে গেলে দেশের পাট চাষিরা ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবেন। এতে পাট ব্যবসায়ীদের ব্যাপক লোকসানের শিকার হতে হবে।

এদিকে, বানেশ্বর হাটে কথা হয় পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। দুই বিঘা জমি থেকে ২৮ মণ পাট পেয়েছেন। গত হাটে দাম ভালো পেয়ে ২০ মণ পাট ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। দাম এখনই ভালো। পরে বাড়তে পারে, আবার কমে যেতেও পারে। তাই বাড়তি লাভের আশায় পাট মজুদ করে ঝুঁকি নিতে চাননি। সামান্য কিছু পাট রেখে বেশিরভাগই বিক্রি করে দিয়েছেন।

পাটের চাষাবাদ ও ফলন প্রশ্নে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. মোজদার হোসেন বলেন, প্রায় ১৫/২০ দিন থেকে রাজশাহী জেলার হাটে-বাজারে নতুন পাট আসতে শুরু করেছে। আর বাজারে পাটের এখন দাম বেশ ভালো। দাম পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি। আশা করা যায় আগামী মৌসুমে পাটের আবাদ আরও বাড়বে।

তিনি আরও জানান ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাজশাহী জেলায় পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৭৬০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। গত পাঁচ বছর কৃষকরা পাট চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তারপরও এলাকার কৃষকরা সোনালি আঁশের সুদিনের আশায় প্রতি বছর কিছু জমিতে পাট চাষ করে আসছেন। আগামী দিনেও পাটের ভালো দাম পেতে থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং পাট চাষে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক কাজী মো. সাইদুর রহমান জানান, গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে এক কোটি ডলারের ওপরে পাট রপ্তানি করা হয়েছিল। ডলারের মূল্য বাড়ার কারণে এবছর ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পাট আমদানি কম করছেন। তা সত্ত্বেও প্রতিদিনই কমবেশি শুল্কমুক্তভাবে পাট রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ডলারের দাম কমলে দেশের বাজার থেকে পাট রপ্তানি আরও বাড়বে। আর রপ্তানি বাড়লে দামও বাড়বে বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.