তানোর প্রতিনিধি
নয়মাস ধরে বিয়ে করে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সাথে প্রতারনা করে আসছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক রবিউল ইসলাম। কিন্তু সেই শিক্ষক বাধ্য হয়ে গত সোমবার রাতে গ্রাম্য সালিশে তিন লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে তালাক করেছেন বলে নিশ্চিত করেন জোনাকি স্কুলের শিক্ষক ও বিচারক এনামুল। উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন( ইউপির) সীমান্তবর্তী নিয়ামতপুর উপজেলার কুচরা গ্রামে ঘটেছে সালিশের নামে প্রহসনের ঘটনাটি। এমন প্রহসনের বিচারের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়, সেই সাথে যারা বিচারক তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি তুলেছেন। নচেৎ এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে বলেও মনে করছেন শিক্ষক মহল।
জানা গেছে, তানোর উপজেলার নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক রবিউল ইসলাম। তিনি বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় চাকুরী পেয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৯ থেকে ২০ বছর ধরে চাকুরী করে আসছেন। শিক্ষকের বাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাদিরপুর গ্রামের পশ্চিমে নিয়ামতপুর উপজেলার কুচরা গ্রামে। রবিউলের স্ত্রী সন্তান সবই রয়েছে।
এঅবস্থায় শিক্ষক রবিউল তার মেয়ের বয়সের কুচরা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষারর্থীর সাথে পরকিয়া প্রেম করে ৯ মাস আগে বিয়ে করেন। অনার্স পড়ুয়া ওই মেয়ে কষ্ট কল্পনা করে শহরে থেকে পড়াশোনা করেন। রবিউল যাযা প্রয়োজন সবকিছু দিতেন। তাদের চার লাখ টাকা দেনমোহর ও দশ কাঠা জমি দেওয়া হবে এবং প্রথম স্ত্রী কে তালাক দিয়ে নব বধুকে নিয়ে তানোর সদরে থাকবেনসহ আরো ইত্যাদি ইত্যাদি প্রলোভনে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস তেমন কিছু বুঝতে পারেনি। কিন্তু রবিউল তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে অবহেলা করা শুরু করেন এবং বাধ্য হয়ে স্ত্রী রবিউলের বাড়িতে উঠতে চাইলে চালাতেন নির্যাতন। শুধু তাই না প্রতারক শিক্ষক রবিউল জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে জালিয়াতি করে ধরা খান।
গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা জানান, গ্রামে রবিউলদের প্রচুর দাপট ও ক্ষমতা। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেনা। কারন তারা তিন ভাই শিক্ষক ধনাঢ্য পরিবার। রবিউল অনার্স পড়ুয়া মেয়ের দারিদ্রতার সুযোগে সবকিছু করেছেন। একাধিকবার বসে মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন আরেক প্রভাবশালী জোনাকি স্কুলের শিক্ষক এনামুল। তার বড় ভাই মোজাম্মেল তিনি জোনাকি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি ওই মহিলাকে নিয়ে নওগাঁ কোর্টে মামলা করতে যান। বিষয়টি জানতে পেরে গত সোমবার রাতে শিক্ষক এনামুল বিচার করেন গ্রামে বসে। এক ভাই রফাদফায় ব্যস্ত আরেক ভাই যাচ্ছে মামলা করতে, তারাই আবার মানুষ গড়ার নাকি কারিগর। বিচারের নামে মাস্টার এনামুল প্রহসন করেছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে চার লাখ টাকা দেনমোহর থাকলে এক লাখ টাকা বাদ দিয়ে তিন লাখ টাকায় রফাদফা করে অনার্স পড়ুয়া দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার রায় দেন । এরাই কি বিচারক নাকি শিক্ষক।
রবিউল জানান, টাকা থাকলে এরকম দুচারটা বিয়ে ব্যাপার না। বিয়ে করলাম, ভোগ করলাম, আবার তিন লাখ টাকা দিয়ে তালাক দিলাম। শিক্ষক দের যত সুবিধা তিন লাখ টাকা তেমন কিছুই না বলে প্রচুর দম্ভক্তি দেখান তিনি।
বিচারক শিক্ষক এনামুলের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রামের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। সমস্যা হয়েছিল সবার মতামতের ভিত্তিতে সমাধান করা হয়েছে। চার লাখ টাকা দেনমোহর আপনি কিভাবে এক লাখ টাকা বাদ দিয়ে মিমাংসা করলেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন পারি বলেই করেছি, না পারলে করতাম না। আর কিভাবে সালিশ বিচার করতে হবে সেটা আমার জানা আছে কারো কাছ থেকে শিখতে হবে না বলে তিনি দাপট দেখান।
নারায়নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন জানান, এসব তাদের পারিবারিক বিষয়, শুনেছি মিমাংসা হয়ে গেছে। আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এধরনের কাজ করেছে আপনি কেন ব্যবস্থা নেন নি প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন আমার কিছুই করার নাই।