সারোয়ার হোসেন, তানোর:
রাজশাহীর তানোরে সিদীপ নামের বে সরকারী এনজিও মন্দার আশংকা থেকে কৌশলে গ্রাহকদের ঋন দেওয়ার নামে পুরো টাকা আদায় করে আর ঋন দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে গ্রাহকরা চরম বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছেন। কারন কেউ একসাথে দশ হাজার আট হাজার বারো হাজার টাকা বকেয়া ধার দেনা করে পরিশোধ করছেন ঋন পাওয়ার আসায়। আর সিদীপ এনজিও টাকা আদায় হওয়ার পর সপ্তাহ ধরে ঘুরে ঘুরে হয়রানি করে আর দিচ্ছেন না ঋন। ফলে গ্রাহকের সাথে এনজিওর প্রতারনার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন গ্রাহকেরা। যে কোন মুহুর্তে এনজিওর মাঠ কর্মী থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদেরও অপদস্থ করার কথাও বলছেন, নচেৎ এনজিওর বিরুদ্ধে প্রতারনা মুকুল মামলা করার কথাও অনেকে ভাবছেন বলেও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী চলছে খাদ্য ঘাটতি অর্থনৈতিক মন্দা,, আগামীতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করবে মর্মে দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে এমনই বার্তা দেওয়া হচ্ছে। যার কারনে কিছু এনজিও শুরু করেছেন প্রতারনা।
তানোর পৌর সদর গুবিরপাড়া গ্রামের নারগিস বেগম। দীর্ঘ দিন ধরে সিদীপ এনজিওর সাথে ঋন নেওয়া দেওয়া করছেন। তার স্বামী আব্দুল ওহাব। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল মোটা চাকার অটো ভুটভুটি। ঘরে রয়েছে তিনটি সন্তান। গত সপ্তাহে সিদীপ এনজিও ঋন দিবে বলে বকেয়া প্রায় ১১ হাজার টাকা নেয়।
ওহাব জানান, আমরা ঋন নিব না। কিন্তু এনজিওর মাঠ কর্মী হায় ও আশিক এক প্রকার জুলুম করে বকেয়ার পুরো টাকা নেয় ৬০ হাজার টাকা ঋন দিবে বলে এবং কাগজেও লিখালেখি করে। আজকাল করে তারা হয়রানি করতে থাকে। কিন্তু গত মঙ্গলবারে ঋন দেওয়ার কথা বলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমাদের কে অফিসে জিম্মি করে রেখে বলেন বাঁচতে চাইলে সঞ্চয়ের ১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান, নইলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে বলে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়। তাদের নোংরা আচরনে আমার কোলের শিশুও ভয়ে আতকে উঠে।
নারগিস জানান, ধার দেনা করে প্রায় ১১ হাজার টাকা দিয়েছি। বেশকিছু দিন ধরে ঘুরায়। কিন্তু গত মঙ্গলবার অফিসে ডেকে একবেলা বসিয়ে রেখে নোংরা ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। আমরা গরীব অসহায়। একদিন ভ্যান না চালালে পেটে ভাত জুটে না। আর শুধু আমি না আরো কয়েকজনকে তারা তাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য সদস্যাদের বলব আপনারাও তাদের কে কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দেন। তারা বড় সন্ত্রাস, তাদের নাকি থানা পুলিশ সব পকেটে। নিয়োমিত কিস্তি দিয়ে থাকি, পাঁচ ছয় বার ঋনও নিয়েছি। কোন সমস্যার কথাও বলছে না। আবার তাদের অফিসে অনেক ফ্রিজ রয়েছে, এসব তারা দিয়ে প্রতারনা করেন। এই এনজিওর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত দরকার। এসময় ভাড়াও কম এবং এক প্রকার সংকটে বা অভাবে থাকে। আর আমাদের কাছে থেকে এত গুলো টাকা নিল, কিন্তু ঋন দিলনা, আবার এক বেলা আমার স্বামীকে বসিয়ে রাখল। দেশে কি এসবের কোন বিচার নাই। যারা গরীব অসহায়দের সাথে এমন জালিয়াতি প্রতারনা করে, তাদেরকে আইনের আওতায় কেন আনা হয় না। এর আগে দুপুরে ডেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে ফেরত পাঠায়। অথচ টিভির খবরে শুনেছি সকাল ৮ থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত অফিস সময়। এরা তো সরকারের এসব নিয়মও মানে না। নাকি সরকারও এধরনের এনজিওর কাছে জিম্মি।
জানা গেছে, উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ এনজিও নির্ভর। বিশেষ করে ছোট যানবাহন চালক, শ্রমিক, মৎসজীবী থেকে শুরু করে সকলেই একাধিক এনজিও ঋনের উপর নির্ভর। এজন্য বৈধ অবৈধ এনজিওর ছড়াছড়ি। এনজিওর ঋন পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। এজন্য এনজিওর দিকে ঝুকে পড়েছেন। আর এনজিও গুলোর কাজের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। তাদের ইচ্ছেমত চলে কার্যক্রম। দিন রাত ছুটি কিছুই থাকে না। তারা মানেনা সরকারী নিয়ম কানুন। আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে চলে এনজিও, আর কর্মকর্তা কর্মচারীরা সবাই থাকেন ওই ভবনে। সকাল সাতটা থেকে টানা রাত্রি আট টা নয়টা পর্যন্ত চালিয়ে যায় অফিস।
সিদীপ এনজিওর মাঠকর্মী হাই জানান, সমস্যা আছে এজন্য ঋন দেওয়া হয় নি, আপনার সাথে বসে কথা বলা হবে। ঋন দিবেন না তো একসাথে এত টাকা নিলেন কেন প্রশ্ন করা হলে কোন সদ উত্তর না দিয়ে ব্যস্ত আছি বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বন্ধ করে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, ঘটনা সম্পর্কে অবহিত না। তবে গ্রাহক এসব বিষয় নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।