রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (রামেক) কর্তৃপক্ষের দ্বারা হামলা ও অজ্ঞাতনামা তিনশ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ‘বেসামাল এবং অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছেন তারা।
রোববার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর এদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ মার্কেটে এমপি বাদশার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তারা।
এর আগে মানববন্ধনে রামেকে শাহরিয়ারের চিকিৎসায় অবহেলা, কালক্ষেপণ এবং তার সহপাঠীদের ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং আনসারদের বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর অপসারণসহ ৯ দফা দাবি জানান রাবি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- শাহরিয়ারের সহপাঠীদের ওপর নৃশংস হামলা, হত্যাচেষ্টা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের অতি দ্রুত অব্যাহতি এবং প্রত্যেককেই তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে; অসংলগ্ন আচরণ ও প্রত্যক্ষ মদদে বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় রামেক পরিচালককে অপসারণ করতে হবে; ফর্মালিটিজের নামে হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ বন্ধ করতে হবে; রামেকে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে; এমপি বাদশার বেসামাল, অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রত্যাহার করে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে; ইন্টার্নদের স্বেচ্ছাচারিতা, রোগী এবং রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, অস্ত্রোপচার সামগ্রী দিয়ে আক্রমণের বদভ্যাস পরিহার করতে হবে; জরুরি বিভাগে সিনিয়র ডাক্তারদের উপস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে; আইসিউ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে, উপাচার্য এবং প্রক্টরের স্বাক্ষরের নামে টালবাহানা না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং অনতিবিলম্বে রাবি প্রশাসনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সেদিন হাসপাতালে রামেক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্টাফ, ইন্টার্ন ও সংশ্লিষ্টরা হত্যার উদ্দেশ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের রুমে আটক করে এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত ছুরি-কাচি দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়ে গুরুতর আহত করে। তারা এখন বিভিন্ন হাসপাতালের বিছানা চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তারা সেদিন লাঠিসোটাসহ হাতের কাছে যা পেয়েছে সেটা দিয়েই শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে শিক্ষার্থীদের কারো হাতে, পিঠে, কানে কিংবা চোখে গুরুতর জখম হয়েছেন। আমরা এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এমনকি অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের বক্তৃতায় বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর এমন বর্বর হামলায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং সেই সঙ্গে রামেক পরিচালককে অপসারণ করতে হবে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবং মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয় তারা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর তাদের ৯ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শাহরিয়ারের মৃত্যু নিয়ে ফজলে হোসেন বাদশার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, দায়িত্বশীল চেয়ারে বসে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে এমন বক্তব্য উনি দিতে পারেন না। উনি না জেনেই শাহরিয়ারের মাথার মগজ ঘটনাস্থলে পড়ে আছে বলছেন। কিন্তু শাহরিয়ার যেখানে নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়া ছাড়া মাথা ফাটার কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। এমন উস্কানিমূলক বক্তব্যে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে এই ‘বেসামাল এবং অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত রাবির ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে মতিহারের সবুজ চত্বরে উনাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ মার্কেটে রামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মানববন্ধনে রাবি শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় সাংসদ বাদশার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন রাবি শিক্ষার্থীরা।
রাবি ও রামেকের অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত
এদিকে ১৯ অক্টোবর রাতে রাবি শিক্ষার্থী ও রামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও স্টাফদের হামলার ঘটনায় নগরীর রাজপাড়া থানায় দায়ের করা পালটাপালটি দুই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। তথ্যটি নিশ্চিত করে রোববার বিকেলে রাজপাড়া থানায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার তসলিমা খাতুন বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় রামেকের ও রাত সাড়ে ১২টায় রাবির অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলা দুটি কোর্টে চলে গেছে।
এর আগে গত ১৯ অক্টোবর রাত ৮টায় রাবির শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ার। আহতবস্থায় রামেকে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পরে শাহরিয়ারের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে তার সহপাঠীরা হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে বির্তকে জড়ান ও ভাঙচুর চালান। পরবর্তীতে রামেকের ইন্টার্নরা অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ছুরি, কাচি দিয়ে হামলা করে রাবির কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত করে। এরপর থেকে রাবি ও রামেক একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে।