‘এজন্য আমি আহ্বান করেছিলাম, যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না থাকে। নিজের গ্রামে যান। সেখানে কোনো জমি যেন অনাবাদী না থাকে, সেজন্য কাজ করতে হবে। অন্যের জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে, সেটিও বলতে হবে। সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি, কিন্তু আমাদের ইনশাল্লাহ কিছু হবে না। এজন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে।’
বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার অভিঘাত ও সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এড়াতে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তৃণমূলে পর্যায়ে কাজ করতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশে তিনি এ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ গড়ার কাজে যুবলীগের মনোযোগী হতে হবে। করোনা মোকাবিলায় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি, টেস্ট করিয়েছি। ঠিক তেমনভাবে দেশ ও মানুষের সেবা করতে হবে। এজন্য যুবসমাজকে অনুরোধ করব, যেহেতু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা… এজন্য সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমদানি করতে হয় যেসব পণ্য, সেগুলোতে আমরা সমস্যা পড়ে গেছি।’
‘এজন্য আমি আহ্বান করেছিলাম, যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না থাকে। নিজের গ্রামে যান। সেখানে কোনো জমি যেন অনাবাদী না থাকে, সেজন্য কাজ করতে হবে। অন্যের জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে, সেটিও বলতে হবে। সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি, কিন্তু আমাদের ইনশাল্লাহ কিছু হবে না। এজন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে।’
বেলা ৩টার দিকে সমাবেশস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে সমাবেশের উদ্বোধন করেন তিনি।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুবসমাজকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণ করতে হবে। দরিদ্রতার হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। উত্তরবঙ্গে এখন আর মঙ্গা হয় না। সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি।’
যুবসমাজকে নানাভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করতে পারে। সমগ্র দেশে আমরা হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। প্রত্যেকটি জায়গায় যুবকরা ট্রেনিং নিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। এটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না হলে হতো না।’
যুবসমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, মাদক থেকে দূরে থেকে দেশের জন্য কল্যাণকর কাজে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুর্নগঠন ও দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতা যুবলীগ গঠন করেছিলেন, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তরুণদের উৎসর্গ করা হয়েছে। কারণ, তরুণরাই পারে দেশ গড়তে।’
বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘তারা উন্নয়ন নাকি চোখে দেখে না। চোখ থাকতে যদি চোখে না দেখে, তাহলে আর কী বলার আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল তারাও ভোগ করছে। আর জিয়া-এরশাদ-খালেদা, সবই একই ইতিহাস। ১৯টি ক্যু এর মাধ্যমে হাজার হাজার সৈনিককে ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে খুন করেছে। জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। সে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছে।’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা তারা মেরে দিয়েছে। এজন্য খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। তিনি হলেন বিএনপির নেত্রী। বিএনপির আরেক নেতা মানি লন্ডারিংয়ে… তারা লুটপাটের কথা বলে। তারেক জিয়ার শাস্তিই হয়েছে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য। এরা হচ্ছে খুনি, মানি লন্ডারিংকারী, চোরাকারবারি। তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা মানায় না।’
যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়েছে। একসাথে ১০০টি সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে, এর আগে কখনো হয়নি। জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করায় যুবলীগের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তরুণ সমাজের দায়িত্ব এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। জাতির পিতা বলেছিলেন, এই মাটি-মানুষকে নিয়েই আমি দেশ গড়ব। দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকলে যে দেশের জন্য কিছু করা যায়, সেটি আমরা প্রমাণ করেছি।’
মঞ্চে শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের পক্ষ থেকে কাঠের ভেতর খোদাই করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি তুলে দেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। জাতির পিতার আরেকটি ছবি তুলে দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা।
দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে পেইন্টিং উপহার দেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। পরে যুবলীগের উত্তরীয় পরিয়ে দেন যুবলীগের নারীনেত্রীরা। সুবর্ণজয়ন্তীর লোগো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর যুবলীগের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়।
বেলা ২টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ সঞ্চালনা করেন যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী। সাংস্কৃতিক পর্ব সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ। প্রথমে সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘আমার পরিচয়’ কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তফা। ‘যুবলীগ শান্তির শারর্থী’ শিরোনামে একক নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিশেষ গান ‘বাঙালির নয়নমনি’ পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বেগম মমতাজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন তিনি। ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, তুমি হৃদয়ের বাতিঘর’ গানটির সঙ্গে যুবলীগের পতাকা নেড়ে সুর মেলান উপস্থিত লাখো জনতা।
তৃতীয় পর্ব পরিচালনা ও স্বাগত বক্তব্য দেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এর পর মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ ছাড়াও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত যুবলীগের সাবেক নেতাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এর পর কোরআনসহ অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের; দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।