প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যেন আমরা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করতে পারি।’
সোমবার (২১ নভেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আমাদের অর্থনীতি এখনও চলমান এবং প্রাণবন্ত। তবে সবার সহযোগিতায় আমরা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব।
তিনি বলেন, বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও করোনাভাইরাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে। বিশ্বব্যাপী সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে নিজস্ব খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতিটি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য সবার প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং গ্রেট ব্রিটেন থেকে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ব্রিটেন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে যে এটি অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস থেকে বিপর্যস্ত, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পৃথিবী আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর জন্য জ্বালানি, ভোজ্যতেল, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম পরিবহন খরচের পাশাপাশি বহুগুণ বেড়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি আমাদের দেশের মানুষকে যেন বৈশ্বিক সংকটে ভুগতে না হয়। সুতরাং সরকার বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করে আনছে।
২০০৮ এর নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়ে তার সরকার এ পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে বলেই আজকে আমরা দেশের উন্নয়ন করতে পারছি। তবে, দুর্ভাগ্য হলো করোনাভাইরাস যেতে না যেতেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বমন্দা এবং অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে।
মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষের জীবনমান যাতে সহজভাবে চলতে পারে তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু তাই না, যারা একেবারে বয়োবৃদ্ধ বা পঙ্গু, অসহায়, তাদের প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল আমরা দিচ্ছি বিনা পয়সায়। আমাদের যারা নিম্নবিত্ত, তাদের ৫০ লাখ মানুষকে আমরা ১৫ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছি। আরও এক কোটি মানুষকে আমরা কার্ড করে দিয়েছি, যাতে তারা তাদের প্রয়োজনীয় চারটি পণ্য চাল, ডাল, তেল, চিনি ক্রয় করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা স্বল্পমূল্যে মাত্র ৩০ টাকায় যাতে চাল ক্রয় করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। করোনার সময় আমরা গ্রাম পর্যায়ে নগদ অর্থ পর্যন্ত প্রেরণ করেছি, যাতে কোনো শ্রেণির মানুষ যেন এতটুকু অবহেলিত না থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটি বাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয় করে দিয়েছে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একে একে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলেছে, যাতে করে আমাদের সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বাসস