রাজশাহী
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে তালিকাভুক্ত সক্রিয় মাদক কারবারীরা প্রকার্শে দাপটের সাথে চলাফেরা করলেও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকায় প্রশাসন। আবার থানা পুলিশ বলছেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা মাদক কারবারিদের কে। অথচ দিব্বি এলাকায় মাদকের কারবার করে চলেছেন মাদক কারবারিরা।
গোদাগাড়ী উপজেলার উল্লেখযোগ্য মাদকের ডিলার ও গডফাদাররা হলেন,গোদাগাড়ীর শহিদুল ইসলামের ছেলে নাসির উদ্দীন, একই থানার বারুই পাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে হোসেন আলী, মাদারপুর গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে গোলাম মোস্তফা টিয়া, ইসরাইলের ছেলে ইবরাহীম মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের নাজিমুল ইসলামের ছেলে রায়হান, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সনি, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে হেলাল উদ্দিন, একই এলাকার মৃত মুরশেদ ফাটার ছেলে সাদিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে রমরমা মাদকের কারবার করে যাচ্ছেন তাঁরা। এতকিছুর পরেও ওদের থানা পুলিশ খুঁজে পাচ্ছেনা। নাকি দেখেও না দেখা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পথগুলো দিয়ে ব্যাপক হারে ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করছে হেরোইন, গাঁজা,ফেনসিডিল, দামি মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। ফলে ধ্বংসের দারপ্রান্তে গোদাগাড়ীর যুব সমাজ। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে প্রতিদিন মাদক চোরাকারবারিরা ভারত থেকে চোরাই পথে মদ,গাঁজা, হেরোইন ফেনসিডিল এনে মাদক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো রাজশাহী জেলাসহ বিভিন্ন এলাকার মাদকসেবীদের চাহিদা পুরন করে থাকে। এছাড়াও গোদাগাড়ীর হেরোইন,ফেনসিডিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমদানিও করা হয়।
ফলে দিন দিন দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ, উর্তি বয়সের ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরীরা পর্যন্ত মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা।
এতে করে নেশার টাকা যোগাড় করতে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, ব্ল্যকমেইল,প্রতারতাসহ সমাজে ধর্ষণ ও খুনের মত জঘন্য অপরাধ। আর এসব অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ভদ্র সমাজের শিক্ষিত পরিবারের সন্তানরা। এতে মাদকাসক্ত ছেলে-মেয়েদের জন্য ধ্বংস হচ্ছে পুরো পরিবার ও সমাজ। তাই মাদকের ভয়ংকর ছোবল থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনকে এখুনি মাদকের লাগাম টেনে ধরার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের বিশিষ্টজনরা।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে,মাদক পাচারের সবচেয়ে নিরাপদ রুটগুলো হলো গোদগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়া দহ, মানিকচক, কানাপাড়া। ভারত থেকে হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ গাজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য পাচার করে নিয়ে আসে নিজ বাড়ীতে কিংবা টাকার বিনিময়ে অন্যের বাড়ীতে রাখা হয়।সেগুলো কোন স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, গরুর রাখাল, সুন্দরী কিশোরী, গৃহবধূর মাধ্যমে পদ্মা নদীর এপারে গোদাগাড়ী পৌরসভার সিএন্ডবি, গড়ের মাঠ, মাদারপুর, হাটপাড়া, রেলওয়ে বাজার, কুঠিপাড়া, শিবসাগর, বারুইপাড়া প্রভৃতি এলাকার বাসাবাড়ীতে রেখে রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, চিটাগাং, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়ে থাকে। মাদকদ্রব্য পাচার, ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত রয়েছে গোদাগাড়ীর শত শত নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানি পণ্য পাচার ক্রয়- বিক্রয় তাদের একমাত্র পেশা।
বেসরকারী এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে গোদাগাড়ী উপজেলাসহ পৌরসভা এলাকার ৫ শতাধিক ব্যক্তি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন এবং লাখপতি হয়েছেন কয়েক হাজার। তাদের অবস্থান এখন সমাজের শীর্ষ স্থানে। কেউ কেউ কালো টাকার ছড়াছড়ি করে নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার, কাউন্সিলার, রাজনৈতিক দলের তথাকথিত প্রভাবশালী নেতা, কথিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। সংগত কারণে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গোদাগাড়ীতে মাদকদ্রব্য সেবন করে অকালে মারা গেছে শতাধিক মাদকসেবী। আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন হাজার হাজার মাদকসেবী। এইসব চোরাকারবারিদের গডফাদাররা নিয়োগ করেছেন শত শত মাদকসেবী এজেন্ট।
উপজেলার খেয়াঘাট ছাড়াও তারা ব্যবহার করছেন প্রাইভেট নৌকা, কার, মাইক্রোবাস, হোন্ডা, মোবাইল ফোন, ভারতীয় সিম এবং তাদের ভারতীয় এজেন্টদের নিকট রয়েছে বাংলাদেশী সিম যাতে সহজে অল্প খরচে সহজে কথা বলা যায়। ওই সব মাদক চোরাকারবারিদের গডফাদাররা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মোবাইল সিম ব্যবহার করে থাকেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্ত ডি.এম.সি চর আষাড়িয়াদহ প্রভৃতি এলাকায় কেজি কেজি হেরোইন, হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আসামিসহ আটক করে থানায় মাদক আইনে মামলা দেন। ওই সব মাদক সম্রাটদের মাদকের মালিক হিসেবে আসামি করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মাদক বহনকারি লেবারদের সাজা হয়। আর গডফাদাররা খালাস পায়। পরে গডফাদাররা উচ্চ আদালতে গিয়ে লেবারের জামিনে মুক্তি করায়। এক সময় খালাসও হয় তারা। মাদক ব্যবসায়ীরা সব সময় অসৎ জনপ্রতিনিধি, অসৎ রাজনৈতিক নেতা, পাতিনেতাদের হাত করে চলার চেষ্টা করে। প্রশাসনের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে অনেক সময় নিজেকে ক্ষমতাশীন দলের লোক, বিভিন্ন মহলে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন।
গোদাগাড়ী পৌরসভা ও উপজেলায় ভালো ভালো জায়গায় আলাতুলি, কোদালকাটি, চর আষাড়িয়াদহ এলাকার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা মাটি কিনে রাজকীয় বাড়ী তৈরি করেছেন এবং প্রধান প্রধান বাজারে দোকান কিনে কথিত মোবাইল দোকান, গার্মেন্টস, জুতা স্যান্ডেলের দোকান করেছেন। কিন্তু ওই সব দোকানে মূলত মালিক কোন সময় আসেন না। অন্য লোক দিয়ে সারা বছর চালানো হয়। ওই সব কথিত দোকান ও বাড়ীর আড়ালে চালানো হয় মাদক ব্যবসা। আবার অনেকেই সুখি নগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী মহানগরীতে দামি বিল্ডিং, নজরকাড়া শোরুম, এসি চেম্বার নিয়ে আয়েশি জীবন যাপনও করছেন। নেপথ্যে কোটি কোটি টাকার মাদকের চালান পাচার করাচ্ছেন লোক দিয়ে। গোদাগাড়ীর বেশকিছু স্থানীয়রা জানান, এ সকল চোরাচালানী, মাদক সম্রাটরা দেশ, জাতি, সমাজের শত্রু। এদের ভয়াল থাবা থেকে দেশ ও দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম যুবসমাজকে বাঁচাতে হলে যে কোন মূল্যে গোদাগাড়ী থেকে মাদক চোরাকারবার বন্ধ করতে হবে।
গোদাগাড়ীতে মাদকের ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যত শক্তিশালী হোক না কেন মাদক কারবারিদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না,পুলিশের পাশাপাশি জনসাধারণ কে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।