নিউজ ডেস্ক
দেশের কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন মুসল্লিরা। এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।
ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেছেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের।
তিনি আরবি ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর শুরু হয় মোনাজাত। মুসল্লিরা যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। এসময় কান্নায় বুক ভাসান তারা।
২০ মিনিটব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা জোবায়ের প্রথম মিনিটে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ মিনিট দোয়া করেন বাংলা ভাষায়। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু বন্ধ রাখা হয়।
আগামী মঙ্গলবার সকাল ১১ টার মধ্যে মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করবেন। মাঠ বুঝিয়ে দেওয়া হবে প্রশাসনের কাছে। পরে প্রশাসন মাওলানা সাদ অনুসারীদের কাছে ময়দান বুঝিয়ে দেবেন। ২০ জানুয়ারি বাদ ফজর থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীদের পরিচালনায় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। ২৩ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা।
আজকের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার সকালে চার দিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি পায়ে হেঁটেই টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাস্থলে পৌঁছেন। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন।
এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস- দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যাচ্ছিল সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ। সবাই অংশে নেন মোনাজাতে। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
এর আগে, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে তুরাগ অভিমুখে ঢল নামে মুসল্লিদের। আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে কামারপাড়া থেকে আব্দুল্লাপুর এবং আব্দুল্লাহপুর থেকে ভোগড়া বাইপাস সড়কে বন্ধ রয়েছে, যান চলাচল। ঘন কুয়াশা বা শীত কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছের কাছে। লাখো মানুষের পদভারে মুখর ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকা।
আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা।