স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা
ফটকের সামনে প্রথমেই চোখে পড়বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ভেতরে পুকুরপাড়ে পাকা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে দৃষ্টি কাড়বে হারিকেন দিয়ে তৈরী ব্যতিক্রমী বৈদ্যুতিক লাইট। কিছুদূর সামনেই পার্কের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক গ্যালারী। যেখানে ছবি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবনী। তার পাশেই নৌকার আদলে একটি ছোট্ট দৃষ্টিনন্দন পাঠাগার। সেখানে রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত বই। আর আছে শিশুদের জন্য কয়েকটি রাইড।
এমনই এক ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টিনন্দন পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার বড়ালব্রিজ মাঠের পাশে। যেখানে বিনোদনের সাথে মিলবে বাংলাদেশের ইতিহাস। শিশুরা বেড়ানোর আনন্দের পাশাপাশি জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর জীবনী। ‘ছায়াকুঞ্জ পৌর পার্ক’ নামে এই বিনোদন পার্কটি তৈরী করেছে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনায়েন রাসেল।
রোববার (১৫ জানুয়ারী) দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে ফলক উন্মোচন করে, ফিতা কেটে ‘ছায়াকুঞ্জ পৌর পার্ক’ উদ্বোধন করেন পাবনা-৩ আসনের সাংসদ ও ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মকবুল হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ মকবুল হোসেন বলেন, শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বিনোদন দরকার। উপজেলা পর্যায়ে ভাঙ্গুড়া ছায়াকুঞ্জ পৌর পার্ক একটি মাইলফলক। কোন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, স্থাপনা নির্মাণ খুব সহজ। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও টিকিয়ে রাখা বড় কঠিন। এটা শুধু নির্মাণ নয়, এটাকে সচল ও ভালো রাখতে হলে এর রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী।
তিনি বলেন, চায়ের দোকানে বসে সরকার দেশ ধ্বংস করে দিলো এগুলো বিশ্লেষণ না করে, সরকার আপনাদের জন্য কি উন্নয়ন করেছে সেটা নিয়ে গবেষণা করুন। দেখবেন নিজে থেকে লাভ লোকসানের হিসেব পাবেন।
নেতা-কর্মীসহ সচেতন মানুষের উদ্দেশ্যে সাংসদ মকবুল হোসেন বলেন, জনগণের মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের ভালো কাজ, সফলতার গল্প শোনান। আগামীতে এই উন্নয়নের ধারা ও সার্বিক পরিস্থিতি চলমান রাখতে হলে নৌকা প্রতিকের বিকল্প নেই।
ভাঙ্গুড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েন রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাকিবিল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান, ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন ছবি, সাইদুর রহমান, সরকারী হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রতাপ কুমার মন্ডল, সরকারী ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ রঞ্জু, জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম আলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিদা পারভীন পাখি, জেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য আফিয়া সুলতানা আঁখি, হাজী গয়েজ উদ্দিন ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসার অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম, পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান গণি প্রামানিক, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ছানা প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আইনজীবী, সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ইমরান হোসেন রাসেল।
পার্কটিতে দৃষ্টিনন্দন বৈদ্যুতিক ৪টি কোচ সংযুক্ত ট্রেনগাড়ী, ৮টি আসনের সুইং, ৬টি আসনের ম্যারি গো রাউন্ডসহ শিশুদের জন্য বেশি কিছু হাতি, ঘোড়া ও পুকুরে প্যাডেল বোড রয়েছে। সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আর্কষন করে তৈরী করা হয়েছে ছায়াকুঞ্জ পৌর পার্কের দক্ষিণ অংশে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী কর্ণার ও নৌকার আদলে লাইব্রেরী।
উদ্যোক্তা ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনায়েন রাসেল বলেন, বর্তমান প্রজন্ম শিশু, কিশোর, তরুণ সবাই ইন্টারনেট ও মোবাইলফোনে বুদ হয়ে আছে। অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। প্রকৃত ইতিহাস অনেকে জানে না। শিশুদের লেখাপড়ার বাইরে বেড়ানোর মতো কোনো জায়গা নেই। তাই বিনোদনের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রকৃত ইতিহাস জানাতে এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা হাসান খান বলেন, এমন একটি উদ্যোগ নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে সববয়সী মানুষের জন্য খুব প্রয়োজন ছিল। বিনোদন পার্ক করার মতো ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় জায়গার অভাব রয়েছে। তার মধ্যেও এমন একটি ইতিহাস সম্বলিত বিনোদন পার্ক করার উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বাকিবিল্লাহ বলেন, ভাঙ্গুড়া ছোট্ট একটি জায়গা, মানুষের বসার মতো বা বেড়ানোর মতো নেই জায়গা বললেই চলে। সেখানে ছায়াকুঞ্জ পৌর পার্ক সেই অভাব কিছুটা পূরণ করবে বলে মনে করি। এজন্য ভাঙ্গুড়া পৌর মেয়রকে সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানাই।