রাজশাহী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি গোষ্ঠী। পুলিশ বাহিনী পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস, বোমাবাজ, জঙ্গিদের প্রতিহতে কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় তিনি করোনাকালীন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের মানুষের সেবায় নিয়োজিত রাখার অবদান স্মরণ করেন।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলে।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে তিনি প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী কর্মকর্তাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। সবশেষে তিনি নবীন কর্মকর্তাদের মার্চপাস্ট উপভোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবার আগে পুলিশ বাহিনীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে জনগণের ভূমিকা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। সেখানে বাংলাদেশ পুলিশকেও স্মার্ট পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য পুলিশ বাহিনীকে সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে।
সাইবার ক্রাইম রোধে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে সরকারপ্রধান বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে। দেশের মানুষ এখন ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে। তবে এর ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি অনেক খারাপ দিকও রয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাইবার ক্রাইম, জালিয়াতি, জঙ্গিবাদ বাড়ছে। এসব অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ দেশের মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষ এ নম্বরে কল করে দ্রুত সেবা পাচ্ছে। বিপদে তারা পুলিশের তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছে। ফলে তাদের পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়ছে। নারী নির্যাতন রোধ ও সন্ত্রাস দমনেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে এ সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছে।
বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে সব সংকট কাটিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
সরকার কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ভর্তুকি দিয়ে সার, বীজ কৃষকদের দ্বারে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এখন অনাবাদী জমিতে চাষাবাদ বাড়াতে হবে। আমাদের দেশের মাটি উর্বর। এ মাটি ব্যবহার করে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। তাহলে আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও খাদ্য রপ্তানি করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্যসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।