November 24, 2024, 5:40 am

News Headline :
রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি যুবদল নেতা রবি’র পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে কোথাও স্থাপনা করতে না পেরে শেষমেস ভাঙারির দোকানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ: নাছিম রাজশাহীতে আলু ও তেলের দাম বাড়তি রাজশাহীতে ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বললো মহানগর ছাত্রদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে খালেদা জিয়ার মতবিনিময় দেশের সকল ক্ষমতার মালিক হবেন জনগণ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন দালালের ফাইলে আগে সই করেন রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের ডিডি
সবার চাওয়া-পাওয়া মিলিয়ে ইছামতি নদীকে প্রবাহমান করতে হবে : ডেপুটি স্পিকার

সবার চাওয়া-পাওয়া মিলিয়ে ইছামতি নদীকে প্রবাহমান করতে হবে : ডেপুটি স্পিকার

স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেছেন, আওয়ামীলীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই ইছামতি নদী নিয়ে ভেবেছে। কিন্তু কেন সেই ভাবনা বাস্তবায়ন হয়নি সেটি বলতে চাইনা। তবে সবার চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়া মিলিয়ে ইছামতি নদী উদ্ধার ও খনন করে সবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে সবার স্বার্থ সংরক্ষণ হবে। এজন্য দখলদারী মনোভাব থেকে পিছিয়ে আসতে হবে।

শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পাবনা জেলা পরিষদের রশিদ হল মিলনায়তনে পাবনার সুধীসমাজের প্রতিনিধি কর্তৃক আয়োজিত ইছামতি নদী পূনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, শহরের সকল পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ইছামতির নদীর যেটুকু আছে, সেটুকু ঘিরে দৃষ্টিনন্দন করা দরকার। নদীর নাব্যতা ফেরাতে, সৌন্দর্য বর্ধন করতে হবে। কর্মসংস্থানের খাত সৃষ্টি করতে হবে। যুগ যুগ ধরে নেতৃত্বের ব্যর্থতা, প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে ইছামতির নদীর আজ এ অবস্থা। ক্ষতিগ্রস্থরা এগিয়ে আসবেন, আমরা যাবো। ইছামতি নদী সচল দেখতে চাই। সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে। বিভেদ করে পাবনার উন্নয়ন পিছিয়ে গেছে।

পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সমাজ হিতৈষী মুসতাক আহমেদ সুইট প্রমুখ। সভায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে ইছামতি নদী ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন পাউবো পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন ও মুস্তাক আহমেদ সুইট।

মতবিনিময় সভায় পাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, পদ্মা নদীতে সেতু হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে যেভাবে পূনর্বাসন করা হয়েছে। তেমনিভাবে ইছামতি নদী ঘিরে সরকারি উদ্যোগ নেয়া গেলে আমরা সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতে পারি। ক্ষতিগ্রস্থদের একসাথে নিয়ে সবার সম্মিলিতভাবে ইছামতি নদীকে সুন্দর করা সম্ভব। সবার সাথে মতবিনিময় করে ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসন করে সুন্দরভাবে কাজ করা সম্ভব।

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বলেন, ইছামতি নদী যদি পরিষ্কার করে পাবনাবাসীর জন্য চিত্ত বিনোদনের জন্য তুলে ধরতে চাই তাহলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। আর সরকারি উদ্যোগ থাকতে হবে। তাহলে পাবনাবাসীকে সুন্দর একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নদী উপহার দেয়া যাবে। ইছামতি নদী যতটুকু আছে ততটুকু নিয়েই সুন্দর করে তোলা সম্ভব। এটা নিয়ে ভাঙা গড়ার খেলা আর দেখতে চাইনা, চোর পুলিশ খেলতে চাই না। সবাই একসাথে থাকতে চাই। নদীর দুইপাড়ে ওয়াকওয়ে করে সুন্দর পরিষ্কার একটা নদীর জন্য আমার সহযোগিতা সবসময় থাকবে।

পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম বলেন, ইছামতি নদী খনন হওয়া দরকার, খনন হতে হবে। আর যারা ক্ষতিগ্রস্থ তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সকল ষড়যন্ত্র ভেঙে একসাথে একযোগে পাবনার উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, ইছামতি নদী উচ্ছেদ কার্যক্রমের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ আর খনন কাজে অগ্রগতি ২০ শতাংশ। এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনার মধ্যে এ পর্যন্ত ৬০১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ঠিকাদাররা আর মেয়াদ বৃদ্ধি করেননি। তাদের বারবার চিঠি দেয়া হলেও তারা কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করছে না। তার কারণ হিসেবে ঠিকাদাররা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে তারা কাজ করতে পারছেন না। আশার কথা, ইছামতি নদী বাঁচানোর জন্য ৩৬ কিলোমিটার নদী ঘিরে ৮৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তত করা হয়েছে। ইছামতি নদী নিয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণাগার স্থাপনেরও প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

বেলা’র রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তন্ময় স্যানাল বলেন, আমরাও চাই ইছামতি নদী বেঁচে থাক। প্রাণ ফিরে পাক। ইছামতি নদী কেন্দ্রিক সকল প্রাণী টিকে থাক। শহরবাসী বিশুদ্ধ শ্বাস নিক। এজন্য যেকোনো আইনী সহায়তা দিতে আমরা পাশে আছি।

পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, ১০ বছরে ইছামতি নদী ঘিরে যে স্বপ্ন তার কাঙ্খিত অগ্রগতি হয়নি। আমরা ইছামতি নদী খনন চাই। সেইসাথে যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক।

সভায় নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ স্বার্থ সংরক্ষন কমিটির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিন্টু বলেন, আরএস রেকর্ড মোতাবেক তিনবার নদীর সীমানা নির্ধারণ করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসকসহ ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবারকে ভিটেছাড়া করা হয়েছে। তারা খোলা আকাশের নিচে বাস করতে হচ্ছে। অনেকেই উচ্ছেদ আতংকে রয়েছেন। ৭০-৮০ বছর ধরে বসবাস করছি, চারটি রেকর্ডের সব কাগজপত্র রয়েছে। যুগের পর যুগ খাজনা পরিশোধ করা স্বত্ত্বেও বারবার আমাদের অবৈধ বলা হচ্ছে। এই কষ্টের শেষ নেই। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দেন, সবাই উঠে যাবে।

ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলনের সভাপতি এস এম মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি বলেন, ইছামতি নদী খনন করা গেলে শহরের পরিবেশ সুস্থ্য ও সুন্দর হবে। পানির সংকট হবে না। ৩৮ কিলোমিটার নদী খনন হলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের সদস্য ড. এস এম নাসিফ শামসসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি, নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ, গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.