November 25, 2024, 11:46 am

News Headline :
সীমাহীন দূর্নীতির পরও বহাল তবিয়তে মোহনপুরের ইউএনও আয়শা সিদ্দিকা রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি যুবদল নেতা রবি’র পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে কোথাও স্থাপনা করতে না পেরে শেষমেস ভাঙারির দোকানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ: নাছিম রাজশাহীতে আলু ও তেলের দাম বাড়তি রাজশাহীতে ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বললো মহানগর ছাত্রদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে খালেদা জিয়ার মতবিনিময় দেশের সকল ক্ষমতার মালিক হবেন জনগণ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
ই-মুভি অ্যাপে ডলার বাণিজ্য করতে গিয়ে প্রতারিত রাজশাহীর হাজারও যুবক

ই-মুভি অ্যাপে ডলার বাণিজ্য করতে গিয়ে প্রতারিত রাজশাহীর হাজারও যুবক

 

‘ই-মুভি’ এই চীনা অ্যাপ ব্যবহার করে বিদেশি সিনেমার টিকিট কিনে ডলার–বাণিজ্য করতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন রাজশাহীর হাজার হাজার যুবক।

চীনা একটি অ্যাপে সিনেমার টিকিট কিনলেই ডলার মিলবে, এ আশায় ওই অ্যাপে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলে রাজশাহীতে প্রতারিত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। গতকাল সোমবার থেকে তাঁদের হিসাব নম্বর শূন্য হয়ে গেছে। এখন তাঁরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এ কার্যক্রম চালানোর জন্য রাজশাহী নগরের সিরোইল কলোনিতে একটি কার্যালয় খোলা হয়েছিল। মঙ্গলবার থেকে ওই কার্যালয়েও তালা ঝুলছে।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘ই-মুভি’ নামে একটি চীনা অ্যাপ ব্যবহার করে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। নগরের সিরোইল কলোনি এলাকার সাড়ে তিন নম্বর গলির মানিক নামের এক ব্যক্তি রাজশাহীতে এই অ্যাপের প্রচার শুরু করেছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, অ্যাপে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি হিসাব নম্বর খুলতে হয়েছে। এই টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশের সিনেমার টিকিট কিনতে হয়েছে। টিকিট কিনলেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হিসাব নম্বরে মুনাফা যোগ হয়েছে। তবে টিকিট কেনার জন্য টাকাকে ডলারে পরিণত করতে হয়েছে।

বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে টাকা পাঠালেই তা ডলার হয়ে ব্যবহারকারীর হিসাব নম্বরে দেখা দেয়। তবে যিনি যত বেশি টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলবেন, তাঁর মুনাফার হার তত বেশি। আবার অন্যজনকে হিসাব নম্বর খুলে দিলেও নিজের হিসাব নম্বরে ডলার যোগ হতো। গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামে পর্যন্ত এই অ্যাপ যুবসমাজের মধ্যে ঝড় তুলেছিল। কোনো কাজ না করে রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য তাঁরা বেশি টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলে বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন।

আরও এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের কেউ নিজের মোটরসাইকেল বিক্রি করেও এই হিসাব নম্বর খুলেছেন। প্রথম দিকে যাঁরা করেছেন, তাঁরা টাকা তুলেছেন। কেউ কেউ অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। জমা হওয়া টাকা বিকাশ বা নগদের মাধ্যমেই ‘ক্যাশ আউট’ করা গেছে। মানিকের কার্যালয় থেকে কয়েক দিন আগে ঘোষণা দেওয়া হয়, রাজশাহী শহরে এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিরোইল কলোনির সেই কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা ঝুলছে। দরজার এক পাশের দেয়ালের সঙ্গে ‘বিল বিকাশ’ লেখা রয়েছে।

সেখানে রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকার হিমেল নামের এক যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে মানিক নামের ওই ব্যক্তি তাঁকে বুঝিয়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি হিসাব নম্বর খুলিয়েছিলেন। তাঁর হিসাব নম্বরে মুনাফাও যোগ হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে আর ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাচ্ছিল না। মানিক বলেছিলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে টাকা তোলা যাবে। কিন্তু ওই দিন সবার হিসাব নম্বর শূন্য হয়ে গেছে। তারপর ‘মু জি লি’ নামের একজন চীনা ব্যক্তি সবার মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, যাঁর যত টাকা হয়েছিল, তার ৩০ শতাংশ পরিমাণ টাকা এখন জমা দিলে মুনাফাসহ আবার হিসাব নম্বর থেকে টাকা তোলা যাবে। হিমেল বলেন, এই বার্তা আসার পর তাঁরা সবাই ফাঁকিটা বুঝতে পেরেছেন।

সেখানে একই এলাকার ফাহিম নামের এক যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তাঁর দুটি হিসাব নম্বর ছিল। একটিতে ১১১ ডলার ও অপরটিতে ৯৫ ডলার জমা হয়েছিল। গত সোমবার থেকে হিসাব নম্বর শূন্য হয়ে গেছে। এখন বুঝতে পারছেন, এই টাকার ৩০ শতাংশ জমা দিতে বলাটাও একটা নতুন ফাঁদ। তিনি বলেন, মানিককে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর ফোন বন্ধ। কেউ জানেন না মানিকের বাড়ি কোথায়।

ই-মুভি প্ল্যানের রাজশাহীর এজেন্ট আজমল হুদা মানিক (ডানে) এবং তার শালক সিয়াম (বামে) অফিস রাজশাহী শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিরোইল কলোনি সাড়ে ৩ নম্বর গলির ৫১৩ নম্বর ভাড়া বাড়িতে। গতকাল সকালে ওই অফিসের অবস্থান জানতে চাইলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের কর্মী মো. তন্ময়ের প্রশ্ন, ‘অনলাইনে কাজ করে ওই মানিক? ধরা খাইছেন?’ তিনি জানান, মানিক এখানে অফিস করার পর কাউন্সিলরের কার্যালয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছিল।

মানিকের অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেটি তালাবদ্ধ। কিছুক্ষণ পর তাঁকে খুঁজতে মোটরসাইকেলে চড়ে এলেন কয়েকজন যুবক। তাঁদের একজন মোবাইলে কাউকে বলছিলেন, ‘আমাকে সাত দিন আগে পামপট্টি মেরে ই-মুভিতে ঢুকিয়ে দিল মামা! আমি ১২ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে এমনভাবে মুরগি বানালো মামা!’

কথা বলে জানা গেল, ওই যুবকের নাম হিমেল। বাড়ি শহরের উপশহরে। সঙ্গে আসা ফাহিম ও রিংকুও ই-মুভিতে বিনিয়োগ করেছেন। তাই এজেন্ট মানিককে ধরতে এসেছেন। তাঁর মোবাইল নম্বরও বন্ধ। সোমবার রাতে মানিক টেলিগ্রাম গ্রুপে এক বার্তায় বলেছেন, নিজের ডলার নিয়েই তিনি বিপাকে পড়েছেন। তাঁকে যেন কেউ ফোন করে বিরক্ত না করেন।

বিষয়টি জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে মানিকের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ই-মুভির এই প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি হংকংয়ের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। টেলিগ্রামে বার্তা পাঠানো হলেও কেউ সাড়া দেননি।

প্রতারণার শিকার এক তরুণ জানান, ই-মুভিতে তাঁর প্রায় ২ লাখ ডলার জমা হয়েছিল। কিন্তু টাকা ওঠানো যাচ্ছিল না দেখে তিনি কাস্টমার সার্ভিসের গ্রুপে যোগাযোগ করেন। গ্রুপটি পরিচালনা করা হতো হংকংয়ের +৮৫২৬৭৩৫৭৬২১ নম্বর থেকে। কিন্তু উত্তর মেলেনি। পরে মু লি জি নামের টেলিগ্রাম আইডি থেকে জানানো হয়, তাঁর ই-মুভিতে যত ডলার আছে তার ৩০ শতাংশ ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে ডিপোজিট করলে তিনি তাঁর সব ডলার ভাঙাতে পারবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলী বলেন, ‘আমরা ই-মুভি প্ল্যানের নামে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বা যে অভিযোগ উঠছে সেগুলোর সত্যতা পেলে বিটিআরসিকে সাইটটি বন্ধ করতে বলব।’ তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা অভিযুক্ত ৩৩১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করিয়েছি। আরও ৬৯টি ওয়েবসাইটের নাম গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে।’

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, ‘ই-কমার্সের নামে এ ধরনের ব্যবসা করা হলে আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান না হলে কিছু করার এখতিয়ার আসলে আমাদের নেই।’

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, ‘আমরা নিজেরা কোনো সাইট বন্ধ করি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা কোনো সংস্থা আমাদের কাছে সুপারিশ করলে আমরা সেটা বন্ধ করতে পারি। ই-মুভি প্ল্যান বন্ধের বিষয়ে যদি কোনো সুপারিশ আসে, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সব ভাঁওতাবাজি। প্রতারিত কেউ অভিযোগ করলে এখানকার এজেন্টদের খুঁজে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.