নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে বিভ্রান্তিমুলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার লক্ষ্যে শনিবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) রাজশাহীতে “কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং স্থানীয় পত্রিকাগুলোর সিনিয়র সম্পাদক ও সাংবাদিক, ফ্যাক্ট-চেকার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশগ্রহণ করেন।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে, দেশে সাংবাদিকতার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং এর ফলে বিভ্রান্তিমুলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়িয়ে পড়ার দিকটিও আলোচনা করা হয়। আলোচিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে তথ্য সংগ্রহে বাঁধা দেয়া বা তথ্য না দেয়া, সরকারের স্বদিচ্ছার অভাব ও ভুল তথ্য প্রদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়, রিপোর্টারদের নিয়মিত কাজের চাপ ও তার ফলে মানসম্পন্ন সংবাদের ঘাটতি, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মিডিয়া হাউজ ও তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন ইত্যাদি। এছাড়াও, সংবাদ মাধ্যমে নির্ভুল তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফ্যাক্ট-চেকারদের সাথে সমন্বয় ও কিভাবে তথ্য যাচাই করা যায় তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
আলোচনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক, ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, “সরকার, বিরোধী দল, বিশেষ কোনো ব্যক্তি এবং অনেকসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে থাকেন। ফলে, গবেষণা অনুসারে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব তথ্য বিশ্বাস করতে পারছেন না।“ তিনি আরও বলেন, “আমরা বাস করছি তথ্যের মহাসমুদ্রে। এই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া কে তথ্যের উৎস থেকে বাদ দেয়া যাবে না”। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকতার প্রতিকূলতা এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।
পরবর্তীতে, ফ্যাক্ট চেকিং ইন্সটিটিউশন, ডিসমিস ল্যাবের প্রধান গবেষক, মিনহাজ আমান বলেন “সংবাদ প্রতিবেদকদের উচিৎ যেকোনো সংবাদ প্রতিবেদনের পূর্বে ফ্যাক্ট চেকিং এর বিষয়গুলো মাথায় রাখা”। তিনি আরও বলেন “ভুল তথ্য ছড়িয়ে পরার এই সমস্যা প্রশমিত করতে সম্পাদক, বার্তা-সম্পাদক, সহকারি সম্পাদক এবং প্রতিবেদক, সবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিৎ”। তিনি উল্লেখ করেন “কোন মূলধারার মিডিয়া কোন ধরনের ভুল তথ্য ছড়িয়েছে সেসব চিহ্নিতকরণ এবং বিভিন্ন জাল খবর খুঁজে বের করার চেষ্টা তারা করে যাচ্ছেন”। সংলাপের শেষ পর্বে গণমাধ্যমকর্মীরা একটি জরিপে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংবাদ মাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য উপস্থাপন রোধে কার্যকরি ব্যবস্থার বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেন।
“কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ” সিজিএস’র উক্ত বিষয়ের উপর ধারাবাহিক কার্যক্রমের পঞ্চম আয়োজন এবং এর পরে ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে এমন আলোচনা ও প্রশিক্ষণ আয়োজিত হবে। সংলাপের সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।