রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ‘স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে জোহা চত্বরে তাঁর এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অথর্নীতিসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত আছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এর আগে গতকাল সোমবার রাতে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাবি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসী এবং পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে আগামীকাল ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকব। আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাতে জোহা চত্বরে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগ্নপদে দাঁড়িয়ে অবস্থান করব। শিক্ষার্থীদের ওপর এই পৈশাচিক হামলায় একজন অভিভাবক হিসেবে আমি শঙ্কিত, ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। আমার ছাত্রের রক্তের দাগ এখনো মুছেনি, শরীরের ব্যথা এখনো কমেনি, মাথা–চোখ, শরীরের ব্যান্ডেজ এখনো খুলেনি, সেলাই এখনো কাটেনি, হাসপাতাল থেকে এখনো ছাড়েনি। এই অবস্থায় আমি ক্লাস নিতে পারি না।’
জোহা চত্বরে কর্মসূচির শেষের দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফরিদ উদ্দিন। ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এর সুরাহা হচ্ছে না। অভিভাবকরা এখানে তাঁদের সন্তানদের লেখাপড়া করার জন্য পাঠান, তাঁরা এ বিষয়গুলোয় চরম উদ্বিগ্ন। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত ব্যথিত ও ক্ষুব্ধও বটে।’
অনেক মহল এ বিষয়টাকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন ফরিদ উদ্দিন খান। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী সিটি মেয়র বলেছেন, যতক্ষণ ছাত্রলীগ নেতৃত্বে ছিল, ততক্ষণ কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ৯টার পরে যখন ছাত্রলীগ সরে যায়, তখন নাকি বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতৃত্ব নিয়ে উসকানি দিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ধরনের কথা বলে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন। এটা দুঃখজনক।’
ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ঘটনা ঘটেছে ছয়টার দিকে। ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা গেছে ৯টা কিংবা তারও পরে। এই যে দীর্ঘ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটেছে, এখানে তাদের অসহযোগিতা ছিল। পরবর্তী সময়ে পুলিশই কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক সময় পেয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের ফেরাতে পারেনি। উপাচার্য সেখানে গিয়ে রাত ১০টা নাগাদ ঘোষণা দিলেন ক্লাস-পরীক্ষা দুই দিন বন্ধ। উনি সেখান থেকে প্রশাসনিক সবাইকে নিয়ে চলে এলেন। সেই সময় বিনোদপুর গেটে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অভিভাবক ছিলেন না। তারপরই পুলিশ চড়াও হয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে, গুলি করেছে। এই রকম একটি পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হয়নি সেখানে শিক্ষার্থীদের রেখে চলে আসা। তাদের উচিত ছিল সবাইকে নিয়ে আসা।