নাহিদ ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীর হেতমখাঁ এলাকায় সিটি করপোরেশনের নির্মিত রাস্তায় রাতারাতি গেইট লাগিয়ে ঘিরে ফেলেছে কয়েকটি পরিবার। অথচ এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে সিটি করপোরেশনের ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আসছিলেন।কয়েকটি পরিবারের কারণে আশপাশের এলাকার মানুষের নিয়মিত চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গেছে।
এ নিয়ে ওই এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েও বিষয়টির কোনো সুরাহা করতে পারেনি।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে- হরিজন পল্লীর গেইটের উত্তর দিকে প্রায় ১৮০/২০০ ফুট লম্বা এবং ৯/১০ ফুট চওড়া সিটি করপোরেশনের নির্মিত রাস্তায় পানির লাইন, ইলেকট্রিক পোল দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন এবং গ্যাস লাইন দেওয়া রয়েছে।যেখান থেকে রাস্তার দুই পার্শর সব মানুষ সুবিধা নিয়ে থাকে।
এই রাস্তা এস, এ, ৪৪২৪ এবং আর, এস, ১২০৯ দাগে সর্বসাধারণের জন্য রাস্তা উল্লেখ রয়েছে এবং এখানে প্রতিদিন নিয়মিত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিছন্নতা কর্মীরা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে নিয়ে যান।১৯৯৬ সালে হঠাৎ করেই কিছু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশে সিটি করপোরেশনের রাস্তাটি নিজেদের দাবি করে। পরে গুটিকয়েক ব্যক্তি তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সর্বসাধারণের চলাচলের রাস্তায় ইঁট-বালু দিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশ বরাবর উঁচু করে দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেয়। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী জনসাধারণ সিটি কপোরেশন বরাবর অভিযোগ দিলে তারা সরেজমিনে এসে দেখে এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এলাকার জনগণ ওই মূহূর্তেই প্রাচীরটি ভেঙে ফেলেন।একই সময়ে ভুক্তভোগী পরিবার জেলা রাজশাহী সদর সহকারী জজ আদালতে রাস্তাটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখার আবেদন জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে জেলা রাজশাহী সদর সহকারী জজ আদালত, মোকদ্দমা নং- ১৮৮/৯৬ অঃপ্রঃ আবেদনের প্রেক্ষিতে এস, এ, ৪৪২৪ এবং আর, এস, ১২০৯ সর্বসাধারণের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত থাকবে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে ১২/৫/০২ সালে বিজ্ঞ আদালত রায় দেন। তবে আবারও বিভিন্ন অজুহাতে আদালতের রায় এবং সিটি করপোরেশনের আদেশ আমান্য করে ডা. সাবের আলী, সাহিদ আলী, (হেতমখাঁ, হরিজন পল্লিগেট সংলগ্ন) নার্গিস বেওয়া শামীম হোসেন, সবুজ, সাইদুল, সাগর, নাঈম জোটবদ্ধ হয়ে ওই রাস্তায় গেইট নির্মাণ করে দিয়েছেন। তারা অসৎ উদ্দেশে সিটি করপোরেশনের রাস্তাটি নিজেদের বলে দাবি করছেন। গতকাল ২৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে সর্বসাধারণের চলাচলের রাস্তায় গেইট স্থাপন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। তবে তারা এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।এদিকে ওই এলাকার ভুক্তভোগী অধিবাসী নজরুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় অর্ধেক মাটি আমাদের ছাড়া রয়েছে, তার পরেও আমাদেরকে এই রাস্তায় চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করছে। এখন আবার নতুনভাবে আমাদেরকে স্থায়ীভাবে চলাচল বন্ধের জন্য বিভিন্ন অজুহাতে এই রাস্তার ওপরে গেইট নির্মাণ করেছেন তারা।ভুক্তভোগী মামুন রেজা বলেন, আমার বাবা-দাদার আমল থেকে এই রাস্তা জনসাধারণ ব্যবহার হয়ে আসছে। রাস্তার পশ্চিম পাশ বরাবর আমাদের বংশধররা রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে তারপর বাড়িঘর করেছেন। যা এখন রাজশাহী সিটি করপোরেশন ইঁট-বালু দিয়ে পাকা রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এখন গ্যাস লাইন, পানির লাইন, কয়েকটি পোলসহ ইলেকট্রিক লাইন স্থাপন করা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- আদালতের রায় রয়েছে সর্বসাধারণ চলাচল করতে পারবে। আর সরকারি রাস্তায় জনগণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা বেআইনি বলেও উল্লেখ করেন মামুন রেজা। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম তজু বলেন ভিন্ন কথা। তিনি উল্টো গেইট নির্মাণকারীদের পক্ষ নিয়ে বলেন, গেইট করলে সমস্যা কোথায়? সবার কাছে চাবি থাকলেই হলো। যার যখন প্রয়োজন পড়বে সে তখন ওই তালা খুলে ঢুকবে-বের হবে। কয়েকটা বাড়ি নিয়ে এই রাস্তা, তাই কী সমস্যা? আর রাস্তাটি তাদেরই। সিটি করপোরেশন কেবল পাকা করে দিয়েছে বলেও জানান- ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, অবৈধভাবে গেইট নির্মাণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বসে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বলা হয়েছে। আর তা না হলে মামলা করতে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি।