নিয়ামতপুর প্রতিনিধি: নওগাঁর নিয়ামতপুরের রামগাঁ সাহাপুর (আরএস) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রামগাঁ সাহাপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার ও সভাপতি, বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও অত্র ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক সদস্যসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
গত ১৫ মার্চ বুধবার নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবর টাকা আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয় জনগণের পক্ষে এক সচেতন ব্যক্তি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের যোগ সাজসে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ একেবারে শেষ করে ফেলেছে। শুধুমাত্র খাতা কলমে তথ্য প্রদান করলেও বাস্তবে পাঠদান, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অধিক অর্থ আদায়, রশিদ ছাড়া অর্থ আদায়, ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন এবং নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ।এ বিষয়ে অভিভাবক রামগাঁ গ্রামের সিদ্দিক হোসেন বলেন, সভাপতির বাড়ীতে বোর্ড বসিয়ে গোপনে নিয়োগ প্রদান করা হয়। অফিস সহায়ক, লাইব্রেরীয়ান ও নৈশ্য প্রহরী। এসব পদে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আদায় করেছে। অর্থ বিদ্যালয়ের কোন উন্নয়নমূলক কাজ করেনি। ক্লাস রুম জরাজির্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এছাড়া বিদ্যালয় মাঠে একটি জিগার গাছ ছিল তার আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ টাকা।৭/৮ মাস পূর্বে গাছটি কাটা হয়েছে। অর্থ সে গাছের টাকা বিদ্যালয়ের কোন কাজে আসেনি। সব টাকা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির পকেটে। ৫ বছর পূর্বে প্রধান শিক্ষক নিয়োগেও ১৩ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। সে টাকারও কোন হিসাব নেই।
অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপুল রানা বলেন, আমি ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। করোনার কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় সরকার ফরম পূরণের টাকা ফেরৎ প্রদান করেছেন। অথচ প্রধান শিক্ষক আমাদের কোন টাকা ফেরত প্রদান করেন নাই। ফরম পূরণের জন্য প্রধান শিক্ষক বোর্ডের নির্ধারিত ফি না নিয়ে জোরপূর্বক ২ হাজার ৫শ টাকা নিয়েছিল।
একই সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী তুহিন রানাও একই অভিযোগ।
আমলা পুকুরের লগেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে উজ্জ্বল কুমার অভিযোগ করে বলেন, আমাকে পিয়ন পদে নিয়োগ দেবে বলে প্রধান শিক্ষক আমার কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত আমার চাকুরী হয়নি এমনকি টাকাও ফেরত প্রদান করেন নাই।
অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য রতন মন্ডল বলেন, বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল। কোন কাজ না করেই টাকাগুলো প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে।
এ বিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার এ প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা যৌথ নামে বিদ্যালয়ের হিসাব খোলা হয় ২১ ডিসেম্বর ২০২১ সালে। তখন এডহোক কমিটি থাকার কারণে কোন টাকা উত্তোলন করা যায় নাই। আমরা ২৩ সালের জানুয়ারীতে পুরোপরি কমিটি পেলাম। কয়েকদিন আগে টাকাগুলো উত্তোলন করে শিক্ষার্থীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে ২শ ৮০ টাকা করে রেজুলেশনের মাধ্যমে ফেরত প্রদান করা হচ্ছে।
গাছ টাকার বিষয়ে বলেন, মাঠে অত বড় কোন ছিলো না। একটি ছোট গাছ ছিল তা ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল। সেটা এলাকার জনগণ নিয়ে চলে গেছে। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত কোন বক্তব্য নেই। ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে আসে নাই। আমার কাছ আসলে কেন আমি অভিযোগ গ্রহন করবো না। আর নিয়োগ বোর্ড সম্পর্কে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। বিদ্যালয়েই সকলের সামনেই নিয়োগ বোর্ড বসেছিল। বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।