নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাগমারায় মানসিক ভারসাম্যহীন ও শারীরিকভাবে অসুস্থ এক নারীর জমি অবৈধভাবে লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাগমারা দলিল লেখকের যোগসাজসে ভাইদের বঞ্চিত করে অন্যকে মা সাজিয়ে জমি রেজিস্ট্রি নেওয়ার এ অভিযোগ অন্য ভাইদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে।জাল দলিল সম্পাদনের ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী বাগমারা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। অথচ ২০ ফেব্রুয়ারী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাতা যে মানসিক ভারসাম্যহীন ও শারীরিকভাবে অসুস্থ সে সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মোটা উৎকোচের বিনিময়ে দাতা না থাকা অবস্থায় জমি রেজিস্ট্র করেন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার। আর এতে সম্পূর্ন সহযোগিতা করেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক। এ ঘটনায় বাগমারা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১১জনকে আসামী করে জেলা রাজশাহীর আমলী আদালত বাগমারায় মামলা করেছে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর অপর ছেলে বাগমারা উপজেলার গণিপুর গ্রামের আক্কাস আলী প্রামানিক।মামলা থেকে জানা গেছে, বাদী ও আসামী পরস্পর ভাই ও ওই জমির অংশিদার। উপজেলার গণিপুর গ্রামের মৃত সাধন প্রামানিকের ছেলে বাদী গণিপুর গ্রামের আক্কাস আলী প্রামানিক এবং আসামী মো. সাত্তার প্রামানিক ও মো. আইনুদ্দিন প্রামানিক। আসামীরা অন্যান্য অংশিদারের অজান্তে এবং অংশ থেকে বঞ্চিত করতে ভূয়া মা সাজিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারী বাগমারা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আরএস খতিয়ান ৬৪ এর প্রায় সোয়া শতক, ৬৫এর প্রায় সাড়ে ৪ শতক ও ৪৭১ নং খতিয়ানে প্রায় এক শতক জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়।আর এতে সহযোগিতা করেন মো. সাত্তার প্রামানিকের ছেলে মো. ইয়ামিন, সাব্দুল আলীর ছেলে বেলাল হোসেন, হুজুর আলীর স্ত্রী সাহিদা বিবি, মৃত বাহার শাহর ছেলে মো. নাজিম উদ্দিন, মাঝি গ্রামের রাসেদুল, ইসমাইলপুর গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মো. জামাল উদ্দিন, মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদপূর্বপাড়ার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী বেদানা বিবি, বাগমারা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ওহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শামীম মিরকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগি বলেন বাগমারা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্র অফিসে টাকার বিনিময়ে অনেককিছু করা যায়। বর্তমান দলিল লেখক সভাপতি ও সম্পাদক সাব-রেজিস্ট্রারসহ ক্রেতা বিক্রেতাকে জিম্মি করে রেখেছে। রেজিস্ট্রি দলিলে কিছু ত্রুটি না থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখে ক্রেতা-বিক্রেতাকে। এরপর চলে দেন দরবার। প্রত্যেকটি দলিলে তখন ক্রেতা-বিক্রেতাকে গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। কারো বিশ্বাস না হলে দেখে যেতে পারেন বলে তিনি জানান।
মামলার বাদি গণিপুর গ্রামের আক্কাস আলী প্রামানিক বলেন ‘আমার মা আজিমন বিবি মানসিক ভারসাম্যহীন ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। আর মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ কখনো দলিল সম্পাদক করতে পারেন না। বিধায় আসামীরা নিজেরাই সই স্বাক্ষর করে দলিল সম্পাদন করেছেন। আর এ কাজে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন বাগমারা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ সংশ্লিষ্টরা। তিনি আরো জাল দলিল সম্পাদনকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি’।
অভিযুক্ত এ ব্যাপারে বাগমারা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ওহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে করা হয়েছে। মা তার ছেলেদের জমি দিয়েছেন। আর ভবানীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ডিজিটারাইজ করা হচ্ছে। এখানে কোন ধরণের ব্যত্যয়ের সুযোগ নাই। আর যদি কোন কারণে কিছু হয়ে থাকে তবে আমার ওপর কেন? তার ভালমন্দ জানেন সাব-রেজিস্ট্রার। আসামী হলে তিনি হলেন, আমরা কেন? আর গণিপুর ইউনিয়নে আমিও চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রত্যাশি। যে কারণে প্রতিপক্ষ কেহ বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি করেছে।