November 26, 2024, 12:04 am

News Headline :
অবৈধ দখলদার বুলবুল-হিটলার গংদের আড়াই মাসে কয়েক লক্ষ টাকা ঘাপলা সীমাহীন দূর্নীতির পরও বহাল তবিয়তে মোহনপুরের ইউএনও আয়শা সিদ্দিকা রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি যুবদল নেতা রবি’র পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে কোথাও স্থাপনা করতে না পেরে শেষমেস ভাঙারির দোকানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ: নাছিম রাজশাহীতে আলু ও তেলের দাম বাড়তি রাজশাহীতে ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বললো মহানগর ছাত্রদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে খালেদা জিয়ার মতবিনিময় দেশের সকল ক্ষমতার মালিক হবেন জনগণ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
তানোরে ইউএনও চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে মামলা

তানোরে ইউএনও চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর তানোরে পরিবেশ আইন অমান্য করে সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত পুকুর ভরাটের দায়ে এবার বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই খাসপুকুরটির লীজ গ্রহীতা এ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বাদী গত ৫ এপ্রিল বুধবার রাজশাহীর বিজ্ঞ স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। যার পরিবেশ সিআর মামলা নম্বর- ০২/২০২৩। এহেন মামলার প্রেক্ষিতে ওইদিন বিকেলে আদেশ জারি করেন আদালতের বিচারক।

এতে আসামী দেখানো হয়, তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ, সরনজাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হক (৫০) ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোস্তাক আহম্মেদ। পরে আদালতের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শককে নির্দেশ দেন। বাদী জালাল উদ্দিন রাজশাহী জজকোর্টের আইনজীবি। তাঁর বাড়ি তানোর উপজেলার সরনজাই ব্রাম্ননজাই গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুর রউফের পুত্র।

মামালার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলার সরনজাই ইউনিয়নে সরনজাই নামক মৌজা রয়েছে। ওই মৌজায় সরকারপাড়া নামক স্থানে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তিতে পুকুর রয়েছে। যার শ্রেণী পুকুর। দাগ নম্বর ৮৪। পরিমান দশমিক ২২০০ একর। পুকুরটি বর্তমানে ভরাট করা হয়েছে। ওই স্থানে ও পার্শ্বের আরেক দাগে প্রতি সপ্তায় হাটও বসে। ওই পুকুরটি সরনজাই ব্রাম্ননজাই গ্রামের বাসিন্দা এ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন উপজেলা ভূমি অফিস থেকে গত ২০২২ সালের ১২ জুন উপজেলা জলমহাল খাস আদায় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিটি কর্তৃক ১ বছরের জন্য ইজারা পান। যার মেয়াদকাল চলতি বছরের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত রয়েছে।

কিন্তু এরই মধ্যে লীজ গ্রহীতাকে অবগত না করে সনরজাই ইউপির প্রভাবশালী চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হক ও পরিষদ সচিব মোস্তাক আহম্মেদ ওই পুকুরটি ২৫ জানুয়ারী থেকে ৩০ জানুয়ারীর মধ্যে মানিককন্যা গ্রামের বাসিন্দা বেলাল উদ্দিনের পুকুর খননের মাটি দিয়ে সরকারি খাসপুকুরটি ভরাট করে দেন।

এব্যাপারে এ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন বলেন, তিনি অত্র সরকারি খাসপুকুরটি লীজ নিয়ে তাঁর নিজস্ব ধানী জমি ও নিকট আত্নীয়দের বীজতলায় খরা মৌসুমে সেচ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও স্থানীয়দের গরু ও মহিষের গোসল করানো হয়। অনেকে গাছপালায় পানি সেচও দিয়ে থাকেন। অপরদিকে, তিনি বিভিন্ন প্রজাতির রুই, কাতল ও মৃগেলসহ কার্পজাতীয় মাছ ছেড়ে চাষাবাদ করতে থাকেন।এমতাবস্থায় গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ইউপি চেয়ারম্যান হঠাৎ এ্যাডভোকেটকে ইউএনও’র বরাট দিয়ে পুকুরের সমস্ত মাছ ধরে নেওয়ার জন্য চাপ দেন। কারণ সহকারী কমিশনার ভূমির দায়িত্বরত ইউএনও স্যার পুকুর ভরাটের জন্য আমাকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। কিন্তু চেয়ারম্যানকে এব্যাপারে সে রকম কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি বলে ইউএনও জানান। এঘটনার পর ২০ ডিসেম্বর তিনি জানতে পারেন চেয়ারম্যান ও সচিব প্রভাব খাটিয়ে বেশ কয়েক দফায় পুকুর হতে লক্ষাধিক টাকার মাছ ধরে পুকুর ভরাট করে ফেলেন।

এ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন আরও বলেন, সরকারি খাসপুকুরটি ভরাট করায় তার প্রায় ১ লক্ষ টাকা ও পরিবেশের অপূনীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রথমে পরিবেশ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক, ডিসি ও দুদকের উপ-পরিচালক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে প্রতিকার ও সুরহা না হলে ঘটনার ৬০ দিন পরে গেলো ৫ এপ্রিল তিনি পরিবেশ আইনে ও ক্ষতিপূরন চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন।

তিনি আরও বলেন, ওই পুকুরের পাশে ৮৫ নম্বর দাগে দশমিক ৬৬০০ একর সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি রয়েছে। যার রকম ভিটা। সেখানে প্রতি সোমবার হাট বসে। হাটের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করে অবৈধ ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে পুকুর ভরাট করেছেন। এসংক্রান্ত ব্যাপারে এ্যাডভোকেট জালাল মামলা করায় চেয়ারম্যান তাঁকে দেখে নেবার হুমকি দিচ্ছেন। তাছাড়া পুকুর ভরাটের সময় পার্শ্বে থাকা বেশ কয়েকটি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করে বিক্রি করেন চেয়ারম্যান। কোন অবস্থায় সরকারি পুকুর ভরাট ও গাছ কর্তন আইন সঙ্গত নয়। তবে, এই সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানা বলে দাবি করা হচ্ছে। দাপুটে এই চেয়ারম্যানের বাড়ি উপজেলার সরনজাই কাজীপাড়া গ্রামে। তিনি থানা বিএনপি সাবেক সভাপতি।এবিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা রেজাউল ও রবিউল ইসলাম বলেন, মোজাম্মেল চেয়ারম্যান সরকারি খাসপুকুর ভরাট করেছেন। এখন সেখানে মার্কেট নির্মাণ করা হবে। মার্কেটের প্রতিটি দোকানঘর বরাদ্দ বাবদ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ভূমি অফিসে জমা দিতে হবে। এজন্য তারা চেয়ারম্যানকে ৪৫ হাজার টাকা করে ৯০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তাদের মতো প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ জন ব্যক্তি এভাবে পরিষদ চেয়ারম্যান ও সচিবকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এখন ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন ভিন্ন কথা। তবে, দোকানঘর না পেলে সব সত্য বলবো বলে জানান রেজাউল, রবিউল ও ব্যবসায়ী রফিজ উদ্দিন।

এবিষয়ে উপজেলার সরনজাই ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোস্তাক আহম্মেদের মোবাইলে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি চেয়ারম্যান সাহেব ভাল বলতে পারবেন। তবে, সরকারি পুকুর ভরাট করে সেখানে দোকান বসানো জন্য ব্যবস্থা চলছে। এজন্য আগ্রহী প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে ৪০/৪৫ হাজার করে টাকা নেয়া হচ্ছে। পরে তাদের দোকানের পজিশন বুঝিয়ে দেয়া হবে। ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি পুকুর ভরাট করে সেখানে দোকানঘর বরাদ্দ বাবদ কোন ব্যক্তির কাছ থেকে এতো টাকা আদায় করতে পারেন কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। তার এমন বক্তব্য এপ্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষণ রয়েছে।

তানোর উপজেলার সরনজাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হক বলেন, ভূমি অফিসের কর্তাব্যক্তিকে ম্যানেজ করে সবকিছু করা হয়। সরকারি খাসপুকুর ভরাট করে সেখানে দোকানঘর নির্মাণের নামে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করা আইন সঙ্গত কি না প্রশ্ন করা তিনি ব্যস্ত আছি বলে এড়িয়ে গেছেন।

এব্যাপারে তানোর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইউএনও পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সরকারি খাসপুকুর ভরাট করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে, বিশেষ সুবিধার্থে হতে পারে আর মামলা ব্যাপারে শুনেছেন বলে জানান ইউএনও।

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.